বেঙ্গালুরুর গ্যালারিতেও ইরানি-দাপট। ছবি: পিটিআই।
ইরান-৩ (আজমুন, তেমুরিয়ান, তারেমি) ভারত-০
ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মঙ্গলবার বেঙ্গালুরুতে এসেছিলেন হাজার তিনেক ইরানিয়ান দর্শক। প্রাক বিশ্বকাপে স্বদেশের জয় দেখতে। যেটা সহজেই করে দেখাল বিখ্যাত কোচ কার্লোস কুইরোজের ইরান। কিন্তু তাতেও বোধহয় প্রত্যাশা পুরোটা পূর্ণ হল না! কারণ, স্টিভন কনস্ট্যান্টাইনের ভারতকে হাফ ডজন গোল দেওয়ার ইচ্ছে নিয়ে এসেছিলেন যে তাঁরা!
ফিফা র্যাঙ্কিং তো বটেই, এশীয় পর্যায়েও ভারতের সঙ্গে ইরানের পার্থক্য আকাশ-পাতাল। শুধু তাই নয় শেষ বিশ্বকাপে লিও মেসির আর্জেন্তিনাকেও প্রায় রুখে দিয়েছিল এশীয় ফুটবলের সেরা শক্তি ইরান। মেসিদের পা থেকে আসা একের পর এক শট বাঁচানো সেই গোলকিপার হাঘিঘি এ দিনও ছিলেন ইরান গোলপোস্টের নীচে। তাদের বেশির ভাগ ফুটবলার খেলেন ইউরোপে। এহেন বিপক্ষের সঙ্গে সুনীল ছেত্রী, অর্ণব মণ্ডল, প্রীতম কোটালরা কতক্ষণ লড়তে পারেন তা দেখার অপেক্ষায় ছিল ভারতীয় ফুটবলমহল। শেষ পর্যন্ত ঘরের মাঠে ৩-০-এ ইরানকে থামিয়ে দিতে পেরেছে ভারত।
ওমান এবং গুয়ামের কাছেও যারা এ বারের প্রি-ওয়ার্ল্ড কাপে হেরেছে সেই ভারতের অনেক বেশি শক্তিশালী ইরানের কাছে হার প্রত্যাশিতই ছিল। তা সত্ত্বেও ৪-৩-৩ ফর্মেশনে দল নামিয়েছিলেন স্টিভন। আক্রমণে সুনীলের সঙ্গে জেজে এবং রবিন সিংহ। লক্ষ্য— পাল্টা আক্রমণে হেভিওয়েট ইরানকে থামিয়ে রাখা। সেটা ফিগো-রোনাল্ডোর পর্তুগালকে কোচিং করানো কুইরোজও হয়তো গোড়ায় ধরতে পারেননি। সে জন্য প্রথমার্ধের মাঝামাঝি পর্যন্ত গোলের জন্য অপেক্ষা করতে হল আজমুনদের। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে ১-০-কে ৩-০ করতে তেমুরিয়ান, তারেমিরা সময় নিলেন মাত্র মিনিট পাঁচেক। ততক্ষণে স্টিভনের ভারতের ছক কার্যত দাঁড়িয়ে গিয়েছে ৮-১-১! নিজেদের বক্সের আশপাশে আট জন ফুটবলার দাঁড় করিয়ে ইরানকে কোনওক্রমে থামানোর ফুটবল। তাতে ভারত অবশ্য সফল। তিনটের বেশি গোল আর খেতে হয়নি।
প্রাক্তন জাতীয় অধিনায়ক সুব্রত পালকে না খেলিয়ে এ দিন গোলের নীচে নামানো হয়েছিল নরওয়ের স্টেব্যাক ক্লাবে খেলা দীর্ঘকায় গুরপ্রীত সিংহকে। খারাপ খেলেননি প্রাক্তন ইস্টবেঙ্গল কিপার। প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে দেখা গেল তিন বঙ্গসন্তান ডিফেন্ডার প্রীতম, অর্ণব এবং নারায়ণ দাসকেও। সঙ্গে দেশের সবচেয়ে দামী ডিফেন্ডার সন্দেশ জিঙ্ঘলও বেশ ভাল খেললেন। ধনপাল হাঁটুতে চোট পেয়ে বসে যাওয়ার পর নামেন রাউলিন বর্জেস। কিন্তু ইরানের বিশ্বমানের শক্তি, ফিজিক্যাল ফিটনেস এবং স্ট্র্যাটেজির সামনে সার্বিক ভাবে প্রায় দাঁড়াতেই পারেনি ভারতীয় দল। একটা সময় ইরান তাদের ডিফেন্সে মাত্র দু’জনকে রেখে সবাই উঠে যায় ভারতের বক্সে গোল বাড়াতে। তবুও কুইরোজের দল তিনের বেশি গোল সংখ্যা বাড়াতে পারেনি যে সেটাই হয়তো ভারতীয় ফুটবলের সান্ত্বনা এ দিন।
প্রাক বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত কোনও ম্যাচ জেতেনি ভারত। স্টিভন কোচ হয়ে আসার পর নেপালের বিরুদ্ধে প্রীতি ম্যাচও জেতেনি। তা সত্ত্বেও সুনীল-অর্ণবদের ব্রিটিশ কোচ ম্যাচ শেষে বেঙ্গালুরুতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘বিশ্ব ফুটবলের শক্তিশালী দেশগুলোর বিরুদ্ধে আরও বেশি না খেললে ভারতীয় দলের উন্নতি হবে না। আমরা গত তিন মাস কোনও শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ম্যাচই খেলিনি। তা সত্ত্বেও এ দিন ছেলেরা প্রায় সেই স্ট্যান্ডার্ডেই খেলেছে। শক্তিশালী বিপক্ষের সঙ্গে যেমনটা ভাল খেলা দরকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy