উৎসব: গোলদাতা পাপার কাঁধে সতীর্থ গঞ্জালেস। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
খেলা শেষ হতেই গ্যালারি থেকে ঝুলতে শুরু করল বড়সড় এক টিফো। যেখানে মোহনবাগান কোচ কিবু ভিকুনার ছবি দিয়ে লেখা, ‘‘আমাদের শিল্পী, আমাদের গডফাদার।’’ সঙ্গে এ দিনের জয়সূচক গোলদাতা পাপা বাবাকর জিয়োহারার নামে স্লোগান। যা দেখে ভিআইপি গ্যালারিতে বসা এক মোহনবাগান সমর্থক বাবার উপর লেখা ছড়ার পোস্টার তুলে ধরলেন। সেখানে লেখা, ‘‘নাম করা ফুটবলার/ সেনেগালে ধাম/আটকাতে বিপক্ষের ঝরছে প্রচুর ঘাম/আই লিগে কিবুর দলে ভরসা দিচ্ছেন যাঁরা/তাঁদেরই একজন/পাপা বাবাকর জিয়োহারা।’’
রবিবার কল্যাণীতে ম্যাচটা ছিল আই লিগের শীর্ষে থাকা দল মোহনবাগান ও শীর্ষে থাকা গোলদাতা দিপান্দা ডিকার দলের লড়াই। সেই দ্বৈরথে মোহনবাগানকে জেতাল পাপার হেডে করা গোল। আর সারা ম্যাচে মোহনবাগান রক্ষণে বোতলবন্দি হয়ে হতাশ ডিকা ও তাঁর সতীর্থেরা।
১১ ম্যাচে কিবুর দলের পয়েন্ট এখন ২৬। তাদের চেয়ে ৯ পয়েন্ট পিছনে লিগে দ্বিতীয় স্থানে থাকা পঞ্জাব এফসি। ১১ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ১৭। পঞ্জাব কোচ ইয়ান ল বলেই দিলেন, ‘‘মোহনবাগান অনেকটাএগিয়ে গেল। এই ছন্দে খেললে ওরাই চ্যাম্পিয়ন হবে। বাকি নয় ম্যাচে দেখতে হবে ওরা পয়েন্ট নষ্ট করছে কি না।’’
যা শুনে কিবু নিস্পৃহ ভাবে বলেন, ‘’২৬ পয়েন্টে কেউ চ্যাম্পিয়ন হয় নাকি? বাকি নয় ম্যাচও এ রকম দাপিয়ে খেলে জিততে হবে।’’
পঞ্জাবের বিরুদ্ধে এ দিন সত্যিই দাপিয়ে খেলল মোহনবাগান। প্রথমার্ধে সুহের ভি পির হেড বিপক্ষের ড্যানিলো গোললাইন থেকে না বাঁচালে, আর বেইতিয়া দ্বিতীয়ার্ধে একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে গোলকিপারকে পরাস্ত করে বল গোলে রাখতে পারলে ব্যবধান আরও বাড়তে পারত। বেইতিয়ার ফ্রি কিক থেকে ফ্রান মোরান্তের গোল রেফারি বাতিল করেন। যা নিয়ে বিরক্ত কিবু।
লিগে মোহনবাগানের শীর্ষে থাকার অন্যতম কারণ অবশ্যই পাপার ‘গোলমেশিন’ হয়ে ওঠা। সালভা চামোরো গোলের সামনে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলতেন। কিবু তাই নতুন উইন্ডোতে নিয়ে এসেছেন সেনেগালের স্ট্রাইকার পাপাকে। আর পাপা আসতেই ঝলমল করছে কিবুর মোহনবাগান।
লা লিগায় সেভিয়ার জার্সি গায়ে পাপার গোল রয়েছে আতলেতিকো দে মাদ্রিদের বিরুদ্ধে। সাদিয়ো মানের এই ভক্ত পাপা মোহনবাগানে তাঁর প্রথম তিন ম্যাচে গোল পাননি। তার পরে বাকি চার ম্যাচে পাঁচ গোল। চার ম্যাচে সেরা। তাঁর হেড, স্পট জাম্প, প্রথম টাচ দুর্দান্ত। পায়ে জোরালো শট আছে। এ দিনও ৪২ মিনিটে ধনচন্দ্রের থ্রোয়ে মাথা ছুঁইয়ে গোল করে তা উৎসর্গ করলেন নিজের ১৩ বছরের ছেলে আমোদুউ-কে।
পঞ্জাবকে হারাতে কিবু এ দিন ডিকাকে জ়োনাল মার্কিং ও ডাবল কভারিংয়ে রেখেছিলেন। ডিকা তাতে হাসফাঁস করলেন। বিপক্ষে আনোয়ার, ড্যানিলো ও কিংসলের মতো স্লথ ডিফেন্ডার রয়েছে বলে দ্রুত প্রতি-আক্রমণ বিপক্ষ বক্সে তুলে এনেছিলেন। তিন, পঞ্জাব মাঝমাঠে পাঁচজনকে রেখে ৪-১-৪-১ ছকে খেলছিল। তাই এ দিন বেইতিয়ারা আক্রমণের সময়ে ৩-৫-২ ছকে গেলেও রক্ষণের সময়ে ৪-৫-১ ছকে এসে মাঝমাঠের দখল হারাননি। সঙ্গে বিপক্ষের পায়ে বল গেলেই তাড়া করার নীতি। আর এতেই কিবুর দল তিন পয়েন্ট নিয়ে লিগ শীর্ষে থেকে মাঠ ছাড়ল হাসতে হাসতে।
স্টেডিয়াম ছাড়ার সময়ে কিবুর কাছে উঠল ‘গডফাদার’ টিফোর প্রসঙ্গ। তাঁর জবাব, ‘‘দলের উপরে কেউ নয়। ফুটবলে ব্যক্তিগত পুরস্কার বলে কিছু হয় না। তাই এ দিন খেলার শুরুতে মাঠে গত মাসের সেরা কোচের পুরস্কার নেওয়ার সময়ে রঞ্জন-সহ সব সহকারী, সাহিল, ফ্রানদেরও ডেকেছিলাম। কারণ সাফল্য ওদের জন্যই।’’
মোহনবাগানের সাফল্যের পিছনে দলের এই একাত্মতাও একটা বড় কারণ।
রঞ্জিতের অভব্যতা: কল্যাণীতে ম্যাচের পরে ফের অভব্যতা করলেন পঞ্জাব এফসির অন্যতম কর্ণধার রঞ্জিত বাজাজ। ম্যাচের পরে তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করে তোপ দাগেন ম্যাচ কমিশনার বালাসুব্রহ্মনিয়ম বিরাপ্পার বিরুদ্ধে। তাঁর অভিযোগ, এই ম্যাচ কমিশনার গত বছর তাঁকে ম্যাচ গড়াপেটার অভিযুক্ত করেছিলেন। পরে সেই অভিযোগ টেকেনি। বিরাপ্পার বিরুদ্ধে ফেডারেশনে অভিযোগ সত্ত্বেও কেন তাঁকে ফের পঞ্জাবের ম্যাচ দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রঞ্জিত। অভিযোগ করেন, ম্যাচের সময়ে বিরাপ্পা মাঠের বাইরে চলে গিয়েছিলেন।
মোহনবাগান: শঙ্কর রায়, আশুতোষ মেহতা, ফ্রান মোরান্তে, ধনচন্দ্র সিংহ, ফ্রান গঞ্জালেস, শেখ সাহিল, জোসেবা বেইতিয়া, নংদোম্বা নওরেম (ব্রিটো পি এম), কোমরন তুর্সুনভ (শিল্টন ডি’সিলভা), সুহের ভি পি (রোমারিয়ো জেসুরাজ), পাপা বাবাকর জিয়োহারা।
পঞ্জাব এফসি: কিরণ লিম্বু, নির্মল ছেত্রী, আনোয়ার আলি, কিংসলে ওবুমনেমে (ভালসি তেস্কেইরা), স্যামুয়েল শাদাপ, ড্যানিলো অগুস্তো, সঞ্জু প্রধান, কেভিন লোবো (গিরিক খোসলা), সের্খিয়ো বারবোজ়া, থৈবা সিংহ (গগনদীপ), দিপান্দা ডিকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy