শেষ ওভারে শামির জাদু। হ্যাটট্রিক করলেন তিনি। ছবি: পিটিআই।
সাউদাম্পটনে বোলাররা বিরাট কোহালিকে এনে দিলেন জয়। অন্য ম্যাচগুলোয় ‘টিম ইন্ডিয়া’র ব্যাটসম্যানরা পাহাড়প্রমাণ রান করেছিলেন। ফলে বোলারদের কাজ হয়ে গিয়েছিল সহজ। শনিবার ভারতের ব্যাটসম্যানরা বড় রানের বোঝা চাপাতে পারেননি আফগানিস্তানের উপরে। ফলে চাপটা ছিল বোলারদের উপরেই। বল করতে নেমে যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামি, চহালরা হতাশ করেননি কোহালিকে।
শেষ ওভারে জেতার জন্য আফগানদের দরকার ছিল ১৬ রান। কোহালি বল তুলে দেন শামির হাতে। বিপজ্জনক মহম্মদ নবি (৫২), আফতাব আলম (০) এবং মুজিব উর রহমানকে (০) পর পর তিন বলে ফিরিয়ে দিয়ে ভারতকে জয় এনে দেন শামি। ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপে ভারতের চেতন শর্মা হ্যাটট্রিক করেছিলেন। তার পরে সাকলাইন মুস্তাক, চামিন্ডা ভাস, ব্রেট লি, লাসিথ মালিঙ্গা-সহ অনেকেই হ্যাটট্রিক করেছেন বিশ্বকাপে। চলতি বিশ্বকাপের প্রথম হ্যাটট্রিকটি করলেন বাংলার পেসার। তাঁর শেষ ওভারে দাপটের জন্যই আফগানিস্তান শেষ হয়ে গেল ২১৩ রানে। কোহালির মুখে খেলা করল হাজার ওয়াটের আলো।
অথচ ভারতের রান তাড়া করতে নেমে একটা সময়ে জয়ের গন্ধ পেতে শুরু করেছিল আফগানিস্তান। ভারতীয় সমর্থকদের বুক তখন দুরুদুরু। রহমত শাহ ও শাহিদি শুরুর ধাক্কা সামলে ধীরে ধীরে ইনিংস গড়ছিলেন। সেই সময়ে উইকেটের দরকার ছিল কোহালির। বুমরা ঠিক সময়ে দু’ জনকে তুলে ভারতকে ম্যাচে ফেরান। নবি ঠাণ্ডা মাথায় আফগানিস্তানকে জয়ের লক্ষ্যে নিয়ে যাচ্ছিলেন। অন্য প্রান্ত থেকে তাঁর সতীর্থরা ফিরে গেলেও নবির মধ্যে টেনশনের লেশমাত্র ছিল না। কিন্তু, দিনটা যে তাঁর ছিল না।
বিশ্বকাপে এ নিয়ে ছ’টি ম্যাচই হারল আফগানরা। সময়টা একেবারেই ভাল যাচ্ছে না তাঁদের। ইংল্যান্ডের কাছে হারের পরে সাজঘরের কথা বাইরে বেরিয়ে এসেছে। কোচ ফিল সিমন্স বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বলেছেন, বিশ্বকাপ চলছে। তাই তিনি চুপ রয়েছেন। বিশ্বকাপের পরে তিনি আর আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে চুক্তি বাড়াবেন না। ভিতরের অনেক কথাও তিনি ফাঁস করে দেবেন। এরকম পরিস্থিতিতে খেলতে নেমে ভারতকে ২২৪ রানে (৮ উইকেটে) আটকে রাখল আফগানিস্তান।
শনিবার টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন বিরাট কোহালি। উদ্দেশ্য ছিল একটাই। প্রথমে ব্যাট করে রানের পাহাড় তুলবে টিম ইন্ডিয়া। তার পরে যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামিরা দ্রুত মুড়িয়ে দেবেন আফগানিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপকে। কিন্তু, যা ভাবা যায়, তা হয় না। আফগান-বোলাররা ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপের পরীক্ষা নিলেন। পিচ মন্থর হওয়ায় তাঁদের কাজটা সহজ হয়ে গেল। বল পড়ে ঠিক মতো ব্যাটে আসছিল না। শট খেলতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মতো মারকুটে ব্যাটসম্যানও পারলেন না দ্রুতগতিতে রান তুলতে। অথচ বিরাট কোহালি ফেরার পরে সবাই তাকিয়ে ছিলেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়কের দিকে। কোহালি যখন আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন, তখন ভারতের রান চার উইকেটে ১৩৫ রান (৩০.৩ ওভার)। ধোনি নিজের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলতে পারলেন না। প্রচুর বল নষ্ট করলেন। শেষে রশিদ খানকে মারতে গিয়ে স্টাম্পড হলেন। ৫২ বলে ২৮ রান করলেন মাহি। আট বছর পরে ফের স্টাম্পড হলেন ধোনি।
কেদার যাদবও শুরুর দিকে বল নষ্ট করেন। তিনি ৬৮ বলে করেন ৫২ রান। হার্দিক পাণ্ড্য এ দিন কাজের কাজ করতে পারলেন না। মাত্র ৭ রান করে ফিরতে হল ভারতের অলরাউন্ডারকে।
আরও পড়ুন: বিশ্বকাপ জয়ের দৌড়ে সেরা ভারতই
আরও পড়ুন: ইংল্যান্ডের মতো নিষ্প্রাণ উইকেট দেখেননি বুমরা
রোহিত শর্মা চলতি বিশ্বকাপে স্বপ্নের ফর্মে রয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করা হয়ে গিয়েছে তাঁর। এ দিন মুজিব উর রহমানের বলটাই ঠিক মতো বুঝতে পারলেন না। বলের লাইন মিস করে বোল্ড হলেন মুম্বইকর। ভারতের রান তখন এক উইকেটে সাত। রোহিত টিকলেন মাত্র ১০ বল। পিচের চরিত্র বুঝতে পেরে আফগান অধিনায়ক গুলবাদিন নাইব বোলিং ওপেন করান মুজিবকে দিয়ে। রোহিত দ্রুত ফেরায় কোহালি ইনিংস গড়ার কাজ শুরু করেন লোকেশ রাহুলের সঙ্গে। রাহুল ৩০ রান করে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে আউট হন। রাহুলের সমস্যা এটাই। তিনি প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান। কিন্তু ক্রিজে জমে যাওয়ার পরে উইকেট ছুড়ে দেন তিনি। কোহালি ৪৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন। কিন্তু, কোহালির ব্যাটে যখন বড় রানের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে, তখনই ছন্দপতন। নবির বলটা হঠাৎই লাফিয়ে ওঠে। কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে ধরা পড়েন কোহালি (৬৭)। কোহালি যতক্ষণ ক্রিজে ছিলেন, ততক্ষণ রান তোলার গতি ঠিকই ছিল। তিনি ফিরে যেতেই রান তোলা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে গেল।
ভারত অধিনায়কের সাউদাম্পটনে নতুন কীর্তিও গড়া হল না। রশিদ খানদের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে নামার আগে ২০ হাজার রানে পৌঁছতে ১০৪ রান দরকার ছিল রান-মেশিন কোহালির। ছন্দেই ছিলেন কোহালি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্রুততম কুড়ি হাজার রানের মাইলফলক ছোঁয়ার দিকে এগোচ্ছিলেন ভারত অধিনায়ক। কিন্তু, নবি তাঁকে ফিরিয়ে দেওয়ায় সাউদাম্পটনে রেকর্ড গড়া হল না।
বিজয় শঙ্কর নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারলেন না। বিশ্বকাপের পরের ম্যাচগুলোয় কি কম্বিনেশন বদলাবেন কোহালি? চার নম্বরের জন্য ভারত অধিনায়ক অন্য কারোর কথা ভাবতেই পারেন। রহমত শাহের বলে এলবিডব্লিউ হন শঙ্কর (২৯)। মুজিব উর রহমান, মহম্মদ নবি, রশিদ খান ও রহমত শাহ ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের বেগ দিলেন। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে রশিদ খান ৯ ওভারে ১১০ রান দিয়েছিলেন। এ দিন ১০ ওভার হাত ঘুরিয়ে আফগান স্পিনার দিলেন মাত্র ৩৮ রান। ধোনির উইকেট নেন তিনি। দারুণ ভাবে ফিরে এলেন। কিন্তু, শেষ হাসি আর হাসতে পারলেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy