ফেড কাপ তুলে দেওয়ার পর এ বার আই লিগে বিদেশি ফুটবলার কমানোর পক্ষে সওয়াল করলেন জাতীয় কোচ স্টিভন কনস্ট্যানটাইন। শুধু আই লিগ নয়, আইএসএলেও বিদেশির সংখ্যা কমিয়ে দেশি ফুটবলারদের বেশি করে সুযোগ দেওয়ার দাবি তুলছেন ভারতীয় দলের ডাচ কোচ। যদিও আইএসএলের পরিকাঠামো বদলের ক্ষমতা ফেডারেশনের হাতে নেই।
সোমবার এক ফুটবল ওয়েবসাইটে সাক্ষাৎকারে কনস্ট্যানটাইন বলেন, ‘‘জাতীয় দলের আন্তর্জাতিক সাফল্য চাইলে আই লিগে বিদেশি ফুটবলার খেলানো কমাতে হবে। দেশের তরুণ ফুটবলারদের আরও বেশি সুযোগ করে দিতে হবে। তার জন্য অনূর্ধ্ব-১৫, ১৭, ১৯-কেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে।’’ প্রাক বিশ্বকাপে উপর্যুপরি দুটো ম্যাচে হারের পর কনস্ট্যানটাইন মনে করছেন, ‘‘ক্লাবগুলো আই লিগে প্রধানত দু’জন বিদেশি স্ট্রাইকার এবং দু’জন বিদেশি সেন্টার ব্যাক নেওয়ার উপর জোর দেয়। কোনও কোনও একজন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারও বিদেশ থেকে আনে। একটা ফুটবল দলের মেরুদণ্ড গড়ে দেয় যে পজিশনগুলো। আর এই জায়গাতেই পিছিয়ে পড়ছে ভারত। জাতীয় দলে স্ট্রাইকার বা স্টপারের সাপ্লাই লাইন তাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’’
শুধু আই লিগ নয়, আইএসএলের ক্ষেত্রেও একই যুক্তি দেখিয়েছেন তিনি। ‘‘আইএসএলে পাঁচ জন ভারতীয় ফুটবলার খেলার সুযোগ পায়। ছ’জন বিদেশি খেলে সেখানে। আমি চাইব, আইএসএলেও সামনের সারিতে থাকুক ভারতীয় ফুটবলাররাই।’’ এবং অনেক ব্যাপারে কনস্ট্যানটাইনের সঙ্গে মতপার্থক্য থাকলেও আই লিগে বিদেশি ফুটবলার কমানোর ব্যাপারে জাতীয় কোচের পাশে কিন্তু দাঁড়াচ্ছেন এ দেশের সফল কোচেরা।
আইএসএল যেহেতু বাণিজ্যিক টুর্নামেন্ট তাই এটা নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নন আই লিগ জয়ী কোচ সঞ্জয় সেন। কিন্তু বাগান কোচ আই লিগে বিদেশি ফুটবলার কমানোর ব্যাপারে বলে দিলেন, ‘‘আমি জাতীয় দলের কোচের সঙ্গে একমত। এর আগে হাউটনও যখন জাতীয় দলের কোচ ছিলেন তখন একই কথা বলেছিলেন। কিন্তু ফেডারেশন বিদেশি কমানোর বদলে বরং বাড়িয়ে চার বিদেশি করে দিয়েছে। এ বার কনস্ট্যানটাইন বলার পর হয়তো দেখা যাবে বিদেশির সংখ্যা আরও বাড়িয়ে দেওয়া হল।!’’ সঞ্জয়ের মতোই এ ব্যাপারে প্রতিবাদী ইস্টবেঙ্গলের নবনিযুক্ত কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য। বললেন, ‘‘এটা তো ঘটনা, আমাদের সময়ের মতো ভারতীয় স্ট্রাইকার বা স্টপার সে ভাবে উঠে আসছে না। সুনীল ছেত্রী, রবিন সিংহের পর আমাদের দেশে স্ট্রাইকার কোথায়? ভাল স্টপারই বা কোথায় আসছে?’’
সঞ্জয় আর বিশ্বজিতের মতোই জাতীয় দলের কোচকে সমর্থন করেছেন আর এক আই লিগ জয়ী কোচ ডেরেক পেরেরা। তবে পাশাপাশি তিনি কতগুলো প্রশ্নও তুলছেন। ডেরেকের যুক্তি, ‘‘আই লিগে আমি যে মানের ফুটবল চাই সেটা বিদেশিরাই একমাত্র পূরণ করতে পারে। আমাদের দেশে সেই মাপের ফুটবলার কোথায়? সেই মাপের স্কিল কোথায়? তাই বিদেশিদের উপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছি।’’
ডেরেকের যুক্তি পরিসংখ্যান দিয়ে বিচার করলে ব্যাপারটা আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে। এ বারও আই লিগে সর্বোচ্চ গোলাদাতার তালিকায় বিদেশিদেরই দাপট। র্যান্টি মার্টিন্স, কর্নেল গ্লেন, সনি নর্ডি, ডুডু ওমাগবেমী, জোসিমার—প্রথম পাঁচের সবাই বিদেশি। আর বিদেশি স্ট্রাইকারদের আটকাতে রক্ষণে বড় চেহারার বিদেশি ফুটবলাররাই এখন ভরসা হয়ে উঠেছেন কোচেদের। এ বার আই লিগে সেরা ডিফেন্ডার হয়েছেন নাইজিরিয়ার বেলো রজ্জাক।
বিদেশি নিয়ে জুলাইয়ের শুরুতেই সভা ফেডারেশনের। দেখার সেখানে জাতীয় কোচের মত কতটা গুরুত্ব পায়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy