রবিবার প্রথম দুই সেশনে জয়ের মঞ্চ তৈরি করার চেষ্টা করলেন হার্দিক পাণ্ড্য, ইশান্ত শর্মারা। ছবি: এপি।
ট্রেন্ট ব্রিজে রবিবার ভারতীয়দের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই দেখতে দেখতে সাত মাস আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় টেস্ট সিরিজে জয়ে ফেরার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। সে বারও জয়ে ফিরিয়েছিলেন ভারতের বোলাররা, এ বারও তাঁরাই লড়াইয়ে ফেরালেন ভারতকে।
প্রথম দু’টো টেস্টে হারার পরে ওয়ান্ডারার্সে ভারত তৃতীয় টেস্ট জিতেছিল যে ভাবে, ট্রেন্ট ব্রিজে সে ভাবেই রবিবার প্রথম দুই সেশনে জয়ের মঞ্চ তৈরি করার চেষ্টা করলেন হার্দিক পাণ্ড্য, ইশান্ত শর্মা, যশপ্রীত বুমরা ও মহম্মদ শামিরা। প্রথম ইনিংসে ৩২৯ রান তোলার পরে ইংল্যান্ডকে ১৬১ রানে শেষ করে দিয়ে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দিনের শেষে দু’উইকেট হারিয়ে ১২৪ তুলে ২৯২ রানে এগিয়ে ভারত। সিরিজটা যে হেতু পাঁচ ম্যাচের, তাই এই ছন্দটা ধরে রাখতে পারলে ইংল্যান্ডের দিকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে ভারত।
প্রথম দুই টেস্ট হারার পরে স্বাভাবিক ভাবেই অনেকে ভাবতে পারেননি যে বিরাট কোহালিরা এখানে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। যদিও জোহানেসবার্গে জয়ে ফেরার ঘটনাটা সবারই মনে আছে। তাই সামান্য আশা ছিলই যে, এ দলটার কিন্তু ও ভাবে ফিরে আসার ক্ষমতা আছে। সেটাই হল। শনিবার প্রথম দিন রোদঝলমলে আবহাওয়ায় ব্যাটিং করতে যেমন ভারতের সুবিধা হয়েছিল, তেমনই রবিবার স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়াতেও আমাদের বোলারদের বেশ সুবিধাই হয়েছে। আবহাওয়ার পরিবর্তনটা ভারতের সময়োপযোগীই হয়েছে। আর আমাদের বোলাররাও এই পরিবেশকে কাজে লাগিয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেছেন।
ইংল্যান্ডে ক্রিকেটের এটাই বৈশিষ্ট। রোদ উঠলে ব্যাটসম্যানরা সুবিধা পান। আর বৃষ্টি হওয়ার পরে মেঘলা আবহাওয়ায় বোলাররা। শনিবার শুকনো আবহাওয়ায় বল প্রায় সুইং করছিলই না, রবিবার কিন্তু বৃষ্টি ও মেঘলা আকাশের জন্য ছবিটা পুরো উল্টে গেল। আর আমাদের বোলাররাও আবহাওয়ার এই পরিবর্তনকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে নেন। বিশেষ করে হার্দিক পাণ্ড্য। ওঁর বোলিং সবচেয়ে ধারালো। ইশান্ত, বুমরা, শামিরাও কিন্তু কেউ খারাপ বোলিং করেননি। প্রায়ই ১৪০ কিমি গতিতে বোলিং করে সারাক্ষণ ব্যাটসম্যানদের চাপে রেখে গিয়েছেন ওঁরা। হার্দিককে অন্যরা দারুণ ভাবে সাহায্য করে গিয়েছেন। একেবারে সঠিক লাইন ও লেংথ বজায় রেখে বোলিং করে গিয়েছেন চার পেসারই। হার্দিক সুইংটা ভাল করাতে পেরেছেন। এটাই ওঁর সাফল্যের রহস্য।
এই টেস্টে আমরা আরও একটা ভাল জিনিস আবিস্কার করলাম। ঋষভ পন্থের ভাল ব্যাটিং ও কিপিং। দু’টো অসাধারণ ক্যাচ নিয়েছেন ঋষভ। ব্যাটিংটাও খারাপ করেননি। মোটের উপর প্রথম টেস্টে আশার আলো দেখিয়ে দিলেন পন্থ। ভারতের স্লিপ ক্যাচিংও অনেক উন্নত হয়েছে এই টেস্টে। জো রুটের ক্যাচটা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে দেখছি। আমার কিন্তু মনে হচ্ছে ক্যাচটা ঠিকই ছিল। টিভি আম্পায়ার ভাল করে দেখে তবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
স্কোরকার্ড
ভারত ৩২৯ ও ১২৪-২
ইংল্যান্ড ১৬১
ভারত (আগের দিন ৩০৭-৬-এর পর থেকে প্রথম ইনিংস)
ঋষভ পন্থ বো ব্রড ২৪
আর অশ্বিন বো ব্রড ১৪
ইশান্ত শর্মা ন. আ. ১
শামি ক ব্রড বো অ্যান্ডারসন ৩
যশপ্রীত বুমরা বো অ্যান্ডারসন ০
অতিরিক্ত ১৯
মোট ৩২৯
পতন: ১-৬০ (ধওয়ন, ১৮.৪), ২-৬৫ (রাহুল, ২০.৬), ৩-৮২ (পূজারা, ২৬.৪), ৪-২৪১ (রাহানে, ৬৬.৬), ৫-২৭৯ (কোহালি, ৭৫.৬), ৬-৩০৭ (হার্দিক, ৮৬.৬), ৭-৩২৩ (পন্থ, ৯১.৪), ৮-৩২৬ (অশ্বিন, ৯৩.৪), ৯-৩২৯ (শামি, ৯৪.৪), ১০-৩২৯ (বুমরা, ৯৪. ৫)।
বোলিং: জেমস অ্যান্ডারসন ২৫.৫-৮-৬৪-৩, স্টুয়ার্ট ব্রড ২৫-৮-৭২-৩, বেন স্টোকস ১৫-১-৫৪-০ ক্রিস ওকস ২০-২-৭৫-৩, আদিল রশিদ ৯-০-৪৬-১।
ইংল্যান্ড (প্রথম ইনিংস)
অ্যালেস্টেয়ার কুক ক পন্থ বো ইশান্ত ২৯
কিটন জেনিংস ক পন্থ বো বুমরা ২০
জো রুট ক রাহুল বো হার্দিক ১৬
অলি পোপ ক পন্থ বো ইশান্ত ১০
জনি বেয়ারস্টো ক রাহুল বো হার্দিক ১৫
বেন স্টোকস ক রাহুল বো শামি ১০
জস বাটলার ক শার্দূল বো বুমরা ৩৯
ক্রিস ওকস ক পন্থ বো হার্দিক ৮
আদিল রশিদ ক পন্থ বো হার্দিক ৫
স্টুয়ার্ট ব্রড এলবিডব্লিউ বো হার্দিক ০
জেমস অ্যান্ডারসন ন. আ. ১
অতিরিক্ত ৮
মোট ১৬১
পতন: ১-৫৪ (কুক, ১১.৬), ২-৫৪ (জেনিংস, ১২.১), ৩-৭৫ (পোপ, ১৯.১), ৪-৮৬ (রুট, ২৪.১), ৫-১০৮ (স্টোকস, ২৯.২), ৬-১১০ (বেয়ারস্টো, ৩০.১), ৭-১১৮ (ওকস, ৩০.৬), ৮-১২৮ (রশিদ, ৩২.১), ৯-১২৮ (ব্রড, ৩২.৫), ১০-১৬১ (বাটলার, ৩৮.২)।
বোলিং: মহম্মদ শামি ১০-২-৫৬-১, যশপ্রীত বুমরা ১২.২-২-৩৭-২, আর অশ্বিন ১-০-৩-০ ইশান্ত শর্মা ৯-২-৩২-২, হার্দিক পাণ্ড্য ৬-১-২৮-৫।
ভারত (দ্বিতীয় ইনিংস)
ধওয়ন স্টা.বেয়ারস্টো বো রশিদ ৪৪
কে এল রাহুল বো স্টোকস ৩৬
চেতেশ্বর পূজারা ন. আ. ৩৩
বিরাট কোহালি ন. আ. ৮
অতিরিক্ত ৩
মোট ১২৪-২
পতন: ১-৬০ (রাহুল, ১১.২), ২-১১১ (ধওয়ন, ২৩.২)।
বোলিং: জেমস অ্যান্ডারসন ৭-২-২৪-০, স্টুয়ার্ট ব্রড ৪-০-২৫-০, ক্রিস ওকস ৮-১-১৯-০, বেন স্টোকস ৭-১-৩০-১, আদিল রশিদ ৫-০-২৩-১।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy