সঙ্কট: এই উল্লাস কি দেখা যাবে ভক্তদের, উঠছে প্রশ্ন। ফাইল চিত্র
ইস্টবেঙ্গলের ভবিষ্যৎ নিয়ে ফের অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ বাড়ছে! নতুন লগ্নিকারী সংস্থার সঙ্গে এখনও পর্যন্ত চুক্তি না হওয়ায় স্থগিত হয়ে গিয়েছে দল গঠনের প্রক্রিয়া। লক্ষ লক্ষ লাল-হলুদ সমর্থকদের মনে একটাই প্রশ্ন, সামনেই কলকাতা লিগ ও ডুরান্ড কাপ। তার পরে শুরু হবে আইএসএল। ইস্টবেঙ্গল কি আদৌ খেলতে পারবে সেখানে?
লগ্নিকারীদের সঙ্গে ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের বারবার বিবাদে জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সমর্থকেরাই। প্রথম কোয়েস, তার পরে শ্রীসিমেন্ট বিদায় নিয়েছে। কারণ, ক্লাব কর্তারা লগ্নিকারীদের কথা শুনতে চাইছেন না। নিজেদের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য বারবার তাঁরা নানা রকম শর্ত আরোপ করছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে শ্রীসিমেন্টের পরে ইমামি গোষ্ঠীও ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে রাজি হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত দু’পক্ষের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি।নতুন লগ্নিকারী সংস্থার কর্তারাও এখন খতিয়ে দেখছেন, আদৌ তাঁরা বিনিয়োগ করবেন কি না। ফলে এই মধুচন্দ্রিমার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকেই সংশয়ে রয়েছেন।
আগের দুই লগ্নিকারী সংস্থার সঙ্গে ইস্টবেঙ্গলের বিচ্ছেদের মূলেই ছিল চূড়ান্ত চুক্তিপত্র নিয়ে বিবাদ। গত প্রায় চার বছর ধরেই এই ডামাডোল চলছে লাল-হলুদে। শেষ পর্যন্ত বিচ্ছেদের পথই বেছে নিয়েছিল আগের দুই লগ্নিকারী সংস্থা। এ বারও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির অশনি সঙ্কেত দেখছেন অনেকে। নতুন লগ্নিকারীর সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার ক্ষেত্রে কী সমস্যা হচ্ছে? ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ইস্টবেঙ্গলের মালিকানার কত শতাংশ কাদের হাতে থাকবে, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়নি। আগের লগ্নিকারীর ছিল ৭৬ শতাংশ মালিকানা। ক্লাবের অধীনে ছিল ২৪ শতাংশ। শোনা যাচ্ছে, ইস্টবেঙ্গল কর্তারা নাকি নতুন লগ্নিকারীর কাছে এ বার আরও বেশি শতাংশ শেয়ার চাইছেন। তাই যতক্ষণ না ঐক্যমত্যে পৌঁছবে দুই পক্ষ, তত ক্ষণ স্থগিত থাকবে দল গঠনের কাজ।অথচ চলতি মাসের শুরুতেই ক্লাব ও লগ্নিকারী সংস্থার কর্তাদের মধ্যে প্রথম বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, সব দিক খতিয়ে দেখে চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে সময় লাগবে।তাই দল গঠনের প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হবে না। কিন্তু বাস্তবের ছবিটা সম্পূর্ণ উল্টো। হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে দল গঠন।শনিবার আনন্দবাজারকে লগ্নিকারী সংস্থার ডিরেক্টর আদিত্য বর্ধন আগরওয়াল বললেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত আলোচনা চলছে। আইনজীবীরা সব কিছু খুঁটিয়ে দেখছেন।।’’ শোনা গিয়েছিল, শনিবার নাকি লগ্নিকারী সংস্থার তরফে চুক্তির খসড়া পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হবে ইস্টবেঙ্গলকে। লাল-হলুদের কর্তাদের দাবি, তাঁরা চুক্তির খসড়া পাননি।
ইস্টবেঙ্গলের এই ডামাডোলে অখুশি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও। লাল-হলুদ কর্তারাই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে অনুরোধ করেছিলেন নতুন লগ্নিকারী খুঁজে দেওয়ার জন্য। সৌরভ উদ্যোগ নিয়েছিলেন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে লাল-হলুদের গাঁটছড়া বাঁধার ব্যাপারে। তিনি সেই সম্ভাবনার কথা ঘোষণাও করেছিলেন।তার পরেই গত মাসে মুখ্যমন্ত্রী নবান্নে বসে ইস্টবেঙ্গলের নতুন লগ্নিকারীর নাম ঘোষণা করে দেন। এর পরেও ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডকে আনার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা হয়েছিল সৌরভের। কিন্তু এখন আর ইস্টবেঙ্গলে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী নয় ইংল্যান্ডের এই ক্লাব। এ ভাবে হঠাৎ করে কথাবার্তা ভেস্তে যাওয়াকে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের মতো পেশাদার ক্লাব একেবারেই ভালভাবে নিচ্ছে না।
এ দিকে, যে ১১ জন ফুটবলারের অর্থ বকেয়া ছিল, তা মেটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইস্টবেঙ্গলের আগের লগ্নিকারী সংস্থা। এক কর্তা বললেন, ‘‘ইতিমধ্যেই আমরা ১০ জন ফুটবলারের বকেয়া মিটিয়ে দিয়েছি। আইনি জটিলতার কারণে বাকি রয়েছে শুধু এক জনের বকেয়া মেটানো। আগামী সপ্তাহে আমরা সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে পুরো বিষয়টা জানাব। দেখি ওরা কী পরামর্শ দেয়।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy