ধাক্কা: কোটলায় অস্ট্রেলিয়ার দাপটের সামনে অসহায় ভারত। হতাশার ছাপ বিরাট, রোহিতের মুখে। পিটিআই
নেথান লায়নকে কভারে ঠেলে একটা রান নিয়ে রোহিত শর্মা যখন ওয়ান ডে ক্রিকেটে আট হাজার রান পূর্ণ করল, তখনও ম্যাচটা ভারতের হাতে ছিল। কিন্তু অ্যাডাম জ়াম্পার করা ২৯তম ওভারে রোহিত এবং রবীন্দ্র জাডেজা আউট হওয়ার পরেই ভারত ম্যাচ থেকে হারিয়ে যায়। শেষ দিকে কেদার যাদব, ভুবনেশ্বর কুমারের লড়াইও ২-৩ ওয়ান ডে সিরিজ হার থেকে বাঁচাতে পারল না বিরাট কোহালিদের। অস্ট্রেলিয়ার নয় উইকেটে ২৭২ রানের জবাবে ভারত থেমে গেল ২৩৭ রানে।
বিশ্বকাপের আগে এটাই ছিল ভারতের চূড়ান্ত মহড়া। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দু’টো টি-টোয়েন্টি এবং পাঁচটা ওয়ান ডে ম্যাচের পরেও কিন্তু কয়েকটা প্রশ্নের জবাব পাওয়া গেল না।
যেমন, বিশ্বকাপে ভারতীয় ব্যাটিং অর্ডারে চার নম্বরে কে খেলবে? এই দলে নতুন ফিনিশার হিসেবে সত্যিই কি কেউ উঠে আসছে? কুলদীপ যাদব, যুজবেন্দ্র চহালের রহস্য কি ভেদ করে ফেলেছে বিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা?
অম্বাতি রায়ডু ব্যর্থ হওয়ার পরে চার নম্বর জায়গায় কোনও নাম এখনও চুড়ান্ত হতে পারল না। কে এল রাহুল এই ম্যাচে না খেলায় ওয়ান ডে সিরিজে ওর পরীক্ষা হল না। ঋষভ পন্থও পাওয়া সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ।
আরও পড়ুন: টেস্টে ফ্রি-হিট আনার প্রস্তাব, ঘড়িও আনতে চায় এমসিসি
কোটলার এই ম্যাচটা ছিল ঋষভের পরীক্ষা। ঘরের মাঠে একটা ভাল ইনিংস কিন্তু ঋষভকে বিশ্বকাপের টিকিট এনে দিতে পারত। বুধবার কোহালি আউট হওয়ার পরেই দেখা যায় ব্যাট করতে নামছে ঋষভ। অর্থাৎ তরুণ এই ক্রিকেটারকে যতটা সম্ভব বেশি ব্যাট করার সুযোগ দিতে চেয়েছিল টিম ম্যানেজমেন্ট। ঋষভ শুরুটা খারাপ করেনি। কিন্তু একটা চার, একটা ছয় মেরে ১৬ বলে ১৬ করার পরে আউট হয়ে গেল।
আরও পড়ুন: দল তৈরি, লড়াই একটা জায়গা নিয়েই, বলছেন কোহালি
তবে এ দিন ঋষভ উইকেট ছুড়ে দেয়নি। লায়নের অসাধারণ একটা বলে আউট হল। বলটা লেগ-মিডল স্টাম্পে পড়ে, স্পিন করে বেরিয়ে যাওয়ার মুখে বাঁ হাতি ঋষভের ব্যাট ছুঁয়ে স্লিপে চলে যায়। লায়নের এ দিনের বোলিং দেখে মনে হচ্ছিল, সাদা বলের ক্রিকেটে লাল বলের বোলিং করছে। অর্থাৎ, ওয়ান ডে-তে টেস্ট ক্রিকেটের জন্য আদর্শ অফস্পিন বোলিং। অ্যাকশন, লুপ, ডেলিভারি— সব কিছুই নিখুঁত। গ্রেম সোয়ানের পরে এত ভাল অফস্পিনার আমি দেখিনি। এর সঙ্গে জ়াম্পার লেগস্পিন যোগ হয়ে ভারতকে হারের দিকে ঠেলে দিল। নতুন এবং পুরনো বলে প্যাট কামিন্সও চাপে রেখে গেল ভারতকে। বিশ্বকাপের আগে ভারত কিন্তু নতুন ফিনিশারও তুলে আনতে পারল না। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি অবশ্য দলে ফিরে আসবেন। কিন্তু ছ’নম্বরে আর এক জন ফিনিশার কি পাওয়া গেল? কেদার যাদব খারাপ খেলছে না। এ দিনও লড়াই করল। কিন্তু প্রয়োজনে বড় শট কতটা নিতে পারবে, প্রশ্ন থাকছে। আমি কিন্তু এখনও বলব, দীনেশ কার্তিককে ফিরিয়ে আনা হোক। অল্প যে সুযোগ দীনেশ পেয়েছে, কাজে লাগিয়েছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক মঞ্চে ম্যাচ শেষ করে আসার অভিজ্ঞতা আছে দীনেশের।
গত এক বছরে আমরা দেখেছিলাম, মাঝের ওভারগুলোয় বিপক্ষ ব্যাটিংয়ে ধস নামিয়ে ভারতকে ম্যাচ জেতাচ্ছে দুই রিস্ট স্পিনার— কুলদীপ যাদব এবং যুজবেন্দ্র চহাল। কিন্তু ইদানীং দেখা যাচ্ছে, এই রিস্ট স্পিনারদের কিছুটা বুঝে ফেলেছে ব্যাটসম্যানরা। এই অস্ট্রেলিয়া দলে যে ব্যাপারে সব চেয়ে এগিয়ে উসমান খোয়াজা। এ দিনও যেমন দারুণ খেলল কুলদীপকে। ১০৬ বলে ১০০ রান করে গেল। ম্যাচ এবং সিরিজ সেরা খোয়াজাই। পিটার হ্যান্ডসকম্বও এই সিরিজে ভারতীয় স্পিনারদের সহজেই খেলে দিল। এই ব্যাপারটা চিন্তায় রাখবে টিম ম্যানেজমেন্টকে। বিশ্বকাপের আগে যে সময়টা হাতে পাওয়া যাবে, নিজেদের একটু ঝালিয়ে নিতে পারে কুল-চা জুটি।
এ বারের বিশ্বকাপে সব দলই একে অন্যের সঙ্গে খেলবে। তাই সামান্য ভুল করার কোনও জায়গা থাকবে না। এই সিরিজ হার যেন ভারতের জন্য একটা ঘুম ভাঙানি ‘অ্যালার্ম বেল’ হয়ে থাকে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy