কুল-চা জুটির ভবিষ্যৎ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
‘কুল-চা’ জুটিতে কি মোহভঙ্গ ঘটেছে টিম ইন্ডিয়ার? তেমন আভাস কিন্তু মিলছে। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে। কুলদীপ যাদব ও যুজবেন্দ্র চহালকে যে ভাবে স্কোয়াডের বাইরে রাখা হচ্ছে, তাতে কোথাও দুই রিস্ট স্পিনারের প্রতি আশাভঙ্গের সুরই যেন বাজছে।
বছর দুয়েক আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হারের পর রিস্ট স্পিনারের দিকে ঝুঁকেছিল বিরাট কোহালির দল। অফস্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও বাঁ-হাতি স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজাকে ছেঁটে ফেলা হয়েছিল সীমিত ওভারের ক্রিকেট থেকে। সুযোগ দেওয়া হয়েছিল চায়নাম্যান কুলদীপ যাদব ও লেগস্পিনার যুজবেন্দ্র চহালকে। যুক্তি ছিল, মাঝের ওভারে উইকেট নেওয়া জরুরি বিপক্ষ ইনিংসকে চাপে ফেলার জন্য। আর সেই লক্ষ্যে যাঁরা কব্জির সাহায্যে বল ঘোরান, তাঁদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ, উইকেট নেওয়ার জন্য কন্ডিশনের উপর নির্ভর করতে হয় না রিস্টস্পিনারদের।
এই থিওরি দেশে-বিদেশে কম ম্যাচ জেতায়নি টিম ইন্ডিয়াকে। দুরন্ত ধারাবাহিকতায় বল হাতে রীতিমতো ভেলকিও দেখিয়েছেন দু’জনে। কিন্তু হালফিল সেই উত্তুঙ্গ সাফল্যে ভাটার টান দেখা যাচ্ছে। চোখ-ধাঁধানো স্পেলও উধাও থেকেছে। উল্টে বার বার প্রশ্নের মুখে পড়েছে দু’জনের কার্যকারিতা।
আরও পড়ুন: টক্করে বিরাট-রোহিত, ধর্মশালায় একাধিক রেকর্ডের সামনে ভারতের সেরা দুই
বিশ্বকাপের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও জাতীয় দলে ছিলেন না কুলদীপ-চহাল। স্পিনার হিসেবে স্কোয়াডে ছিলেন দুই বাঁ-হাতি স্পিনার রবীন্দ্র জাদেজা ও ক্রুণাল পাণ্ড্য, অফস্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দর ও লেগস্পিনার রাহুল চাহার। এমএসকে প্রসাদের নেতৃত্বে জাতীয় নির্বাচকরা দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজেও এই স্পিনারদের উপরই ভরসা রেখেছেন। তবে কি কুড়ি ওভারের ফরম্যাটে কুল-চা জুটি ক্রমশ ব্রাত্য হয়ে উঠছেন? শুরু হয়েছে চর্চা।
এই প্রশ্নই আনন্দবাজার ডিজিটালের তরফে রাখা হয়েছিল বাংলার চার প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচকের কাছে। এর মধ্যে অশোক মলহোত্র রীতিমতো হতাশ হয়েছেন দু’জনের বিশ্বকাপের পারফরম্যান্সে। তিনি সাফ বললেন, “এখন কিন্তু দু’জনে আগের মতো ব্যাটসম্যানদের আর চাপে ফেলতে পারছে না। মনে করা হয়েছিল, বিশ্বকাপে দু’জনের কুড়ি ওভার ম্যাচের গতিপ্রকৃতি পাল্টে দেবে। কিন্তু তা হয়নি। বরং ওদের পড়ে ফেলছে ব্যাটসম্যানরা। সেই কারণেই হয়তো আমরা নতুন স্ট্র্যাটেজি পরীক্ষা করে দেখছি।” প্রণব রায়ের গলাতেও একই সুর। বললেন, “চহাল এমন নয় যে রোজ পাঁচ উইকেট নিচ্ছে। কোহালি বা বুমরাকে সরানো মুশকিল। কিন্তু চহাল বা কুলদীপ সেই জায়গায় নেই।”
প্রাক্তন জাতীয় নির্বাচকদের কুল-চা জুটি আগের ভরসা দিতে পারছেন না। গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ
মলহোত্রর পূর্বসূরি সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভাবনাকে সমর্থন জানাচ্ছেন। তাঁর যুক্তি, “সামনেই টি২০ বিশ্বকাপ। তার আগে অনেকগুলো খেলা রয়েছে। সেখানে দেখে নিতেই হবে অন্যদের।” নতুন স্পিন আক্রমণ নিয়ে তাঁর মূল্যায়ন, “এঁদের মধ্যে ক্রুণাল খুব কার্যকরী। টেনে টেনে বল করে। ব্যাট করতে পারে। আর চাহার যেহেতু লেগস্পিনার, তাই তাঁকে সময় দিতে হবে। ও খুব একটা খেলেওনি এখনও।” তবে কুল-চা জুটির উপর এখনই পুরোপুরি ভরসা হারাতে রাজি নন তিনি। বাংলার রঞ্জি ট্রফি জয়ী অধিনায়কের দাবি, “হ্যাঁ, হ্যাঁ ওরা একশো শতাংশ ফিরবে। ওরা তো আছেই। তবে আপাতত ক্রুণালদের খেলিয়ে দেখে নেওয়া যাক না।”
কিন্তু, কুল-চা জুটিকে দলে না রাখা কোথাও নেতিবাচক স্ট্র্যাটেজি হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে না কি? ওয়াশিংটন সুন্দরের বোলিং-দক্ষতা নিয়ে যেমন সংশয় রয়েছে প্রণব রায়ের। তাঁর কথায়, “উইকেট নিতেই হবে জেতার জন্য। সেটাও দেখতে হবে। সুন্দরের বোলিং সত্যি বলতে আন্তর্জাতিক স্তরের নয়। ও দুই-তিন ওভার শুরুতে করে দেয়। কিন্তু, কতটা রান আটকাতে পারবে, আমার সংশয় রয়েছে।” রাহুলকে নিয়েও তিনি যে খুব উচ্চ ধারণা পোষণ করেন, এমন নয়। জাতীয় দলের প্রাক্তন ওপেনারের মতে, “রাহুলকে নেওয়া হল পেড়া বিলিয়ে দেওয়ার মতো। সবাইকে খুশি করা আর কী। যখন হঠাৎ হঠাৎ এই নামগুলো উঠে আসে, তখন ভিতরের ব্যাপারটা বোঝাই যায়।”
রাজা ভেঙ্কট আবার সতর্ক করে দিতে চাইছেন ভারতীয় দলকে। যাতে ওয়ানডে বিশ্বকাপে চার নম্বর জায়গার মতো কোনও ধোঁয়াশা ফের তৈরি না হয়। তাঁর সাবধানবাণী, “এখনই দেখে নেওয়া বেটার। না হলে এই বিশ্বকাপের মতোই হবে। রায়ুডুকে সারা ক্ষণ খেলিয়ে বিশ্বকাপে না নিয়ে চার নম্বরে বিজয় শঙ্করকে নামিয়ে তালগোল পাকিয়ে দেওয়ার ঘটনাই ফের ঘটবে। আমি অবশ্য কুলদীপ-চহালকে বসিয়ে রাখার কথায় আপত্তি তুলছি। বসানো নয়, এটা দেখে নেওয়া। হতে পারে কুলদীপদের থেকে ওদের ব্যাটিংয়ের হাতটা ভাল বলেও পরীক্ষা করা হচ্ছে। এরপরে আর সময় মিলবে না।”
আরও পড়ুন: মোহনবাগানের বিরুদ্ধেই নতুন ইনিংস শুরু করছেন ইস্টবেঙ্গলের ঘরের ছেলে
চার স্পিনারের মধ্যে দু’জন আবার একই ঘরানার। জাদেজা ও ক্রুণাল। কোনও একজনকে বাছতে হলে কার খেলা উচিত? প্রণব রায় সাফ বললেন, “জাদেজাকে বাদ দেওয়ার কথা ভাবাই যায় না। ও থাকায় ক্রুণালকে এখন কিছু দিন দলের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে হবে। যদিও ও ভাল চয়েস। তবে জাদেজাকে ছাপিয়ে তো পারবে না, কারণ ও শুধু ভালো ফিল্ডারই নয়, সব বিভাগেই এগিয়ে।” রাজা ভেঙ্কটের ভোটও পাচ্ছেন জাদেজা। তাঁর সওয়াল, “এই মুহূর্তে বাছতে হলে জাদেজাকে বাছব। ও ব্যাটে অনেক উন্নতি করেছে। অসাধারণ ফিল্ডারও।” অশোক মলহোত্র যদিও মনে করেন, শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবেই খেলতে পারেন হার্দিক পাণ্ড্যর দাদা। তাঁর কথায়, “ক্রুণাল ম্যাচ জেতাতে পারে। ও ইমপ্যাক্ট ক্রিকেটার। তা সে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স বা ভারত, যে দলের হয়েই খেলুক না কেন। কিছু না কিছু ও করেই দেয়। ও আবার ছয় নম্বরে ব্যাটও করতে পারে। এখন তো এই ফরম্যাটে অলরাউন্ডার বোঝাই করতেই হবে। হার্দিক থেকে শুরু করে জাদেজা বা সুন্দর, সবাই কিন্তু অলরাউন্ডার।”
আর এখানেই সেই প্রশ্ন। ব্যাটের হাত কেমন তা দেখেই যদি স্পিনার নিতে হয়, তা হলে তো উইকেট নেওয়ার আগ্রাসন থেকে সরে আসতে হচ্ছে। অর্থাৎ, মানসিক ভাবে কোথাও রক্ষণাত্মক হয়ে পড়ছে না তো টিম ম্যানেজমেন্ট? মলহোত্র এই প্রসঙ্গে মনে করাচ্ছেন কুল-চা জুটির কথা। বললেন, “ওঁরা কিন্তু ম্যাচ-উইনার। উইকেট বের করে আনতে পারে। কিন্তু পুরনো ধার দেখছি না। আর সেই কারণেই রাহুলকে দেখে নেওয়া। ও ভাল বোলার, কাজে আসতেই পারে।”
যা দাঁড়াচ্ছে, আপাতত কুল-চা জুটি বাইরে থাকলেও রিস্ট স্পিনার থিওরির পুরোপুরি বিসর্জন ঘটছে না। সেই পতাকা আপাতত রাহুল চাহারের হাতে। অবশ্য তা কতটা তুলে ধরতে পারবেন তিনি, দ্বিমত থাকছেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy