রাজসিক: ১১৩ বলে ১৪০ রান করে নায়ক রোহিত। এএফপি
ঘটনাটি শুনেছিলাম দিলীপ বেঙ্গসরকরের মুখে। তখন মুম্বই রঞ্জি ট্রফি দলের নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান ছিল বেঙ্গসরকর। কোচ লালচাঁদ রাজপুত। রঞ্জি ট্রফি দলের ১২ জনের তালিকায় রোহিত শর্মার নাম ছিল না। পরের দিন সে দলে নেওয়া হয় আরও তিনজনকে। সেখানে নাম ওঠে রোহিতের।
প্রথম ১২জনের তালিকায় নাম না দেখে ম্যাচের দিন নিজের কিটব্যাগটি নিয়ে আসেনি রোহিত। তার কারণ অবশ্যই মুম্বইয়ের লোকাল ট্রেনের ভিড়। ফলে কোচের কাছে প্রচুর বকাঝকাও খেতে হয়েছিল। সেই রোহিতই রবিবার ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ১১৩ বলে ১৪০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে গেল। বুঝিয়ে দিল, কেন ও বিশ্বের অন্যতম সেরা ওপেনার।
ক্রিকেটে একটি কথা আছে, ‘‘গুড টস টু লুজ।’’ এ দিন ম্যাঞ্চেস্টারে বিরাট কোহালির সঙ্গে কিন্তু সেটাই হয়েছে। টানা দু’দিন বৃষ্টি হওয়ায় উইকেট ঢাকা ছিল। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সাধারণত টস জিতে ফিল্ডিং করার জন্য মুখিয়ে থাকে অধিনায়কেরা। ব্যবহার করতে চায় উইকেটের স্যাঁতসেঁতে ভাব। সরফরাজ় আহমেদও সেটাই করেছে। নিশ্চিত, বিরাটও একই সিদ্ধান্ত নিত। কিন্তু মহম্মদ আমির প্রথম ওভার করার পরেই দেখা গিয়েছে উইকেটে বল নড়াচড়া করছে না। দ্বিতীয় ওভারে হাসান আলির ইনসুইং রোহিতের ব্যাটের ভিতরের দিকে লেগে ফাইন-লেগ দিয়ে বাউন্ডারির বাইরে চলে গেল। সেখান থেকেই দ্বিগুণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে যেন ফিরল রোহিত। পাকিস্তান ম্যাচে যে বাড়তি চাপ থাকে, দ্রুত সেটা কাটিয়ে উঠে পাল্টা চেপে বসল বোলারদের উপর।
আরও পড়ুন: সুপারহিট হিট ম্যান
রোহিত যখন ব্যাট করে, মনে হয় ক্রিকেট খেলাটা কত সহজ। নতুন বলটা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দেখে খেলে। সুইং ভাঙার সময় দেয়। প্রথম লাইনে খেলে না। দ্বিতীয় লাইন বেছে নেয়। বর্তমানে ওয়ান ডে ক্রিকেটে বিরাটের পরেই জায়গা করে নেবে রোহিত। বিশ্বকাপের তিন ম্যাচে ৩১৯ রান করা সহজ নয়। বিরাটকে যদি দশে নয় নম্বর দিই, এই ইনিংসের পরে রোহিত পাবে সাড়ে আট।
ম্যাঞ্চেস্টারের স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় কী ভাবে একজন ওপেনারের ব্যাট করা উচিত, তার সব চেয়ে বড় উদাহরণ কিন্তু রোহিতের ইনিংস। কখনও বাড়তি ঝুঁকি নেয়নি। খারাপ বলের ফায়দা তুলেছে প্রতি মুহূর্তে। কোন বোলারকে আক্রমণ করব, কাকেই বা সামলে খেলব সেটা দেখা গিয়েছে ওর ইনিংসে। আমিরের বলই একমাত্র দু’দিকে সুইং করছিল। রোহিত কিন্তু ওর বিরুদ্ধে শুধু স্ট্রাইক রোটেট করল। আক্রমণ করল হাসান আলিকে।
আরও পড়ুন: ম্যাঞ্চেস্টারের মার্কশিট, দেখে নিন কত পেলেন বিরাট-রোহিতরা
ওর ইনিংসে কয়েকটি শটের কথা উল্লেখ করতেই হচ্ছে। সপ্তম ওভারের শেষ বলে হাসান আলিকে ফ্রন্টফুটে পুল করে যে ছয় মারল, সেটা ইনিংসের সেরা। ভিভ রিচার্ডস ও রিকি পন্টিংকে এ ধরনের শট খেলতে দেখতাম। বর্তমানে রোহিতের মতো ভাল সেটা কেউ মারে না। শাদাব খানকে যে স্কোয়ার ড্রাইভ মেরে হাফসেঞ্চুরি করল, সেটাও বিশ্বসেরা। তৃতীয়টি ফের মেরেছিল হাসানকে। ৮৫ রান থেকে ৯১ রানে পৌঁছনোর সময় আপার স্কোয়ার কাট করে পয়েন্টের উপর দিয়ে ছয় মারে রোহিত। ভারতীয় ওপেনারের এই শট দেখে নিশ্চয়ই খুশি হবে প্রাক্তন ওপেনার বীরেন্দ্র সহবাগ। ‘নজফগড়ের নবাব’ এই আপার স্কোয়ার কাটের জন্যই বিখ্যাত। দেখে মনে হচ্ছিল, উইকেটের সঙ্গে দ্রুত কতটা মানিয়ে নিয়েছে রোহিত।
এ দিন রোহিত কিন্তু ওর স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলেনি। বিরাটের সঙ্গে ৯৮ রানের জুটি গড়ার সময় ভারতীয় ওপেনার কিন্তু প্রচুর খুচরো রান নিয়েছে। সাধারণত এতটা দৌড়তে ও পছন্দ করে না। কিন্তু বিরাটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এক রানকে দু’রানে পরিণত করল। তিন রানও নিতে দেখা গেল। এমন ভাবেই চালিয়ে গেলে অনায়াসে ওয়ান ডে-র চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরি করে ফেলতে পারত আজই।
দল হিসেবে পাকিস্তান কিন্তু ভারতের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। শুধু ব্যাটিংয়েই নয়, বোলিং ও ফিল্ডিংয়েও। বোলারদের ইকনমি রেট ছয়ের উপরে। ব্যতিক্রম আমির ও ইমাদ ওয়াসিম। পাকিস্তানের এই তরুণ বাঁ-হাতি স্পিনার বলকে বেশি ঘোরানোর চেষ্টা করে না। সারা দিন এক জায়গায় বল করে। মিডল ও অফ-মিডলে বল ফেলে সামান্য বাইরের দিকে ঘোরায়। ওকে কিন্তু সহজ ভাবেই সামলে নিল রোহিত। ইমাদকে সুইপ অথবা স্কোয়ার কাট করার পরিকল্পনা নিলে ভুল হত। সম্ভাবনা থাকত এলবিডব্লিউ হওয়ার। ভারতীয় ওপেনার ওর বিরুদ্ধে সহজেই রান করার উপায় বার করল। শুধু মিড-অফ ও মিড-অন অঞ্চলের দিকে খেলে ইমাদকে বিভ্রান্ত করে দিল রোহিত।
এ বার আসা যাক ওর আউটের বিষয়ে। রোহিতের আউটের পিছনে বিরাট কোহালির কিছুটা অবদান রয়েছে। ৩৯তম ওভারে ফাইন-লেগে দাঁড়িয়ে থাকা ওয়াহাব রিয়াজ়কে বৃত্তের ভেতরে তুলে আনে সরফরাজ়। রোহিতকে কোহালি ইঙ্গিত করে তা বুঝিয়ে দেয়। ফিল্ডার সামনে থাকার সুযোগটি তুলতে চেয়েছিল রোহিত।
হাসান আলির সেই স্লোয়ার বল শর্ট ফাইন-লেগের মাথার উপর দিয়ে স্কুপ করতে যায় রোহিত। কিন্তু বলটি ব্যাটের একেবারে নীচে লেগে ওয়াহাবের হাতে চলে যায়। ময়দানের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘লোভে পড়ে আউট হওয়া’। নন-স্ট্রাইকারের নির্দেশ অনেক সময় ব্যাটসম্যানের কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। ক্রিকেটের এটাই মাহাত্ম্য।
স্কোরকার্ড
ভারত ৩৩৬-৫ (৫০)
পাকিস্তান ২১২-৬ (৪০)
ভারত
রাহুল ক বাবর বো ওয়াহাব ৫৭•৭৮
রোহিত ক ওয়াহাব বো হাসান ১৪০•১১৩
কোহালি ক সরফরাজ় বো আমির ৭৭•৬৫
হার্দিক ক বাবর বো আমির ২৬•১৯
ধোনি ক সরফরাজ় বো আমির ১•২
শঙ্কর ন. আ. ১৫•১৫
কেদার ন. আ. ৯•৮
অতিরিক্ত ১১
মোট ৩৩৬-৫ (৫০)
পতন: ১-১৩৬ (রাহুল, ২৩.৫), ২-২৩৪ (রোহিত, ৩৮.২), ৩-২৮৫ (হার্দিক, ৪৩.৫), ৪-২৯৮ (ধোনি, ৪৫.১), ৫-৩১৪ (কোহালি, ৪৭.৪)।
বোলিং: মহম্মদ আমির ১০-১-৪৭-৩, হাসান আলি ৯-০-৮৪-১, ওয়াহাব রিয়াজ় ১০-০-৭১-১, ইমাদ ওয়াসিম ১০-০-৪৯-০, শাদাব খান ৯-০-৬১-০, শোয়েব মালিক ১-০-১১-০, মহম্মদ হাফিজ় ১-০-১১-০।
পাকিস্তান
ইমাম এলবিডব্লিউ বো শঙ্কর ৭•১৮
ফখর ক চহাল বো কুলদীপ ৬২•৭৫
বাবর বো কুলদীপ ৪৮•৫৭
হাফিজ় ক শঙ্কর বো হার্দিক ৯•৭
সরফরাজ় বো শঙ্কর ১২•৩০
শোয়েব বো হার্দিক ০•১
ইমাদ ন. আ. ৪৬•৩৯
শাদাব ন. আ. ২০•১৪
অতিরিক্ত ৮ মোট ২১২-৬ (৪০)
পতন: ১-১৩ (ইমাম, ৪.৫), ২-১১৭ (বাবর, ২৩.৬), ৩-১২৬ (ফখর, ২৫.২), ৪-১২৯ (হাফিজ়, ২৬.৫), ৫-১২৯ (শোয়েব, ২৬.৬), ৬-১৬৫ (সরফরাজ়, ৩৪.১)।
বোলিং: ভুবনেশ্বর কুমার ২.৪-০-৮-০, যশপ্রীত বুমরা ৮-০-৫২-০, বিজয় শঙ্কর ৫.২-০-২২-২, হার্দিক পাণ্ড্য ৮-০-৪৪-২, কুলদীপ যাদব ৯-১-৩২-২, যুজবেন্দ্র চহাল ৭-০-৫৩-০।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy