পরিকল্পনা: এ ভাবেই নিজেদের তাজা করার ভাবনা ভারতের। ছবি: টুইটার।
শ্রীলঙ্কায় ঐতিহাসিক হোয়াইটওয়াশের লক্ষ্যের সামনে দাঁড়িয়ে শুধুই ক্রিকেটে ডুবে থাকার নীতি নিচ্ছে না ভারতীয় দল। বরং ক্রিকেট থেকে কী ভাবে ‘সুইচ অফ’ করে খিদে বাড়িয়ে রাখা যায়, কী ভাবে নিজেদের ফুরফুরে আর তরতাজা রাখা যায় টেস্টের জন্য, সেটাও ভাবা হচ্ছে। আর সেই কারণে বৃহস্পতিবার ক্রিকেট থেকে ছুটি নিয়ে তাঁরা বেরিয়ে পড়ছেন সারাদিনের ‘ডে আউট’-এ।
শোনা গেল, প্রত্যেক সফরেই এ রকম ‘ডে আউট’ করা হবে। রবি শাস্ত্রী কোচ হিসেবে দায়িত্বে ফিরে আসার পর থেকে দলগত সংহতি এবং একতার ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছেন। ক্রিকেটারদের মধ্যে সুসম্পর্কের শৃঙ্খল এবং বিশ্বাসের বন্ধন গড়ে তুলতে চান শাস্ত্রী এবং কোহালি। সেই কারণে নানা অভিনব পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। যেমন সুইমিং পুলে ‘ফান সেশন’ যোগ করা হয়েছে। তেমনই বিদেশ সফরে থাকলে দলবদ্ধ ভাবে বাইরে কোথাও সারাদিনের জন্য ঘুরতে যাওয়ার ভাবনা রয়েছে।
এমনিতে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি বা বিরাট কোহালির জমানায় ভারতীয় দল এই ধরনের সফর আগেও করেছে। শাস্ত্রী ডিরেক্টর থাকাকালীন ২০১৪-’১৫ মরসুমে অস্ট্রেলিয়ায় দীর্ঘ টেস্ট এবং ওয়ান ডে সিরিজের মাঝে সকলকে নিয়ে এমন একটি একদিনের সফর করেছিলেন। সেখানে নকল গুলির বন্দুক নিয়ে যুদ্ধও করেছিলেন তাঁরা। নকল গল্প সাজানো হয়েছিল যে, ম্যানেজারকে গুম করা হল। তার পর দু’টি দলে ভাগ হয়ে গিয়ে কে ম্যানেজারকে আগে উদ্ধার করে আনতে পারে, তার লড়াই চলেছিল।
এর পর অস্ট্রেলিয়ায় ২০১৫ বিশ্বকাপের সময়েও ছুটি পেয়ে এ রকম ‘আউটিং’-এ টিমকে নিয়ে গিয়েছিলেন শাস্ত্রী। এক বছরের জন্য তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে আসা অনিল কুম্বলের আমলেও এমন সফর হয়েছে। পুণেতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রথম টেস্ট হারার পরে কোহালিরা ট্রেকিং অভিযানে গিয়েছিলেন। অতীতে গ্যারি কার্স্টেন কোচ থাকাকালীন ভারতীয় দল দুঃসাহসিক অভিযাত্রী মাইক হর্নের সঙ্গে বিশেষ ধরনের অভিযানে গিয়েছে।
তবে জন বুকানন যেমন অস্ট্রেলিয়া দলকে জঙ্গলের মধ্যে ‘বুট ক্যাম্পে’ নিয়ে যেতেন বা মাইক হর্নের ক্লাসের মতো এটা নয়। কোহালিদের ক্ষেত্রে দীর্ঘ ক্রিকেট সফরে ক্লান্তি বা একঘেয়েমি যাতে গ্রাস না করে ফেলে সেই কারণে ক্রিকেট থেকে সুইচ অফ করে একদিনের এই সফরসূচি তৈরি করার কথা ভাবা হয়েছে। ভারতীয় দল কোথায় যাচ্ছে, সেটা জানা যায়নি। তবে ক্যান্ডি যে হেতু পাহাড়ি পরিবেশে খুব দর্শনীয় স্থান, পাহাড়ের উপরে কোনও মনোরম জায়গায় তাঁরা সারাটা দিন কাটাতে পারেন।
শাস্ত্রী কোচের দায়িত্ব নিয়ে অনুশীলনের ধরনেও পরিবর্তন এনে ফেলেছেন। এখন দেখা যাচ্ছে, কোনও ক্রিকেট কেন্দ্রে পৌঁছে প্রথম প্র্যাকটিস সেশনটা খুব জোরাল ভাবে করছেন কোহালিরা। প্রায় সাড়ে তিন বা চার ঘণ্টার নিংড়ে নেওয়া ট্রেনিং সেশন হচ্ছে। প্রথম এই প্র্যাকটিস সেশনটাই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনও নতুন ক্রিকেটারকে কোচ বা অধিনায়ককে প্রভাবিত করতে হয়, এখানেই দারুণ কিছু করতে হবে।
এখন টেস্ট ম্যাচের আগে রোজ অনুশীলনের প্রথাটাই তুলে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। কলম্বো টেস্টের আগের দিন যেমন কোহালিরা কেউ প্র্যাকটিসই করেননি। ক্যান্ডিতে বুধবার কড়া অনুশীলন হল। বৃহস্পতিবার সারা দিন ট্যুরিস্টের মতো মজা নাও। আবার শুক্রবার হয়তো অনুশীলন হবে। শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে তৃতীয় টেস্ট। তখন ব্যাটারি পুরো রিচার্জড করে নামো।
আরও একটা উদ্দেশ্য আছে এই ধরনের ‘ডে আউট’-এর। কোহালিরা চাইছেন, ঘরে খেলছি না বাইরে সেই ধারণাটাই তুলে দিতে। এত কাল যে দেশে এবং বিদেশের পারফরম্যান্সকে আলাদা ভাবে দেখা হতো, সেই ভাবনা থেকেই সরে আসতে চাইছে শাস্ত্রী-কোহালি জুটি। তাঁরা টিমকে বলছেন, বিদেশে এসেও বিভুঁই যেন মনে না হয়, বিদেশকে দেশের মতো আপন করে নাও। সেই কারণে স্থানীয় জনতার সঙ্গে বেশি করে মেশার কথা ভাবা হচ্ছে। স্থানীয় দর্শনীয় জায়গাগুলিতে এ রকম দলবদ্ধ ভাবে যাওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হবে। মানে হোটেলের বদ্ধ চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে না থেকে যত পারো খোলামেলা হাওয়ায় মনকে খেলতে দাও। আর মন যদি ফুরফুরে থাকে, মাঠে খেলার মানও তত খুলবে— এটাই হল শাস্ত্রী-কোহালির দর্শন।
কতটা এই দর্শন ফলদায়ী হবে, তা আগামী বারো মাসের লম্বা মরসুমই বলে দেবে। সেই বারো মাসে কঠিন সব বিদেশ সফরও রয়েছে। আপাতত পাহাড়ের শোভা দেখতে দেখতে বলে দেওয়াই যায়,শাস্ত্রী-কোহালি জুটির দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটাও উৎসাহব্যঞ্জক হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy