ছবি: শাটারস্টক।
শীতে আবহাওয়ায় আর্দ্রতা কমে যায়। আবার শীতে জলও কম খাওয়া হয়। দু'টি বিষয়ই প্রভাব ফেলে ত্বকে এবং চুলে। এক দিকে যেমন শুষ্ক হাওয়া এবং ধুলো-বালি ত্বক এবং চুলের আর্দ্রতা টেনে নেয়, চুলকে ভঙ্গুর করে ফেলে, তেমনই জল কম খাওয়ায় শরীরের ভিতরের আর্দ্রতাও কমে গিয়ে তৈরি হয় সমস্যা। ফলে প্রথমে চুলের ঝলমলে ভাব উধাও হয়। তার পরে শুরু হয় চুল পড়া। তবে ত্বকের চিকিৎসক শিফা যাদব বলছেন, শীতে চুল ঝরার অন্যতম কারণ আর্দ্রতা হলেও সেটি এক মাত্র কারণ নয়। শীতে চুল বেশি পড়ার আরও অনেক রকম কারণ থাকতে পারে।
১। খুসকি: চিকিৎসক বলছেন, শীতে শুষ্ক আবহাওয়ায় মাথার ত্বক শুকিয়ে গিয়ে মৃত কোষ উঠতে শুরু করে বা ছত্রাক সংক্রমণে খুসকি হয়। খুসকি থেকে abarআ নানা রকম সংক্রমণও হতে পারে। দীর্ঘ দিন মাথায় খুসকি থাকলে ছত্রাকজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। তার থেকেও উঠতে পারে চুল।
২। কৃত্রিম ভাবে চুল শুকোনো: শীতে স্নান করার পরে চুল স্বাভাবিক ভাবে শুকোতে সমস্যা হয় বলে অনেকেই ড্রায়ারের সাহায্যে চুল শুকিয়ে নেন। শিফা বলছেন, ড্রায়ারে মাথার ত্বকের আর্দ্রতা কমে যেতে পারে। তা থেকেও চুলের আর্দ্রতা কমে চুল ঝরা, ভেঙে যাওয়া বা ডগা ফেটে যাওয়ার সমস্যা হতে পারে।
৩। টুপি মাফলার: শীতে ঠান্ডা থেকে বাঁচতে টুপি, স্কার্ফ বা মাফলারে মাথা ঢেকে রাখেন অনেকেই। উলের তৈরি সেই টুপি, স্কার্ফ বা মাফলার স্থির তড়িৎ তৈরি করে, যা থেকে চুল জড়িয়ে নষ্ট হতে পারে।
৪। রক্ত সঞ্চালন: চিকিৎসক জানাচ্ছেন, বেশি ঠান্ডায় মাথায় রক্তসঞ্চালনের পরিমাণ অনেক সময় কমে যায়। ফলে চুলের গোড়ায় যথাযথ পুষ্টি পৌঁছয় না। চুলের ফলিকলে পৌঁছয় না অক্সিজেনও। এর ফলেও চুল ঝরতে পারে।
৫। গরম জলে স্নান: অনেকেই শীতে গরম জলে স্নান করেন। শীত কাটাতে একটু বেশিই গরম করে নেন জল। কিন্তু বেশি গরম জল মাথার ত্বকের জন্য ক্ষতিকারক বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক। তিনি বলছেন, শীতে মাথায় যদি গরম জল দিতে হয়, তবে সেটা ততটুকুই গরম করা ভাল যাতে শুধু ঠান্ডা ভাবটুকু কেটে যায়।
৫। ভিটামিন ডি: 'জার্নাল অফ কসমেটিক ডার্মাটোলজি'-তে বলা হয়েছে, শীতে যে হেতু দিনের আলো কম সময় থাকে, তাই শরীরে ভিটামিন ডি-র অভাব তৈরি হয়। চুলকে ভাল রাখতে এবং চুলের ফলিকলগুলিকে উজ্জীবিত করতে ভিটামিন ডি জরুরি। শরীরে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি না থাকে, তা হলেও চুল ঝরতে পারে।
কী ভাবে সমাধান?
১। মাথার ত্বকে মাসাজ: যে হেতু রক্তসঞ্চালন কমে যাওয়ার কারণে মাথার ত্বকে পুষ্টি বা অক্সিজেনের ঘাটতি হয়, তাই মাথার ত্বকে মাসাজ কাজে দিতে পারে। ২০১৬ সালে 'ইপ্লাস্টি' নামে এক বিজ্ঞান বিষয়ক পত্রিকায় প্রকাশিক একটি গবেষণার কথা উল্লেখ করে চিকিৎসক যাদব বলছেন, ‘‘মাথার ত্বকে মাসাজ করলে সেখানে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে। একটি গবেষণায় বলা হয়েছে আঙুল দিয়ে মাথায় মাসাজ করার সুফল পাওয়া গিয়েছে ২৪ সপ্তাহের মধ্যে। প্রতিদিন ১০ মিনিট করে মাথায় মাসাজ করলে দেখা গিয়েছে, তাতে চুল ঘন হয়েছে। চুল পড়াও কমেছে।’’
২। আর্দ্রতা জোগায় এমন তেল বা সিরাম : যে হেতু চুলের আর্দ্রতা কমে গিয়ে চুল পড়ে বা ভঙ্গুর হয়ে যায়, তাই চুলে নারকেল তেল বা সিরাম লাগানো যেতে পারে বলে পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক যাদব। তিনি বলছেন, তেল বা সেরাম চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখলে চুল ভেঙে যাওয়ার বা রুক্ষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কমবে। পাশাপাশি, চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বলও দেখাবে।
৩। স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া: চুলের পুষ্টির কথা মাথায় রাখতে হবে সবার আগে। তাই খাওয়াদাওয়াতেও নজর দিতে হবে। বায়োটিন, জিঙ্ক, আয়রন, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আছে, এমন খাবার বেশি করে খেতে বলছেন চিকিৎসক। তাঁর কথায়, ‘‘ডিম, কাঠবাদাম, অ্যাভোকাডো, পালং শাক, পাঁঠার মাংস, তৈলাক্ত মাছ, চিয়া বীজ এবং আখরোটে এই সমস্ত পুষ্টিগুণ রয়েছে।’’
৪। সাপ্লিমেন্টস: ভিটামিন ডি-র সমস্যা হলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন।
৫। ছত্রাকনাশী শ্যাম্পু: চুলে ছত্রাকজনিত নাছোড় খুসকির সমস্যা তৈরি হলে কেটোকোনাজোল শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করতে বলছেন চিকিৎসক যাদব। তিনি বলছেন, এতে মাথার ত্বকের চুলকানির সমস্যা কমবে। মাথার ত্বকের স্বাস্থ্য ফিরলে চুলও বাড়বে।
৬। কন্ডিশনার: কন্ডিশনার চুলের জন্য জরুরি। কিন্তু কন্ডিশনার সরাসরি চুলের গোড়ায় দিলে তা চুলের ফলিকলের মুখ বন্ধ করে চুলের ক্ষতি করতে পারে। চুল না-ও বাড়তে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy