কলকাতাকে প্রথম বার নেতৃত্ব দিলেন নীতীশ রানা। —ফাইল চিত্র
কলকাতা নাইট রাইডার্সের আইপিএল এ বারের মতো শেষ। লিগ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হল নীতীশ রানাদের। কলকাতাকে প্রথম বার নেতৃত্ব দিলেন তিনি। কিন্তু গোটা আইপিএলে তাঁর নেওয়া বেশ কিছু সিদ্ধান্ত দলের বিপক্ষে গিয়েছে। কখনও তিনি পিচ বুঝতে পারেননি, কখনও প্রথম একাদশ। দলের কোন ক্রিকেটার, কোনটা ভাল পারেন সেটাও নীতীশ জানেন কি না সেই প্রশ্নও উঠতে পারে। কলকাতা ছিটকে যাওয়ার পর নীতীশের ১০ ভুল খুঁজে নিল আনন্দবাজার অনলাইন।
অনুকূলকে তিন নম্বরে
প্রথম ম্যাচেই নীতীশের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। মোহালিতে পঞ্জাবের বিরুদ্ধে কেকেআরের হয়ে তিন নম্বরে ব্যাট করেছিলেন অনুকূল রায়। তার আগে অনুকূল সব থেকে উপরে ব্যাট করেছিলেন পাঁচ নম্বরে। ১৯২ রান তাড়া করতে নেমে এমন অদ্ভুত সিদ্ধান্তের কারণ কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব ছিল না। অনুকূল অলরাউন্ডার হলেও তিনি মূলত স্পিনার। কিন্তু এমন এক জনকে ব্যাট করার জন্য উপরের দিকে পাঠিয়ে দেওয়া হল প্রথম ম্যাচেই। কেকেআরের হয়ে সেই ম্যাচে মাত্র পাঁচ বল ক্রিজে ছিলেন অনুকূল।
তিন নম্বরে শার্দূল
গুজরাতের বিরুদ্ধে ইডেনে শার্দূল ঠাকুরকে তিন নম্বরে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিলেন নীতীশ। এর আগে এত উপরে কখনও ব্যাট করতে নামেননি শার্দূল। মহম্মদ শামি তাঁর পরিচিত ইডেনে তখন পেসের দাপট দেখাচ্ছেন। ডানহাতি ব্যাটাররা বুঝতেই পারছিলেন না শামির বল। এমন অবস্থায় বেঙ্কটেশ আয়ার বা নিজে না নেমে ডানহাতি শার্দূলকে পাঠানোর যুক্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি। চেন্নাইয়ের হয়ে এক বার চার নম্বরে নেমেছিলেন শার্দূল। সে বার শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন তিনি। গুজরাতের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচেও শূন্যই করেন শার্দূল।
প্রথম ওভারে নীতীশের বোলিং
রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে ইডেনে মাত্র ১৪৯ রান করেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। সেই ম্যাচে পিচের সাহায্য পাচ্ছিলেন স্পিনাররা। কেকেআর দলে চার জন স্পিনার নিয়ে খেলতে নেমেছিল। কিন্তু তাঁদের বাদ দিয়ে নীতীশ নিজেই প্রথম ওভারে বল করতে আসেন। যা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন অনেকেই। সেই ওভারে ২৬ রান দিয়েছিলেন নীতীশ। ম্যাচ জেতার আশা ওখানেই শেষ হয়ে যায় কেকেআরের। নীতীশ নিয়মিত বল করেন না। কিন্তু ওই ম্যাচে হঠাৎ প্রথম ওভারে বল করার সিদ্ধান্ত কেন নিয়েছিলেন তা বোঝা মুশকিল।
পিচ বুঝতে না পারা
প্রথম ম্যাচ থেকেই পিচ বুঝতে পারা নিয়ে সমস্যা ছিল নীতীশের। বেশির ভাগ সময় টস জিততে পারেননি। তাতে সিদ্ধান্ত নিতে হয়নি। কিন্তু অন্যের সিদ্ধান্ত শুনে যখন বলেছেন, তিনি জিতলে ব্যাট করতেন, তখন পিচ ছিল বোলারদের জন্য। কখনও আবার উল্টোটা। যে পিচে খেলতে নামার আগে তাঁর মনে হয়েছে ১৬০ রান যথেষ্ট, সেই পিচেই উঠেছে ২০০ রানের কাছাকাছি। পিচ বুঝতে না পারলে অধিনায়কের আরও অনেক ধরনের সমস্যা হওয়া স্বাভাবিক, তা হয়েছে বার বার।
প্রথম একাদশ বাছাই
সুনীল নারাইন, আন্দ্রে রাসেলের মতো ক্রিকেটাররা ধারাবাহিক ভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু প্রতিটি ম্যাচ খেলানো হয়েছে তাঁদের। অথচ লকি ফার্গুসন বা টিম সাউদি বসে থেকেছেন দিনের পর দিন। নীতীশ চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে হেরে বলেছিলেন যে, ইডেনের পিচ তাঁদের সাহায্য করছে না। পেস সহায়ক পিচ ছিল ইডেনে, সেখানে সাউদিদের না খেলিয়ে কেকেআর খেলিয়ে গিয়েছে স্পিনারদের। প্রথম একাদশ বাছার ক্ষেত্রে একের পর এক ম্যাচে ভুল করে গিয়েছেন নীতীশ।
ওপেনিং জুটি নির্বাচন
এ বারের আইপিএলে ১৪টি ম্যাচ খেলেছে কেকেআর। এর মধ্যে বেশির ভাগ ম্যাচেই ওপেনিং জুটিতে বদল করেছে তারা। মনদীপ সিংহ, রহমানুল্লা গুরবাজ, লিটন দাস, নারায়ণ জগদীশন, জেসন রয়, সুনীল নারাইন এবং বেঙ্কটেশ আয়ার ওপেন করেন এ বারের আইপিএলে। শেষ ম্যাচেও বদল হয় কেকেআরের ওপেনিং জুটি। বার বার এই বদলের দায় নীতীশের কাঁধেই পড়বে।
ইডেনের সুবিধা নিতে না পারা
ইডেনের পিচ এখন পেস সহায়ক। নীতীশ যে সেটা বুঝতে পারেননি এমন নয়। কিন্তু তিনি স্পিন নির্ভর দল নিয়েই মাঠে নামলেন। পরে বললেন, “ঘরের মাঠের সুবিধা সব দল পায়। শুধু কেকেআর ছাড়া।” কেকেআর দলে যে অভিজ্ঞ পেসার নেই এমন নয়। সাউদি, ফার্গুসন যেমন ছিলেন, তেমনই অলরাউন্ডার শার্দূল, রাসেলও ছিলেন। কিন্তু কেকেআর বার বার স্পিনারদের উপর ভরসা করেই বোলিং আক্রমণ সাজাল ইডেনে। হারতেও হল বার বার।
আস্থাহীন অধিনায়ক নীতীশ
দলের ক্রিকেটাররা কি আদৌ নীতীশের উপর ভরসা করতে পেরেছিলেন? এই প্রশ্ন উঠতেই পারে। নেতা নীতীশের কোনও প্রভাব দলের মধ্যে দেখা যায়নি। ফিল্ডিং সাজানোর সময় নীতীশের পাশে বেশির ভাগ সময় দেখা গিয়েছে রাসেলকে। কখনও এগিয়ে এসেছেন উমেশরাও। নীতীশ রান করেছেন ব্যাট হাতে, কিন্তু ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলতে পারেননি বেশি। ফিল্ডিংয়ের সময়ও কাঁধ ঝুঁকে থাকত অধিনায়কের।
সতীর্থদের সম্পর্কে অস্পষ্ট ধারণা
কখনও ভুল ব্যাটারকে আগে পাঠানো, কখনও দলে অলরাউন্ডার থাকলেও ছন্দহীন বোলারদের বল করানো। নীতীশ এমন অনেক কিছুই করেছেন গোটা আইপিএলে। প্রতিযোগিতা শুরুর আগে তিনি বলেছিলেন, “১০ ম্যাচ যেতে দিন, বুঝে যাবেন আমি কেমন অধিনায়ক।” ১৪ ম্যাচ চলে গেলেও নীতীশ বুঝতে পারেননি শার্দূলকে দিয়ে নিয়মিত বল করানো যায়। ব্যাটার হিসাবে বার বার ব্যর্থ হওয়া মনদীপকে খেলানো যায় না। নিজে এক ওভার বল করলে, পরে আরও কয়েক ওভার করা যায়।
শেষ ম্যাচের অঙ্ক
নীতীশ কেন শেষ ম্যাচে টস জিতে বল করার সিদ্ধান্ত নিলেন তা অজানা। যে ম্যাচ রানের ব্যবধানে জিততে পারলে সুবিধা হত, সেই ম্যাচে আগে ব্যাট করাই ছিল সাধারণ বুদ্ধি। কিন্তু নীতীশ টস জিতলেন এবং বল করার সিদ্ধান্ত নিলেন। সেই সঙ্গে বললেন, “বড় ব্যবধানে জিততে হবে, তাই আগে বল করব।” এমন ভুল সিদ্ধান্ত নিলেন যে, কলকাতা জিতলেও প্লে-অফে ওঠার রাস্তা খুলতে পারত না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy