ব্রাজিল ২(নেইমার, কোস্তা) : পেরু ১(কুয়েভাস)
সোমবার রাতে খুব ভয়ে ভয়ে টিভি চালিয়েছিলাম। শেষ বার যখন ব্রাজিলকে দেখেছিলাম খুব খারাপ একটা অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছিল। বিশ্বাসই করতে পারিনি জার্মানির বিরুদ্ধে এমন ভাবে অসহায় আত্মসমর্পণ করবে ব্রাজিল। পেরু কোনও জার্মানি নয়। দুই দলের ফুটবলারদের কোনও তুলনাই হয় না। তবুও ওই বিশাল ধাক্কার একটা রেশ তো রয়েই যায়। সেটা কতটা কাটিয়ে উঠেছে ব্রাজিল দেখতেই মুখিয়ে ছিলাম।
নব্বই মিনিট শেষে ব্রাজিলকে দেখে ভাল লাগল। ঠান্ডা মাথায়, ধৈর্য ধরে কেমন ভাবে ম্যাচ জিততে হয় সেটা দেখিয়ে দিলেন দুঙ্গা। প্রমাণ হল জার্মানি ম্যাচের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়েছে ব্রাজিল। কোপা আমেরিকা আর বিশ্বকাপ সম্পূর্ণ আলাদা। তবে এটা সব সময় বিশ্বাস করি ব্রাজিল কোনও পাড়ার টুর্নামেন্ট খেলতে নামলেও জেতার জন্যই নামবে।
জার্মানি ম্যাচের দিন শুরু থেকেই কেমন অধৈর্য হয়ে পড়েছিল ব্রাজিল। ডিফেন্স থেকে মাঝমাঠ সবাই অনবরত ওভারল্যাপ করছিল। ফাইনাল ট্যাকলে যাচ্ছিল। প্রথম কয়েক মিনিটেই ব্রাজিল মরিয়া হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। যেটা সাধারণত কোনও দল পিছিয়ে থাকলে শেষ কয়েক মিনিটে দেখা যায়।
পেরুর বিরুদ্ধে ঠিক উল্টোটা দেখলাম। দুই সেন্টার ব্যাক দাভিদ লুইজ ও মিরান্ডা গোটা ম্যাচেই খুব ডিপ খেলেছে। মনে হয় দুঙ্গা হয়তো বলেই দিয়েছিলেন পেরু যতই দুর্বল দল হোক, কোনও ঝুঁকি নেওয়ার দরকার নেই। তাই শান্ত একটা ব্রাজিল রক্ষণ চোখে পড়ল। যারা অহেতুক ওভারল্যাপে গেল না। ‘নো ননসেন্স ডিফেন্স’ করল। অর্থাত্ বল পেলেই উড়িয়ে দাও। ফাইনাল ট্যাকলে বেশি গেল না। শুরুতে অবশ্য রক্ষণের দোষেই গোলটা খেতে হল ব্রাজিলকে। গোলরক্ষক জেফারসন হয়তো ভুল পাসটা বাড়াল কিন্তু দাভিদ লুইজের উচিত ছিল বলটা থ্রো-ইন বা কর্নার করে দেওয়া। ওই একটা ভুল ছাড়া বাকি ম্যাচটা খুব মনোযোগ দিয়ে খেলেছে ব্রাজিল ডিফেন্স। থিয়াগো সিলভা না থাকলেও মিরান্ডাকে ভাল লাগল। মার্সেলোকে সরিয়ে ফিলিপে লুইসকে নেওয়াটাও কাজে এলো। লুইস ওভারল্যাপ করা ছাড়াও রক্ষণে খুব ভাল। দানি আলভেজকে অবশেষে দেখলাম দেশের হয়ে ক্লাবের ফর্ম দেখাতে। নেইমার গোলটা শোধ করল ঠিকই। তবে যাবতীয় কৃতিত্ব আলভেজের। কী অসাধারণ ক্রসটা বাড়াল। বলটায় লেখাই ছিল, ‘নাও আমায় জালে ঢোকাও’।
সে দিনের দাভিদ লুইজের মতো এ দিনের দাভিদ লুইজ খেলেনি। ও বরাবর খুব ছটফটে প্লেয়ার। সেন্টার ব্যাক হয়েও ওকে কেউ নীচে ধরে রাখতে পারে না। জার্মানির বিরুদ্ধে সারাক্ষণ উপরে উঠে যাচ্ছিল। দেখেনি আশেপাশে কেউ কভার দিচ্ছে কি না। তবে পেরুর বিরুদ্ধে বাধ্য সেন্টার ব্যাকের মতোই খেলল। শুরুতে একটু নার্ভাস হয়ে পড়লেও বেসিক জিনিসগুলো ঠিকঠাক করেছে।
ম্যাচ যত এগিয়েছে, সেই চেনা ছন্দই দেখা গিয়েছে ব্রাজিলের খেলায়। ছোট ছোট পাস। দ্রুত মুভমেন্ট। বেশি সময় না নেওয়া। এটাই তো ট্রেডমার্ক ব্রাজিল। ওরা পাসিং ফুটবলের মধ্যে অদ্ভূত একটা গতি আনতে পারে। জার্মানির দিনে ব্রাজিলের হারের পিছনে আর এক বড় কারণ ছিল লুই গুস্তাভো আর ফার্নান্দিনহো। ওরা নাকি ডাবল পিভটে খেলছিল। সারা ম্যাচে কোনও ডিফেন্সিভ কভার দিতে পারেনি। আক্রমণেও বেশি সাহায্য করতে পারেনি। ৪-২-৩-১ খেললে পিভট পজিশনটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। দুঙ্গাও সেই জিনিসটা বুঝেছেন। পেরুর বিরুদ্ধে দুঙ্গার ডাবল পিভটে ফার্নান্দিনহো অনেক শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে খেলেছে। গুস্তাভো না থাকাটাও শাপে বর হয়েছে। ওর জায়গায় আসা ফ্রেডকে অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য দেখিয়েছে। ভাল পাস দিতে পারে। শক্তি আছে। অফ দ্য স্ট্রাইকার খেলেও ডিফেন্সকেও কভার দিতে পারে।
সবাইকে এক দিকে রেখেও বলব জয়টা কিন্তু সেই নেইমারই এনে দিল। কী দারুণ উন্নতি করেছে। যেমন বল নিয়ে দক্ষ। তেমন বল ছাড়া। গতিতে ও যে কাউকে টেক্কা দিয়ে যাবে। আবার ওর মুভমেন্ট ধরাও খুব মুশকিল। বলে বলে ডিফেন্ডারদের কাটাল। আরও বেশি গোল পেতে পারত। আগের থেকে এখন অনেক বেশি ওয়ার্কলোড নিতে শিখেছে। ক্রমাগত উপরনীচ করল। প্রতি আক্রমণ শুরু করা থেকে ফরোয়ার্ডে সুযোগ তৈরি, সব কিছুই করল নেইমার। ডগলাস কোস্তা জয়সূচক গোলটা করলেও অতগুলো পেরু ফুটবলারের মধ্যে ও রকম দুর্দান্ত পাস নেইমারের মতো ফুটবলাররাই বাড়াতে পারে।
প্রথম হার্ডল ব্রাজিল টপকে গেলেও পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে ওদের একশোয় আমি পঁচাত্তর দেব। আশা করছি বাকি পঁচিশ নম্বর খুব তাড়াতাড়ি ওরা তুলে নেবে।
হার কলম্বিয়ার
কোপা আমেরিকার প্রথম ম্যাচেই ধাক্কা খেল কলম্বিয়া। ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে ০-১ হারল হোসে পেকারম্যানের দল। হামেস রদ্রিগেজ, রাদামেল ফালকাওর মতো ফুটবলারদের রেখে তারকাখোচিত প্রথম একাদশ সাজান কলম্বিয়া কোচ। তাতেও শেষরক্ষা হল না। দ্বিতীয়ার্ধে হোসে রন্ডনের করা একমাত্র গোলে হারতে হল কলম্বিয়া-কে। ম্যাচ শেষে আবার কলম্বিয়া কোচ হোসে পেকারম্যান স্বীকার করেন দল ছন্দ হারায়। ‘‘খুব খারাপ খেলেছে দল। পুরো ম্যাচটায় কোনও ছন্দে ছিল না দলে,’’ বলছেন পেকারম্যান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy