হতাশ জোকোভিচ। ছবি: রয়টার্স
অভিমান? না রাগ?
চরম পেশাদারিত্বের যুগে কোনওটাই যে প্রকাশ করা যায় না। অন্তত পেশার জগতে। মঙ্গলবার মাঝ রাতে রাফায়েল নাদালের কাছে হেরে সেটাই করলেন নোভাক জোকোভিচ। দর্শকদের অভিবাদন না নিয়ে ম্যাচ হারার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগ-পত্তর গুটিয়ে সটান কোর্ট ছেড়ে বেরিয়ে যান। এক মিনিটও লাগেনি কোর্ট ছাড়তে।
১৩ বারের রোলাঁ গারো চ্যাম্পিয়ন নাদাল বরাবরই ফরাসিদের নয়নের মণি। অনন্ত কাল ধরে তিনি খেলে যান, ফরাসিদের এ চিরন্তন আব্দার। তাঁর বিরুদ্ধে যিনিই লাল মাটিতে নামেন, তাঁকে ফরাসিদের না-পসন্দের বোঝাটা ঘাড়ে করে নিয়ে নামতে হয়। মঙ্গলবার জোকোভিচও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। লকার রুম থেকে বেরিয়ে কোর্টে নামার সময় থেকে শুরু। সেই যে তাঁকে কান ফাটানো আওয়াজ, টিটকিরি দেওয়া আরম্ভ হয়েছিল, নাদাল এরপর সুরকির কোর্টে যত নাদালোচিত হয়েছেন, সেই আওয়াজ তত জোরালো হয়েছে।
কিন্তু জোকোভিচ যে বিশ্বের এক নম্বর। এমন চিৎকার, টিটকিরি তিনি সহ্য করবেন কেন? ম্যাচ শেষে তাই দর্শকদের দিকে এক বারও হাত নাড়লেন না। তাকালেন না। সটান কোর্ট ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। কিন্তু এটা কি উচিত? প্রশ্ন উঠছে তাঁর এমন ব্যবহার নিয়ে। চর্চায় জোকোভিচের মহাপ্রস্থান। অনেকের মতে ম্যাচ হেরে জোকোভিচের এমন আচরণ ঠিক নয়।
করোনার টিকা না নেওয়ায় অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে খেলার সুযোগ পাননি জোকোভিচ। ফরাসি ওপেন জেতার জন্য মরিয়া ছিলেন তিনি। কোয়ার্টার ফাইনালে তাঁর সামনে ছিলেন নাদাল। গ্র্যান্ড স্ল্যামের সংখ্যায় যিনি জোকোভিচের থেকে এক ধাপ এগিয়ে। ফরাসি ওপেন মানেই নাদালের সাম্রাজ্য। সেখানেই নাদালকে হারিয়ে নিজেকে আরও এক বার শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার সুযোগ ছিল জোকোভিচের কাছে। ম্যাচের আগেই নাদালের বিপক্ষে ছিল একাধিক পরিস্থিতি। মধ্য রাতে খেলার জন্য রাজি ছিলেন না নাদাল। তা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগও করেন জোকোভিচ। বলে দেন, রাতে খেলা হলে তাঁর সুবিধা। ম্যাচ খেলার আগেই কি জয়ের স্বাদ পাচ্ছিলেন জোকোভিচ? অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস পেয়ে গিয়েছিলেন?
খেলা শুরু হতে যদিও নাদাল বুঝিয়ে দেন লাল সুরকির কোর্টে তিনিই সেরা। জোকোভিচের ঘাড়ে চেপে বসেন তিনি। জোকোভিচের খেলার ধরন নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। নাদালের বিরুদ্ধে ড্রপ শটে খেলতে চাইছিলেন তিনি। ২০২০ সালের ফরাসি ওপেনের ফাইনালে নাদালের বিরুদ্ধে এই ভাবে খেলতে গিয়ে হেরেছিলেন জোকোভিচ। বার বার নেটের কাছে বল ফেলতে চাইছিলেন তিনি। কিন্তু এ বারেও নাদালের বিরুদ্ধে তাঁর এই পদ্ধতি কাজে লাগেনি। নিজের পাতা ফাঁদে নিজেই ধরা পড়েন। ম্যাচ শেষে জোকোভিচ বলেন, “আমি আমার সেরাটা দিয়েছি। হয়তো আরও ভাল খেলতে পারতাম। তবে শেষ শট পর্যন্ত ম্যাচে থাকতে পেরে আমি গর্বিত। আমার থেকে ভাল খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে হেরেছি। সুযোগ পেয়েছিলাম, কাজে লাগাতে পারিনি। চার ঘণ্টার উপর লড়াই করার পর এই হার মেনে নিতেই হবে।”
প্রথম সেট থেকেই জোকোভিচকে চাপে ফেলে দেন নাদাল। দ্বিতীয় সেট বাদ দিলে গোটা ম্যাচে জোকোভিচকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলেন নাদাল। বিশ্বের এক নম্বর টেনিস তারকাকে দৌড় করান নিজের ইচ্ছা মতো। কখনও জোকোভিচ দৌড়ন কোর্টের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত, কখনও আবার নাদাল তাঁকে ডেকে আনেন নেটের কাছে। জোকোভিচ বলেন, “গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভাল খেলেছে নাদাল। শুরুটা ভাল করেছিল। আমার শুরুটা ভাল হয়নি। দ্বিতীয় সেটে ম্যাচে ফিরে কিছুটা ছন্দ খুঁজে পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ম্যাচে ফিরে এসেছি।”
দ্বিতীয় সেট জেতার পর তৃতীয় সেটে ৩-০ গেমে এগিয়ে গিয়েছিলেন জোকোভিচ। সেখান থেকে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন নাদাল। জোকোভিচ বলেন, “প্রতিটা সেটের শুরুতে নাদাল নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল। চতুর্থ সেট বাদ দিয়ে। আমি চাইছিলাম ম্যাচটাকে পঞ্চম সেটে নিয়ে যেতে। কিন্তু ও দেখিয়ে দিল কেন ও চ্যাম্পিয়ন। শুভেচ্ছা নাদাল এবং ওর দলকে। এটা নাদালের প্রাপ্য।”
জোকোভিচ এই প্রতিযোগিতার শীর্ষ বাছাই ছিলেন। তাঁকেই হারিয়ে দিলেন পঞ্চম বাছাই নাদাল। ২২তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম থেকে আর দুটো জয় দূরে স্প্যানিশ তারকা।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy