Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Eden Gardens

শৌচাগার ভাসছে, জলের জন্য লম্বা লাইন, ইডেনে আইপিএল দেখতে গিয়ে একাধিক অভিযোগ দর্শকদের

ইডেনে কলকাতা নাইট রাইডার্সের ম্যাচ দেখতে গিয়ে একাধিক দর্শক বিপদে পড়েছেন। কারও সমস্যা শৌচাগার নিয়ে, কারও জল নিয়ে। সমস্যা খতিয়ে দেখার আশ্বাস সিএবি প্রধান স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের।

Eden Gardens

খেলা দেখতে গিয়ে নানা সমস্যার অভিযোগ। —ফাইল চিত্র

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২৩ ১৮:০৭
Share: Save:

প্রথম বার ইডেনে খেলা দেখতে যাবেন সোহিনী চন্দ। দু’দিন আগে থেকেই মনের মধ্যে উত্তেজনা। একে আইপিএল, তার উপর মাঠে বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে খেলবে কলকাতা নাইট রাইডার্স। শাহরুখ খানও আসতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। উত্তেজনার পারদ সময়ের সঙ্গে বাড়ছে। ম্যাচের দিন অফিস থেকে বেরিয়ে টিকিট হাতে পৌঁছে যান ইডেনে। অনেকটা হেঁটে পৌঁছন ৪এ নম্বর গেটে। যেতে হবে সি১ ব্লকে। অতটা হেঁটে যেতে হবে বলে জল কিনে নিয়েছিলেন। যদিও জানতেন যে সেটা ফেলেই দেওয়া হবে। প্রথম গেট দিয়ে ঢোকার সময়ই জলের বোতল আটকে দেন পুলিশকর্মীরা। অল্প একটু জল তখনও ছিল তাতে।

মাঠের ভিতর আসন খুঁজে নিয়ে বসেন। কিন্তু অত ক্ষণ খেলা দেখতে গেলে তেষ্টা তো পাবেই। কিনতে গিয়ে বিপদে পড়েন। সঙ্গীর কাছে ব্যাগ রেখে ২০ টাকা নিয়ে যান। কিন্তু জল কিনতে পারেননি। কারণ, একটি পাউচের দাম ১০ টাকা হলেও অলিখিত নিয়ম, অন্তত পাঁচটি পাউচ নিতেই হবে। তাই আবার ফিরে এসে বাকি টাকা নিয়ে গিয়ে পাঁচটি পাউচ কেনেন। পাউচে জল খাওয়ার অভ্যেস না থাকায় একটু অসুবিধাও হয়। তার থেকেও বেশি অসুবিধা হয়, পিছন থেকে জল ভর্তি পাউচ উড়ে আসায়। কেউ বা কারা জল না খেয়ে সেই পাউচ সামনের দিকে ছুড়ে দিচ্ছিলেন। কোনওটা পড়ে চেয়ারে, কোনওটা মাটিতে, কোনওটা আবার কারও গায়ে। জল ছিটকে গায়ে লাগে। এটি দেখার দায়িত্ব অবশ্য সিএবি কর্তৃপক্ষের নয়, পুলিশের।

২০০১ সাল থেকে ইডেনে খেলা দেখতে যাচ্ছেন সৌরিন সেনগুপ্ত। এ বারে গিয়েছিলেন কেকেআর বনাম গুজরাত টাইটান্সের ম্যাচ দেখতে। দুপুর রোদে ম্যাচ, তাই ইডেনে পৌঁছেই আগে জল কিনতে যান। ‘জে’ ব্লকে সৌরিন বসেছিলেন তাঁর বন্ধু সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। কিন্তু সেখানে শুরু থেকেই ভিড়। প্রায় মারপিট করে জল কিনতে হয়। এর মাঝেই হঠাৎ বৃষ্টি। সৌরিন বললেন, “বৃষ্টি পড়ে এক দিক থেকে ভাল হল, সিটগুলো পরিষ্কার হয়ে গেল। সিটগুলো এতটাই নোংরা ছিল যে, চার, ছয় লেখা কার্ডগুলো পেতে বসেছিলাম।” সোমনাথ বলেন, “কার্ডগুলো পেতে বসলে প্যান্ট বাঁচে, কিন্তু পিঠে দাগ লাগছিল। বৃষ্টিতে সেগুলো ধুয়ে গেল।” বাংলার ক্রিকেট সংস্থার প্রধান স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় যদিও আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “প্রতি ম্যাচের আগে সিট পরিষ্কার করা হয়। কী করে সিটে নোংরা থাকবে?”

সৌরিন এবং সোমনাথ জানালেন ইডেনের শৌচাগারে যাওয়ার অভিজ্ঞতাও। তাঁদের অভিযোগ, “বাথরুম জলে ভাসছে। জুতো এতটাই ভিজে যায় যে, শেষ পর্যন্ত হাতে করে নিয়ে আসতে হয়।’’ অভিযোগের এখানেই শেষ নয়। বললেন, ‘‘বাথরুমের পাশেই রয়েছে খাবার জায়গা। সেগুলো ঢেকে রাখারও কোনও ব্যাপার নেই। বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।”

শৌচাগার নিয়ে অভিযোগ রয়েছে ক্লাব হাউজের লোয়ার টিয়ারে বসা সৃজা রায়েরও। কর্পোরেট বক্স বাদ দিলে এই লোয়ার টিয়ারের টিকিটের দাম সবথেকে বেশি। সৃজা বলেন, “ওখানেও বাথরুম জলে ভাসছিল। গিয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। ভাগ্যিস তিন-চার ঘণ্টার ব্যাপার। না হলে হয়তো শরীর খারাপ হয়ে যেত।” জল কিনতেও এক বারের বেশি যাননি সৃজা। তিনি বলেন, “অত নীচে গিয়ে বার বার জল আনা সম্ভব নয়। এক বারই গিয়েছিলাম জল আনতে। তাতেও বিশাল লাইন।” স্নেহাশিস বললেন, “খেলা দেখতে প্রতি ম্যাচে প্রায় ৬৫ হাজার মানুষ আসেন। আমরা চেষ্টা করি সকলকে সুপরিবেশ দেওয়ার। এমন অভিযোগ এলে অবশ্যই আমাদের ব্যবস্থাগুলো খতিয়ে দেখতে হবে। কোন কোন ব্লকে এমন হয়েছে জানতে হবে। সেখানে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর পানীয় জলের ব্যবস্থা থাকে নাইট রাইডার্সের হাতে।”

Eden Gardens

খেলা দেখতে প্রতি ম্যাচে প্রায় ৬৫ হাজার মানুষ আসেন। —ফাইল চিত্র

সৌরিনের অভিযোগ তাঁদের ম্যাচ শেষ হওয়ার পর আর থাকতেই দেওয়া হয়নি। পুরস্কার বিতরণী পর্ব দেখার জন্য অপেক্ষা করছিলেন তাঁরা। কিন্তু পুলিশ এক প্রকার জোর করে মাঠ ছাড়তে বলে। গুজরাত বনাম কলকাতা ম্যাচ ছিল দুপুরে। বৃষ্টির জন্য খেলা দেরিতে শুরু হয়েছিল। শেষ হয়েছিল রাত ৮টা নাগাদ। সৌরিন বললেন, “বুঝতাম রাত ১২টা বাজে, বাড়ি ফেরার তাড়া রয়েছে, সেটা এক রকম। কিন্তু তখন সবে ৮টা বাজে। মাঠের বড় স্ক্রিনে পুরস্কার দেওয়া দেখাচ্ছিল। কিন্তু আমাদের সেটা দেখতেই দেওয়া হল না। টিকিট কাটা মানে তো শুধু ম্যাচ দেখার জন্য আসিনি, পুরোটাই দেখতে এসেছি। বার করে দেওয়ার কোনও কারণ জানি না।” পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “এমন কিছু হয়েছে বলে অভিযোগ পাইনি। ম্যাচের সব কিছু শেষ হওয়ার পরেই সব দর্শককে বার হতে বলা হয়। খোঁজ নিয়ে দেখব।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy