আলোড়ন: ভারত-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের সময় ভারত বিরোধী ব্যানার নিয়ে এই ভাবে হেডিংলে মাঠের উপরে উড়েছে সেই বিমান। যা নিয়ে তুলকালাম। ফাইল চিত্র
হেডিংলের আকাশে কাশ্মীর নিয়ে ‘আপত্তিকর’ বার্তা বহনকারী বিমান ওড়ার ঘটনা নিয়ে লন্ডনে ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করল বিরাট কোহালিদের ক্রিকেট বোর্ড। পাশাপাশি, আইসিসি-কেও কড়া চিঠি দিয়ে তারা জানিয়েছে, খেলার মাঠে রাজনৈতিক বার্তা বহন করার যে-নিষেধাজ্ঞা তারা জারি করেছে, তা রক্ষা করার দায়িত্বও তাদেরই পালন করতে হবে।
ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা এর আগে উইকেটকিপিং গ্লাভসে সেনাবাহিনীর বিশেষ চিহ্ন লাগিয়ে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মাঠে নামা আটকে দিয়েছিল। রবিবারেই ধোনি আটত্রিশে পা দিলেন। জন্মদিনে তাঁর সেই দস্তানা ফের আলোচনায় উঠে এল। বোর্ড থেকে আইসিসি-কে বলা হয়েছে, ‘‘ধোনির গ্লাভস ব্যবহার নিয়ে নিষেধাজ্ঞা আমরা সঙ্গে সঙ্গে মেনে নিলাম। অথচ আমরা অভিযোগ জানানোর পরেও হেডিংলের আকাশে আপত্তিকর স্লোগান নিয়ে উড়তে থাকা বিমান কে বা কারা উড়িয়েছিল, তা নিয়ে কোনও খবরই পাওয়া গেল না!’’
হেডিংলের আকাশে কাশ্মীর নিয়ে বার্তা বহনকারী বিমান সম্পর্কে ইংল্যান্ডের সময় রবিবার দুপুর পর্যন্ত কোনও খবর পাওয়া যায়নি। সেই কারণেই সম্ভবত আইসিসি-র প্রশাসনিক দক্ষতার উপরে খুব ভরসা না-করে লন্ডনে ভারতীয় হাইকমিশনকে পুরো ঘটনা জানিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। হাইকমিশনের মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকারকে অবহিত করানোর ব্যবস্থা হয়েছে। ব্রিটিশ সরকারের কাছে ভারতীয় বোর্ড তাদের এই বার্তাই পৌঁছে দিতে চাইছে যে, বিশ্বকাপ ম্যাচ চলাকালীন এই ধরনের রাজনৈতিক উস্কানিমূলক ব্যানার যেন কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা না-হয়। তা বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনে সরকার থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
শনিবার ম্যাচ চলাকালীন চার বার একটি বিমানকে চক্কর কাটতে দেখা যায় হেডিংলে মাঠের মাথায়। কাশ্মীর নিয়ে পাক মনোভাবপুষ্ট ব্যানারের পাশাপাশি ভারত-বিরোধী এবং ভারতের প্রতি হুঁশিয়ারসূচক বার্তাও ওড়ানো হচ্ছিল বিমান থেকে। ভারতীয় বোর্ড শনিবারেই মৌখিক ভাবে কথা বলার পাশাপাশি এই নিয়ে একটি কড়া চিঠি লিখেছে আইসিসি-কে। তাতে জোরালো ভাবে জানানো হয়েছে, নিরাপত্তার হাল দেখেও বোর্ড চিন্তিত। একটি বিমান কী ভাবে নিরাপত্তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বারবার মাঠের উপরের আকাশে উদয় হচ্ছিল? ক্রিকেটার বা দর্শকদের ক্ষতি করার ইচ্ছাও যদি কারও থাকে, তা হলে কী ভাবে সেটা আটকানো হবে?
বোর্ড থেকে আইসিসি-র কাছে পাঠানো চিঠিতে শুধু ক্রিকেটার নয়, ভারতীয় সমর্থকদের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। চিঠিতে বোর্ড লিখেছে, ‘‘হেডিংলেতে পুরো স্টেডিয়াম প্রায় ভরিয়ে দিয়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট-ভক্তেরাই। মাথার উপরে একটি বিমান ভারত-বিরোধী স্লোগান নিয়ে চক্কর কাটছে, সেটা দেখতে নিশ্চয়ই তাঁরা টিকিট কেটে মাঠে আসেননি। এই ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ভারতীয় দর্শকদের নিরাপত্তা নিয়েও আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। আইসিসি-কে দর্শক-সুরক্ষার কথাও ভাবতে হবে।’’
ঘটনা হচ্ছে, এখন আইসিসি-প্রধান এক জন ভারতীয়— শশাঙ্ক মনোহর। পেশায় আইনজীবী এবং বিদর্ভ ক্রিকেট সংস্থার প্রাক্তন শীর্ষ কর্তা বোর্ড-প্রধানের ভূমিকাও পালন করেছেন। আশ্চর্য হলেও সত্যি যে, মনোহর আইসিসি-প্রধান থাকার সময়ে নিয়ামক সংস্থার সঙ্গে একেবারেই ভাল সম্পর্ক যাচ্ছে না ভারতীয় বোর্ডের। ধোনির গ্লাভস পাল্টানোর নির্দেশও খুব প্রসন্ন মনে মেনে নেয়নি বোর্ড। যদিও বিশ্বকাপ চলার মধ্যে দস্তানা নিয়ে রেষারেষি বাড়াতে চায়নি টিম। তাতে ক্রিকেট থেকে মন সরে যেতে পারত।
কিন্তু হেডিংলের বার্তাবাহী বিমান নিয়ে কোনও রকম সুর নরম করতে রাজি নয় বোর্ড। আইসিসি থেকে ভারতীয় বোর্ডকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, ম্যাঞ্চেস্টারে তাদের সেমিফাইনাল এবং লর্ডসে ফাইনালের সময় মাঠের উপর দিয়ে বিমান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রাখা হবে। ভারতের সেমিফাইনাল এবং যদি কোহালিরা ফাইনালে ওঠেন, সব বিমানের গতিপথ পাল্টে দেওয়া হবে। যাতে কোনও ভাবেই আর কেউ চার্টার্ড বিমান ভাড়া করে এমন ঘটনা ঘটাতে না-পারে।
এ দিকে ইয়র্কশায়ারের স্থানীয়দের কাছ থেকে খোঁজ পাওয়া গেল, খুব কম খরচেই বিমান ভাড়া পাওয়া যায়। মাত্র ২০০ পাউন্ড (১৭,১৪২ টাকা) দিয়েও বিমান ভাড়া করে ফেলা যায়। তার পরে ব্র্যাডফোর্ড-লিডস বিমানবন্দর থেকে আকাশে উড়ে গেলেই হল। এই বিমানবন্দর হেডিংলে মাঠের খুব কাছে। শনিবার খেলা চলাকালীন অনেক বারই যাত্রিবাহী অন্যান্য বিমান উড়ে যেতে দেখা গিয়েছ। তবে ব্যানার প্রদর্শনীর জন্য উড়ানের ব্যবস্থা করতে খরচ একটু বেশি হতে পারে বলে অনুমান।
আইসিসি জানিয়েছে, পশ্চিম ইয়র্কশায়ার পুলিশ (যাদের অধীনে হেডিংলে মাঠ) প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, মাঠের উপরে বার্তা বহনকারী বিমান উড়তে দেবে না। পাকিস্তান-আফগানিস্তান ম্যাচে বিমান ওড়ার পরেই তারা নাকি এই প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু শনিবার যখন প্রথম বার ইংল্যান্ডের সময় ১১টা নাগাদ বিমান ওড়ে, তখনই আইসিসি-র পক্ষ থেকে ঘটনার কথা জানানো হয়েছিল পুলিশের কাছে। তার পরেও সারা দিনে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
আইসিসি বলছে, পশ্চিম ইয়র্কশায়ার পুলিশ প্রতিশ্রুতি না-রাখায় তারা অত্যন্ত হতাশ। আবার স্থানীয়দের পর্যবেক্ষণ, লিডসের কাছে যেখানে ব্র্যাডফোর্ড বিমানবন্দরটি অবস্থিত, সেখানে পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে আসা মানুষের সংখ্যা খুব বেশি। কোহালিরা যেখানে সেমিফাইনাল খেলবেন, সেই ম্যাঞ্চেস্টারেও পাক বংশোদ্ভূতেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এখানেই গত ১৬ জুন ভারত-পাকিস্তান বিশ্বকাপের ধুন্ধুমার ম্যাচ হয়েছে। এমন তথ্যও শোনা গেল যে, সেই ম্যাচেও নাকি বিমান উড়িয়ে এমন কাণ্ড ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল। স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতা এবং আইসিসি-র তৎপরতায় তা আটকানো গিয়েছিল। ভারত-শ্রীলঙ্কার জায়গায় ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে এমন স্পর্শকাতর কিছু ঘটলে দু’দলের দর্শকদের শান্ত রাখা যেত কি না, প্রশ্ন থেকেই যায়।
আইসিসি যদিও আশ্বাস দিচ্ছে, ম্যাঞ্চেস্টারের সেমিফাইনালের নিরাপত্তার ব্যাপারে চূড়ান্ত সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। এখানে মঙ্গলবার বিমান তো দূরের কথা, মাছিও গলতে দেওয়া হবে না। শুনে নাকি ভারতীয় বোর্ড বলেছে, ‘‘বেশ। সময় এলেই তো দেখা যাবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy