Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
প্রতিপক্ষ প্রহরী 
Thibaut Courtois

Thibaut Courtois: রিয়ালকে জিতিয়ে কুর্তোয়া প্রমাণ করল, ও-ই বিশ্বসেরা

এক জন গোলকিপার একক কৃতিত্বে দলকে চ্যাম্পিয়ন করছে, এটা যেন কেউ-ই মানতে চান না। অবশ্য এই মনোভাব নতুন নয়। যুগ যুগ ধরেই চলে আসছে।

নায়ক: চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি নিয়ে উল্লসিত কুর্তোয়া।

নায়ক: চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি নিয়ে উল্লসিত কুর্তোয়া।

ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২২ ০৬:৪৫
Share: Save:

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ

লিভারপুল রিয়াল মাদ্রিদ

প্যারিসে শনিবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হারের পর থেকেই লিভারপুল সমর্থকরা বলছেন, একাধিক গোলের সুযোগ নষ্ট করার মূল্য দিতে হয়েছে। মহম্মদ সালাহ থেকে সাদিয়ো মানে, অবিশ্বাস্য ভাবে গোল করতে ব্যর্থ হয়েছে বলেই নাকি ট্রফি হাতছাড়া হয়েছে। আমার কিন্তু ম্যাচটা দেখে মনে হয়েছে ওরা গোল নষ্ট করেনি, আটকে গিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদের গোলকিপার থিবো কুর্তোয়ার কাছে।

এক জন গোলকিপার একক কৃতিত্বে দলকে চ্যাম্পিয়ন করছে, এটা যেন কেউ-ই মানতে চান না। অবশ্য এই মনোভাব নতুন নয়। যুগ যুগ ধরেই চলে আসছে। ম্যাচ জিতলে কৃতিত্ব গোলদাতাদের। হারলে সব দোষ গোলকিপারদের। এই কারণেই গোলকিপিংকে বলা হয় ‘থ্যাঙ্কলেস জব’। ধরেই নেওয়া হয় গোলকিপারের কাজই হল গোল আটকানো। তার জন্য কেন তাকে ধন্যবাদ দিতে হবে। সে তো নিজের কাজটাই করেছে। আমার জীবনেও এই অভিজ্ঞতা অনেক বার হয়েছে। এক জন স্ট্রাইকারের কাজও তো গোল করা। তা হলে তাকে নিয়ে কেন বাড়তি উন্মাদনা দেখানো হবে? শনিবার রাতে কুর্তোয়া নয়টি অবধারিত গোল বাঁচিয়ে আরও একবার প্রমাণ করল— এক জন গোলকিপারও পারে দলকে সাফল্যের শিখরে নিয়ে যেতে। ক্লাবকে ১৪বার ইউরোপ সেরা করতে।

এ বারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল নিয়ে উন্মাদনা একটু বেশিই ছিল। কারণ রিয়াল যে ভাবে এই জায়গায় পৌঁছেছিল, তা অবিশ্বাস্য। শেষ ষোলোয় প্যারিস সাঁ জারমাঁর কাছে প্রথম সাক্ষাতে ০-১ গোলে হেরে গিয়েছিল রিয়াল। দ্বিতীয় সাক্ষাতে ৩-১ জিতে শেষ আটে পৌঁছয় করিম বেঞ্জেমারা! চেলসিকে তাদের ঘরের মাঠে ৩-১ গোলে হারায়। তবে ঘরের মাঠে ২-৩ গোলে হারলেও দুই পর্ব মিলিয়ে ৫-৪ গোলে জিতে শেষ চারের ছাড়পত্র আদায় করে ভিনিসিয়াস জুনিয়ররা। এখানেই শেষ নয়। সেমিফাইনালের প্রথম পর্বে ম্যান সিটির কাছে হার ৩-৪ গোলে। ফাইনালে উঠতে হলে দ্বিতীয় পর্বে অন্তত দু’গোলের ব্যবধানে জিততেই হত রিয়ালকে। কিন্তু ৭৩ মিনিটে রিয়াদ মাহরেজ়ের দুরন্ত গোলে পিছিয়ে পড়েছিল লুকা মদ্রিচরা। নাটকীয় ভাবে ৯০ মিনিটে বেঞ্জেমার অসাধারণ পাস থেকে ১-১ করে রদ্রিগো। এক মিনিটের মধ্যেই হেডে ২-১ করেছিল ব্রাজিলীয় তারকা। ৯৫ মিনিটে পেনাল্টি থেকে ৩-১ করে বেঞ্জেমা।

লিভারপুলে যদি ক্লপ থাকেন, রিয়ালের দায়িত্বে কার্লো আনচেলোত্তির অভিজ্ঞ ম্যানেজার ছিলেন। ফাইনালে দুই দলের চাণক্যই ৪-৩-৩ ছকে দল সাজিয়েছিলেন। শুরু থেকেই লিভারপুল আক্রমণাত্মক খেলছিল। রিয়াল কিন্তু রক্ষণ মজবুত করে দুই প্রান্ত দিয়ে প্রতিআক্রমণ নির্ভর ফুটবলকে বেছে নিয়েছিল। পরিসংখ্যান বলছে, পুরো ম্যাচে রিয়ালের গোল লক্ষ্য করে ২৪টি শট নিয়েছিল সালাহ-রা। এর মধ্যে নয়টি ছিল নিখুঁত লক্ষ্যে। করিম বেঞ্চেমারা পুরো ম্যাচে মাত্র চারটির বেশি শট বিপক্ষের গোল লক্ষ্য করে মারতেই পারেনি! এর মধ্যে দু’টি ছিল নিখুঁত লক্ষ্যে। তার একটি থেকেই গোল করে ভিনিসিয়াস জুনিয়র।

পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট লিভারপুল কী রকম আক্রমণের ঝড় তুলেছিল। তা সত্ত্বেও গোল হয়নি শুধু মাত্র কুর্তোয়ার জন্য। ১৬ মিনিটে সালাহ-র অসাধারণ দক্ষতায় বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে বাঁচায় রিয়ালের শেষ প্রহরী। এক জন গোলকিপার যদি প্রথম বলটা ঠিক মতো বাঁচায়, তা হলে তার আত্মবিশ্বাস কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আর কুর্তোয়ার এমনিতেই অনুমান ক্ষমতা অসাধারণ। শরীরের নমনীয়তাও দুর্দান্ত। মাথাও বরফের মতো শীতল। এই তিন অস্ত্রেই ও থামিয়ে দিল লিভারপুলকে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই মানে দুর্দান্ত শট নিয়েছিল এ বার ডান দিকে শরীর ছুড়ে কোনও মতে হাত ছোঁয়ায় রিয়াল গোলকিপার। বল পোস্টে ধাক্কা খায়। ৪৩ মিনিটে বেঞ্জেমার গোল ভিডিয়ো প্রযুক্তি ব্যবহার করে রেফারি অফসাইডে বাতিল করলেও আমি খুব একটা নিশ্চিত নই।

কেন জানি না মনে হচ্ছিল, প্রথমার্ধে গোল না পেলে লিভারপুলের পক্ষে জেতা কঠিন। ঠিক সেটাই হল। ৫৯ মিনিটে প্রতিআক্রমণে ডান প্রান্ত দিয়ে উঠে লিভারপুলের বক্সে সেন্টার করে ফেদেরিকো ভালভার্দে। ঠান্ডা মাথায় ভিনিসিয়াস জুনিয়র বল জালে জড়িয়ে দেয়। টিভিতে দেখে প্রথমে মনে হয়েছিল অফসাইড। লিভারপুলের ফুটবলাররা গোল বাতিলের দাবিও জানায়। কিন্তু ভিডিয়ো প্রযুক্তি ব্যবহার করে তা খারিজ করে দেন রেফারি।

পাঁচ মিনিট পরেই বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীরা বিস্মিত হয়ে দেখলেন কুর্তোয়ার সেই অবিশ্বাস্য সেভ। প্রায় ২০ গজ দূর থেকে সালাহ বলটা মেরেছিল। পাখির মতো ডান দিকে উড়ে গিয়ে এক হাত দিয়ে বল বাঁচায় ছ’ফিট সাত ইঞ্চি উচ্চতার কুর্তোয়া। অনবদ্য। এ রকম গোলকিপিং দেখার জন্য মাইলের পর মাইল হাঁটতেও আমি রাজি। ৬৯ মিনিটে ফের কুর্তোয়া ছ’গজ বক্সের মধ্যে সালাহর শট গোলে ঢোকার ঠিক আগে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁ পা দিয়ে বাঁচায়। এখানেই শেষ নয়। ৮০ মিনিটে সালাহর শট দিয়েগো জোটার পায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে পোস্টের কোণ দিয়ে গোলে ঢুকছিল। বাঁ দিকে শরীর ছুড়ে বাঁচাল কুর্তোয়া। দু’মিনিট পরে সালাহর শট এগিয়ে এসে এক হাতে বাঁচাল ও।সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

অন্য বিষয়গুলি:

Thibaut Courtois real madrid UCL
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy