পরীক্ষা: রোহিত শর্মার সঙ্গে অনুশীলনে ঋষভ পন্থ। বৃহস্পতিবার। এএফপি
বিরাট কোহালি, রোহিত শর্মা, হার্দিক পাণ্ড্য, ঋষভ পন্থরা তখন ফুটবল খেলতে শুরু করেছেন। অধিনায়ক কোহালিকে দেখা গেল ফুটবল অনুশীলনেরও নেতৃত্বে।
বল মাটিতে ড্রপ না ফেলে কতক্ষণ নাচানো যায়, সেই চ্যালেঞ্জ সতীর্থদের জন্য ছুড়ে দিলেন তিনি। একটু পরে সেই ফুটবল অভিযানে যোগ দিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এবং মহম্মদ শামি। দৌড়তে দৌড়তে এসে পড়লেন কুলদীপ যাদবও। এই ভারতীয় দলে ক্রিকেটের মতোই ফুটবল দক্ষতায় সব চেয়ে উপরে থাকা দু’টো নাম কোহালি এবং ধোনি। দেখা গেল, বল নাচানোর স্কিলে খুব পিছিয়ে নেই শামি এবং কুলদীপ। খারাপ নন রোহিতও।
ফুটবল নিয়ে হুল্লোড়ে মেতে কোহালিদের থেকে চোখ যদি কোনও ভাবে মাঠের বাঁ-প্রান্তে চলে যায়, বুকের মধ্যে ছ্যাঁৎ করে উঠবে। কোথায় ফুটবলের সেই বাঁধনহারা উচ্ছ্বাস। ও দিকটা বরং সম্পূর্ণ ম্রিয়মান। সাউদাম্পটনের আকাশের মতোই যেন এক দিক কালো মেঘে ঢাকা, অন্য দিকে সূর্য উঁকি মারছে। গভীর উদ্বেগের ওই বাঁ-প্রান্তে তখন দলের ফিজিয়ো প্যাট্রিক ফারহার্ট নেমে পড়েছেন ভুবনেশ্বর কুমারকে নিয়ে। ম্যাঞ্চেস্টার মহারণে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বল করতে গিয়ে শুরুতেই হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পান ভুবি। ভেজা মাঠে বোলিং ক্রিজের জায়গায় পিছলে গিয়েই বিপত্তি হয়। সেই ম্যাচে আর বলই করতে পারেননি। তার পরে এই প্রথম তাঁকে সক্রিয় করার চেষ্টা শুরু হল। ফিজিয়োর কড়া নজরে ডান-হাতি সুইং বোলারকে দেখা গেল দৌড়নো শুরু করেছেন। একেবারেই সাবলীল মনে হল না, বরং পরিষ্কার বোঝাই গেল, অফিসে ফিরলেও বেশি কাজকর্মের বোঝা নিতে পারবেন না।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বহু জোড়া চোখ তখন আরও এক জনকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। কোহালিদের সকলকে মাঠে নেমে পড়তে দেখা গেলেও তিনি তখনও আসেননি। তিনি— বিজয় শঙ্কর। বুধবার প্র্যাক্টিসের শেষ দিকে যশপ্রীত বুমরার ইয়র্কার যে তাঁর বাঁ-পায়ের পাতায় আছড়ে পড়ে চোট-আঘাতের তালিকায় নতুন উদ্বেগ যোগ করেছে, তা একমাত্র আনন্দবাজারেই প্রকাশিত হয়েছিল বৃহস্পতিবার। সকালে সেই রিপোর্ট জানাজানি হয়ে প্রবল আগ্রহ তৈরি হয় শঙ্করকে নিয়ে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের কৌতূহলী চোখের সামনে কিছুক্ষণ পরে ড্রেসিংরুম থেকে উদয় হলেন তামিলনাড়ুর অলরাউন্ডার। কিন্তু কোহালিদের ফুটবল হুল্লোড়ের দিকে নয়, তিনি এগোলেন ফিজিয়োর ম্রিয়মান ফিটনেস পরীক্ষার দিকে।
দেখা গেল, বাঁ-পা টেনে টেনে হাঁটছেন শঙ্কর। গত কাল ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে টিম বাসে ওঠার সময় পায়ে জুতো ছিল না, চটি পরে হাঁটছিলেন। এ দিন জুতো পরেই মাঠে নামলেন, তবে খুব ইতিবাচক মেডিক্যাল বুলেটিন লেখার মতো কিছু দেখা যায়নি। ফিজিয়ো তাঁকেও দৌড় করানোর চেষ্টা করলেন কিন্তু শঙ্করের তখন যা অবস্থা, ‘রেস’ হলে ভুবিও তাঁকে হারিয়ে দেবেন।
সংশয়: বৃহস্পতিবার সাউদাম্পটনে ফিজিক্যাল ট্রেনিং করলেন শঙ্কর। তবে তাঁকে নিয়ে উদ্বেগ থাকছেই শিবিরে। এপি
এক-দু’বার ও ভাবেই বাঁ-পা টেনে টেনে দৌড়নোর চেষ্টা করলেন শঙ্কর। তার পরে দাঁড়িয়ে যেতে বাধ্য হলেন। তত ক্ষণে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, বুমরার ইয়র্কারে বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুলের উপর লাগা আঘাতকে খুব হাল্কা ভাবে নেওয়া যাবে না। শঙ্করকে এর পরে সারা দিনে ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং— কোনও রকম অনুশীলনেই অংশ নিতে দেখা যায়নি। নীরব দর্শক হয়েই তিনি কাটিয়ে দিলেন বেশির ভাগ সময়।
একেবারে শেষের দিকে এক পাশে সরে কয়েকটা বল করার চেষ্টা করলেন। তা-ও মাত্র কয়েক পা দৌড়ে। সেই সময়েও তাঁর চোখেমুখে যথেষ্ট অস্বস্তি ধরা পড়ছিল। দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, শঙ্করের চোট খুব ভয়ঙ্কর কিছু নয়। তা বলে শনিবার আফগানিস্তান ম্যাচেই তাঁকে খেলানো সম্ভব হবে কি না, জোর দিয়ে সেটাও কি বলা যাচ্ছে? এ দিন চোখের সামনেই তো দেখা গেল, স্বাভাবিক ভাবে হাঁটাচলাও করতে পারছেন না তিনি। কোথাও যেন একটা চোটের শনি লেগেছে ভারতীয় দলে। এ দিন শামির জোরালো শট গিয়ে লাগল বোলিং কোচ বি অরুণের পায়ে। অরুণকে দীর্ঘ ক্ষণ ধরে বরফ ঘষে যেতে হল পায়ে।
ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তদের একটা বড় অংশ অবশ্য প্রশ্ন তুলতে পারেন, বিজয় শঙ্কর আবার কবে থেকে কপিল দেব হলেন যে, তিনি খেলছেন না বলে রাতের ঘুম নষ্ট করতে হবে? অনেক যোগ্য বিকল্প তো হাতে এসে গিয়েছে— ঋষভ পন্থ। পরিষ্কার ওঁকে নামিয়ে দাও।
বৃহস্পতিবার সাউদাম্পটনে প্রাকৃতিক শোভায় ঘেরা প্র্যাক্টিস মাঠে দীনেশ কার্তিক আর পন্থকে একই সঙ্গে নেটে ব্যাট করতে পাঠালেন হেড কোচ রবি শাস্ত্রী। আর পাশে দাঁড়িয়ে দু’জনকেই সতর্ক চোখে জরিপ করতে থাকলেন।
দেখেশুনে মনে হচ্ছিল, প্র্যাক্টিস নয়, দু’জনের পরীক্ষা চলছে। যিনি বেশি মার্কস পাবেন, আফগানিস্তান ম্যাচে খেলার ব্যাপারে এগিয়ে থাকবেন। বিজয় শঙ্কর যদি সত্যিই না পারেন, তা হলে এই দু’জনের কাউকে খেলাতে হবে। পন্থ যে রকম স্ট্রোকের ফুলঝুরি দেখালেন প্র্যাক্টিসে আর শাস্ত্রীকেও যে ভাবে মাথা ঝাঁকাতে দেখা গেল, তার পরে তাঁর দাবি উপেক্ষা করা খুবই কঠিন হবে।
শাস্ত্রীকে এক বার দেখা গেল, প্র্যাক্টিসের মাঝে পন্থকে ডেকে পরামর্শও দিচ্ছেন। দূর থেকে ঠিক শোনা গেল না, কী বলছেন। তবে ভঙ্গি দেখে মনে হল, বোঝাতে চাইছেন, শট নেওয়ার সময় মাথা যেন না ওঠে। বাধ্য ছাত্রের মতো তা শুনতে থাকলেন পন্থ। এর পরেও কার্তিক-সহ সকলে চলে যাওয়ার পরে তিনি একা একা দীর্ঘক্ষণ ব্যাটিং অনুশীলন করে গেলেন ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গারকে সঙ্গে নিয়ে। আর ব্যাট করার ফাঁকেই সারাক্ষণ কিচিরমিচির করে কথা বলে যেতে থাকলেন। ঠিক যে ভাবে অস্ট্রেলিয়ায় টিম পেনদের কান ঝালাপালা করে দিতেন উইকেটের পিছন থেকে।
শঙ্কর সুস্থ হয়ে উঠবেন না কি আফগানিস্তান ম্যাচে তাঁর জায়গায় নতুন কেউ আসবেন? এলে কে আসবেন? কার্তিক না পন্থ? প্রথম একাদশ নিয়ে ছবিটা পরিষ্কার হতে আরও এক দিন সময় লাগবে। তবে এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, জনতার ভোট নিলে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে প্রথম একাদশে ঢুকবেন ঋষভ পন্থ! এই মুহূর্তে কোহালি, ধোনি, রোহিতের পরে সব চেয়ে জনপ্রিয় এবং সর্বাধিক চর্চিত ভারতীয় ক্রিকেটার তিনিই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy