ললিত উপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
কেরিয়ার শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছিল। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৭ বছর। কিন্তু এক স্টিং অপারেশনে জড়িয়ে যায় ললিত উপাধ্যায়ের নাম। সেই অধ্যায় পার করে তিনি এখন অলিম্পিক্সে ব্রোঞ্জজয়ী হকি খেলোয়াড়। এই বছর প্যারিস অলিম্পিক্সেও তাঁর কাঁধে থাকবে দলকে জেতানোর দায়িত্ব।
কঠিন রাস্তা পার করে তবে সাফল্য পেয়েছেন উত্তরপ্রদেশের ললিত। আর সেই কঠিন সময়কেই আশীর্বাদ মনে হয় তাঁর। সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ললিত বলেন, “কোনও অপরিণত ছেলের সঙ্গে এমন হলে তার স্বপ্ন ভেঙে যেত। আমরা শুনেছি ভারত আট বার অলিম্পিক্স পদক জিতেছিল। কিন্তু কখনও দেখিনি। আমার স্বপ্ন ছিল অলিম্পিক্স খেলা এবং পদক জেতা।”
কী হয়েছিল ললিতের সঙ্গে? ২০০৮ সালে তাঁর বয়স তখন ১৫ বছর। স্বপ্ন দেখছেন ভারতের হয়ে খেলার। সেই সময় ভারতীয় হকি ফেডারেশনের সচিব ছিলেন কে জ্যোতিকুমারণ। এক জন সাংবাদিক তাঁর কাছে গিয়েছিলেন এজেন্ট সেজে। ভারতীয় দলে এক হকি খেলোয়াড়কে ঢোকানোর জন্য টাকা দিতে চেয়েছিলেন। গোটাটাই ছিল স্টিং অপারেশন। নাম নেওয়া হয়েছিল ললিত উপাধ্যায়ের। তিনি জানতেনও না যে, তাঁর নাম নিয়ে স্টিং অপারেশন হচ্ছে। গোটা ঘটনায় অবাক হয়ে যান ললিত। তাঁর কেরিয়ার শেষ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছিল। নির্বাচকেরা ললিতকে দলে নেওয়ার ব্যাপারে রাজি ছিলেন না। অনেকে মনে করছিলেন টাকা দিয়ে ভারতীয় দলের দরজা খুলতে চাইছেন ললিত। তাই তাঁকে সন্দেহের চোখে দেখা হত।
কিন্তু ললিত হকি ছেড়ে যেতে চাননি। বারাণসীর সাই-এ অনুশীলন চালিয়ে যান তিনি। ললিতকে সাহায্য করেছিলেন ধনরাজ পিল্লাই। ভারতের প্রাক্তন হকি অধিনায়ক ললিতের খেলা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি ললিতকে এয়ার ইন্ডিয়ার হয়ে খেলার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ২০১২ সালে ‘রুকি অফ দ্য ইয়ার’ হয়েছিলেন। দেশের অন্যতম প্রতিভাবান হকি খেলোয়াড় হিসাবে দেখা হচ্ছিল তাঁকে। আর ফিরে তাকাতে হয়নি ললিতকে। ভারতের জার্সিতে একের পর এক সাফল্য পেয়েছেন ললিত।
সেই কঠিন সময় পার করে এসে ললিত বলেন, “আমার কাছে ওই ধাক্কাটা আশীর্বাদের মতো ছিল। কেরিয়ারের শুরুতে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনা আমাকে মানসিক ভাবে শক্তিশালী করে দিয়েছিল। ওই ঘটনা মনে করলেই আমি মানসিক ভাবে শক্তিশালী হয়ে যাই। এখন পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। সমাজমাধ্যম এসে গিয়েছে। কারও সঙ্গে এখন ওই ধরনের ঘটনা হবে না বলেই মনে হয়। আমি ভাগ্যবান। ওই ঘটনা পার করে দ্বিতীয় বার অলিম্পিক্স খেলতে যাচ্ছি। দেশের জার্সিটা পরলেই আমি ভাল কিছু করার তাগিদ অনুভব করি।”
টোকিয়ো অলিম্পিক্সে ভারত ব্রোঞ্জ জিতেছিল। সেই দলের সদস্য ছিলেন ললিত। এ ছাড়াও কমনওয়েলথ গেমসে রুপো এবং এশিয়ান গেমসে সোনা জিতেছিলেন তিনি। প্যারিস অলিম্পিক্স শুরু হচ্ছে ২৬ জুন থেকে। ৩০ বছরের ললিত গত বারের পদকজয়ী দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। এ বারেও দলে রয়েছেন তিনি। ললিত বলেন, “টোকিয়োয় পদক জিতেছি আমরা। তাই এ বারেও আশা থাকবে। আমরা আত্মবিশ্বাসী। এ বারে পদকের রং বদলাতে চাই।”
দেশের হয়ে ১৬৮ ম্যাচে ৪৫টি গোল করেছেন ললিত। অভিজ্ঞ হকি খেলোয়াড় এখন তরুণদের আদর্শ। ললিত বলেন, “গত চার বছর ধরে আমরা ফিটনেস নিয়ে খেটেছি। মাঠে সেটা বোঝা যাচ্ছে। বিশ্বের যে কোনও দলের সঙ্গে আমাদের ফিটনেসের তুলনা হতে পারে। সিনিয়র এবং জুনিয়র খেলোয়াড়দের ফিটনেস অনেকটাই উন্নতি করেছে।”
ভারতের প্রথম ম্যাচ নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে। ২৭ জুলাই হবে সেই ম্যাচ। এ ছাড়াও ভারতের গ্রুপে রয়েছে আর্জেন্টিনা, আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম এবং অস্ট্রেলিয়া। ললিত বলেন, “কোন কোন দলের বিরুদ্ধে খেলতে হবে তা নিয়ে ভাবছি না। সব দলই পদক জয়ের প্রস্তুতি নিয়ে আসবে। আমরা একটা করে ম্যাচ ধরে এগোব। প্রতিটা ম্যাচেই নিজেদের সেরাটা দেব।”
পদক জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী ললিত। তিনি বলেন, “প্রতি মুহূর্তে বদলে যাচ্ছে হকি। সব দল উন্নতি করছে। আমরাও সেটা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছি। অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি এবং বেলজিয়ামের মতো দেশের বিরুদ্ধে খেলার জন্য আমরা তৈরি। প্রো হকি লিগে প্রচুর ফিল্ড গোল হয়েছে। আমরাও তাই ডি বক্সে সুযোগ তৈরি করার চেষ্টা করছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy