ভেল্কি: কুলদীপের বিস্ময় ডেলিভারি নিয়ে চর্চা সর্বত্র। ফাইল চিত্র
কলকাতা নাইট রাইডার্সের বোলিং পরামর্শদাতা থাকার সময় থেকেই মহম্মদ শামি তাঁর ছাত্র। যেখানে দেখা হয় শামি ছুটে যাবেন তাঁর কাছে। বোলিংয়ের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করে দেবেন।
ম্যাঞ্চেস্টারেও তার ব্যতিক্রম হল না। শামি গিয়ে দেখা করে এলেন আক্রমের সঙ্গে। শুধু দেখা করাই নয়, বোলিং নিয়ে আলোচনা করলেন। জানতে চাইলেন নতুন বলে আউটসুইং করানোর কৌশল নিয়ে। নতুন বলে ইনসুইং ঠিকই হচ্ছে। আউটসুইং করানোর ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ছেন। আক্রম তাঁকে দারুণ সব টোটকা দিয়ে দিয়েছেন বলে জানা গেল। বিশেষ ভাবে নজর রাখতে বলেছেন দু’টো জিনিসের উপর। ডান হাতি বোলারের বাঁ-পা কী রকম কোণ রেখে পড়ছে, তা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেটা খেয়াল করতে বললেন শামিকে। দ্বিতীয়ত, পরামর্শ দিলেন নতুন বলে শুরুর দিকে কয়েকটা ওভার আরও স্টাম্পের গা ঘেঁষে করার চেষ্টা করতে হবে।
সেই সময় মাঠে উপস্থিত কয়েক জন প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, শামি যথারীতি বাধ্য ছাত্রের মতো সব শুনছিলেন মন দিয়ে। আক্রমকে এ দিন এ নিয়ে জিজ্ঞেস করায় বললেন, ‘‘ভারতীয় দলের অনেকের সঙ্গেই আমার কথা হয়েছে। বিরাটের সঙ্গে দেখা হল। রোহিতের সঙ্গে লিফটের মধ্যে দেখা হল। শামির সঙ্গেও হয়েছে। ওর সঙ্গে বোলিং নিয়ে কয়েকটা কথা হয়েছে। হয়তো আবার কথা হবে।’’
কী ধরনের কথাবার্তা হয়েছে বা কী পরামর্শ তিনি দিয়েছেন, তা নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করতে চাইলেন না সুইংয়ের সুলতান। তবে জানা গেল, শামি তাঁর ইংল্যান্ডের মোবাইল নম্বর নিয়ে গিয়েছেন। তার মানে বিস্তারিত আলোচনার দ্বিতীয় পর্ব চলবে ফোনে। আর আক্রমের সঙ্গে কথা হওয়ার পর-পরই শামিকে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ভারতের চারটি ম্যাচ হয়েছে বিশ্বকাপে। এর মধ্যে নিউজ়িল্যান্ড ম্যাচে একটিও বল না হয়ে বৃষ্টিতে বাতিল হয়ে গিয়েছে। শামি একটি ম্যাচেও জায়গা পাননি।
কিন্তু রবিবার ম্যাঞ্চেস্টারে ভুবনেশ্বর কুমার চোট পাওয়ায় শামির ২০১৯ বিশ্বকাপ অভিযান শুরু কার্যত নিশ্চিত। দল সূত্রে জানা গেল, শিখর ধওয়নের মতো সংশয় ভুবনেশ্বরকে নিয়ে তৈরি হয়নি। দু’তিনটে ম্যাচই হয়তো তাঁকে বাইরে বসতে হবে। সে ক্ষেত্রে দেশ থেকে বিকল্প উড়িয়ে আনার ব্যাপার নেই যে-হেতু শামি আছেন। সাউদাম্পটনেই আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় পেসার হিসেবে ভুবির জায়গায় খেলবেন তিনি। তার আগে প্রাক্তন কেকেআর বোলিং গুরুর ইংল্যান্ড নম্বরে ফোন গেলে অবাক হওয়ার থাকবে না।
শামি ছাড়াও আর এক আক্রম-ভক্ত আছে কোহালির ভারতীয় দলে। তিনি কুলদীপ যাদব। তিনিও কেকেআরে থাকার সময় প্রাক্তন পাক পেসারের মূল্যবান পরামর্শ পেয়েছেন। কুলদীপের আবার ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন দেখা শুরু ওয়াসিম আক্রমকে দিয়েই। বাঁ-হাতি কুলদীপ শুরুতে জোরে বোলিং করতেন। আক্রমের মতো বোলার হবেন স্বপ্ন নিয়ে কোচিং ক্যাম্পে ক্রিকেট যাত্রা শুরু তাঁর। কেকেআরে প্রথম যখন এসে তাঁর স্বপ্নের নায়ককে পেলেন, সারাক্ষণ তাঁর সঙ্গে লেগে থাকতেন।
অভিভূত: কুলদীপের জাদু-বল দেখে মুগ্ধ আক্রম। ফাইল চিত্র
সেই কুলদীপ রবিবারের ম্যাঞ্চেস্টারে বিস্ময় ডেলিভারিতে আউট করেছেন বাবর আজ়মকে। যাকে ‘শতাব্দীর সেরা বল’ আখ্যা দেওয়া হচ্ছে। আশ্চর্যের হচ্ছে, শেন ওয়ার্নের সেই মাইক গ্যাটিংকে করা ‘বল অফ দ্য সেঞ্চুরি’-ও এই ওল্ড ট্র্যাফোর্ড মাঠেই। আক্রমকে দেখে খেলা শুরু করেছিলেন কুলদীপ। তার পর স্পিন বোলিংয়ে যখন এলেন, শেন ওয়ার্নের ফ্যান হয়ে গেলেন। ওয়ার্ন তাঁকে নানা পরামর্শ দিয়ে সাহায্যও করেছেন। কুলদীপ ম্যাচের পরে বলে যান, ‘‘আমার কাছে এটা একটা স্বপ্নের বল। এশিয়া কাপেও ওর উইকেট নিয়েছিলাম আমি।’’ যোগ করলেন, ‘‘বৃষ্টি হওয়ার সময় মাঠের বাইরে গিয়ে টিভিতে দেখেছি বলটা। এক জন স্পিনার যা যা করাতে চায়, সব কিছু ছিল বলটায়। তাই এটা স্বপ্নের ডেলিভারি।’’ ভয়ঙ্কর হতে থাকা আজ়ম এবং ফখর জ়মানের উইকেট পর-পর দু’ওভারে তুলে নিয়ে বল হাতে কুলদীপই টার্নিং পয়েন্ট তৈরি করেন ভারতের পক্ষে। এই দুই পাক ব্যাটসম্যান দ্বিতীয় উইকেটে ১০৪ রান যোগ করে ম্যাচ ছিনিয়ে নেওয়ার উপক্রম করছিলেন।
আক্রমের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন কুলদীপও। প্রাক্তন গুরুকে উচ্ছ্বসিত দেখাল বিস্ময় বল নিয়ে। তা সে যতই তাঁর দেশের ব্যাটসম্যানের উইকেট নিয়ে থাকুন কুলদীপ। ‘‘অবিশ্বাস্য বোলিং করেছে ছেলেটা। এ রকম জাদু-বল করার দক্ষতা কিন্তু আছে কুলদীপের। ওর সব চেয়ে বড় গুণ হচ্ছে, সাহস। ওয়ান ডে ক্রিকেটে বিশ্বকাপের ভারত-পাক হাইপ্রেসার ম্যাচে টেস্টের মতো একটা বল করল,’’ বলে আক্রম যোগ করলেন, ‘‘মনে রাখতে হবে ওয়ার্নের বলটা ছিল টেস্ট ক্রিকেটে। কুলদীপেরটা ওয়ান ডে-তে, যেখানে স্পিনাররা হাত খুলে বল করতেই ভয় পায়।’’
সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সুনীল গাওস্করদের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা দেন আক্রম। বললেন, ‘‘অনেক দিন পরে সকলের সঙ্গে দেখা হল। আমরা সকলে খুব খুশি ছিলাম।’’ শুনতে-শুনতে মনে হচ্ছিল, রবিবার ম্যাঞ্চেস্টার মহারণ আর রোহিত, বিরাটদের ক্রিকেটীয় শাসন ছাপিয়ে জিতল ক্রিকেট। গ্যালারিতে দু’দেশের সমর্থকেরা। মাঠে দু’দলের ক্রিকেটারেরা আর কমেন্ট্রি বক্সে দু’দেশের সব কিংবদন্তি নাম। সকলে একযোগে সীমান্তের কাঁটাতারকে উপড়ে ফেলে মিত্রতার আলিঙ্গনে ধরা থাকলেন।
ম্যাঞ্চেস্টারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। তীব্রতা ছিল। উত্তেজনা ছিল। কিন্তু তিক্ততা শব্দটিকে রোহিত শর্মার মতোই বাউন্ডারির বাইরে উড়িয়ে দিলেন দু’দেশের প্রাক্তন ও বর্তমান ক্রিকেটার এবং ক্রিকেট ভক্তরা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy