ড্র করল মোহনবাগান। — ফাইল চিত্র।
মোহনবাগান ০
এফসি রভশান ০
গোটা ম্যাচ জুড়ে অজস্র পাস। দ্বিতীয়ার্ধে বেশ কিছু সহজ সুযোগ নষ্ট। খেসারত দিয়ে এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২-এর প্রথম ম্যাচে এফসি রভশানের কাছে আটকে গেল মোহনবাগান। বুধবার যুবভারতীতে খেলা শেষ হল গোলশূন্য অবস্থায়। শেষ দিকে একাধিক সুযোগ নষ্ট না করলে মোহনবাগানকে স্রেফ এক পয়েন্ট পেতে হত না।
‘পরম্পরা, আবেগ, ঐক্য। এগিয়ে চলেছে নৌকো’। ম্যাচের আগেই গ্যালারিতে ব্যানার নামিয়েছিলেন দর্শকেরা। ম্যাচের পর তা একটু বদলে দিয়ে বলাই যায়, ‘পরম্পরা, আবেগ, ঐক্য। আটকে গেল নৌকা’। হোসে মোলিনা কোচ হয়ে আসার পর থেকে মোহনবাগানের জয়রথও অজানা কারণে থেমে গিয়েছে। না হলে তাজিকিস্তানের মতো ধারেভারে নীচে থাকা ক্লাবের কাছেও ঘরের মাঠে আটকে যেতে হয়। তাজিকিস্তানের বিদেশিদের মান বিরাট আহামরি এমনও নয়। মোহনবাগানের জেমি ম্যাকলারেনের বাজারমূল্য যেখানে ১২ কোটি, সেখানে রভশানের কোনও বিদেশির দামই দু’কোটির বেশি নয়। তা সত্ত্বেও আটকে গেল মোহনবাগান। দলে দু’জন বিশ্বকাপার থাকা সত্ত্বেও। ম্যাচ শেষ হতেই ‘মোলিনা গো ব্যাক’ স্লোগানও উঠল।
ফিফা ক্রমতালিকায় তাজিকিস্তান (১০৩) ভারতের (১২৪) থেকে খুব একটা উঁচুতে নয়। কিন্তু এএফসি-র প্রতিযোগিতায় নিয়মিত খেলে তাজিকিস্তানের ক্লাবগুলি। তার মধ্যে ইস্তিকললের পাশাপাশি নামকরা ক্লাব রভশান কুলবও। তাই মোহনবাগানের কাজ যে সহজ হবে না তা অনেকেই বুঝে গিয়েছিলেন।
হোসে মোলিনার প্রথম একাদশ বিস্ময় জাগাতে বাধ্য। এএফসি-র প্রতিযোগিতায় প্রথম একাদশে যেখানে যত ইচ্ছা বিদেশি খেলানো যায়, সেখানে তিনি রেখেছিলেন মাত্র তিন জনকে। রক্ষণে টম অলড্রেডের পাশাপাশি আক্রমণে জেসন কামিংস এবং দিমিত্রি পেত্রাতোস। গ্রেগ স্টুয়ার্ট ছিলেন পরিবর্ত। তবে আশা জাগানোর খবর হল, পরিবর্ত ফুটবলারদের তালিকায় ছিল ম্যাকলারেনের নামও। যদিও শেষ পর্যন্ত তাঁকে নামতে দেখার সুযোগ পেলেন না গ্যালারির ১৮,৯০৮ জন দর্শক।
ম্যাচের শুরু থেকে দাপট ছিল রভশানেরই। বল ঘোরাফেরা করছিল তাদের খেলোয়াড়দের পায়েই। ম্যাচের ১০ মিনিট পর্যন্ত রভশানের একতরফা আক্রমণ চলছিল। তবে গোল হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। ১৪ মিনিটের মাথায় প্রথম আক্রমণ তৈরি হয় মোহনবাগানের। আশিস রাইয়ের থেকে বল পেয়ে মনবীর সিংহ এগিয়ে গেলেও রভশানের ওফোরি তাঁকে আটকে দেন।
রভশানের রক্ষণ ভাঙতে নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট পাস খেলায় মন দিয়েছিল মোহনবাগান। তা করতে গিয়েই ১৯ মিনিটে গোলের মুখ খুলে গিয়েছিল। মনবীরের থেকে ফাইনাল থার্ডে বল পেয়েছিলেন পেত্রাতোস। মার্কারকে এড়িয়ে বক্সের কাছাকাছিও পৌঁছে গিয়েছিলেন। তত ক্ষণে রভশানের ডিফেন্ডারেরা তাঁকে ঘিরে ফেলেন এবং শট আটকে যায়।
২১ মিনিটের মাথায় বিপজ্জনক ফাউল করেছিলেন দীপেন্দু বিশ্বাস। ডান দিক থেকে আন্দ্রি মার্কোভিচ ঢোকার সময় জোড়া পায়ে বিপক্ষকে ট্যাকল করেন। রেফারি স্রেফ হলুদ কার্ড দেখিয়ে তাঁকে সতর্ক করেন। তবে লাল কার্ডও দেখতে পারতেন দীপেন্দু। পাঁচ মিনিট পরে দীপেন্দুর ভুলে বক্সের কাছাকাছি আরও একটি ফ্রিকিক পায় রভশান। নাজারভের ফ্রিকিক অল্পের জন্য গোলের বাইরে যায়। পরের মিনিটেই কোজো মাতিচের থেকে বল পেয়ে সজোরে শট মেরেছিলেন অধিনায়ক রাহিমভ। কোনও মতে সে যাত্রা বিশাল কাইথের হাতে বেঁচে যায় মোহনবাগান।
এ ছাড়া প্রথমার্ধে এমন কোনও মুহূর্ত তৈরি হয়নি যেখান থেকে গোল হতে পারে। দুই দলের ফুটবলারেরাই বিপক্ষের রক্ষণ ভাঙতে চাইছিলেন। তবে বক্সের কাছে গিয়েই সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিল।
রভশান দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই বুঝিয়ে দিচ্ছিল তারা গোল করতে নেমেছে। মোহনবাগানের অর্ধে একের পর এক আক্রমণ আছড়ে পড়ছিল তাজিকিস্তানের ক্লাবটির। তবে মোহনবাগানের রক্ষণ ভেদ করে কিছুতেই এগোতে পারছিল না তারা। অন্য দিকে মোহনবাগানের আক্রমণ শুরু হচ্ছিল পিছন থেকে। তবে বিপক্ষের অর্ধে গিয়েই খেই হারাচ্ছিল তারা।
গোলের লক্ষ্যে ৬৪ মিনিটে লিস্টন কোলাসো এবং আপুইয়াকে নামিয়ে দেন মোলিনা। মোহনবাগানের গড়পড়তা মাঝমাঠের খেলায় কিছুটা ঝাঁজ আসে। বেশ কয়েক বার বল নিয়ে এগোনোর চেষ্টা করেন লিস্টন। ৭৬ মিনিটে ম্যাচের সেরা সুযোগ এসেছিল কামিংসের কাছে। রভশানের রক্ষণের ভুলে আপুইয়ার বাড়ানো বল পেয়ে গিয়েছিলেন কামিংস। তাঁকে ধাওয়া করছিলেন ওফোরি। কামিংসের সামনে একা শুধু বিপক্ষ গোলকিপারই ছিলেন। সেই সুযোগও কাজে লাগাতে পারেননি অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপার। গোলকিপারের মাথায় উপর দিয়ে হালকা শটে যেখানে গোল করা যায়, সেখানে তিনি দায়সারা একটি শট মারলেন যা বিপক্ষ গোলকিপার হৃৎসেঙ্কো সহজেই তালুবন্দি করেন।
ম্যাচের শেষ দিকে একের পর এক সুযোগ এসেছিল মোহনবাগানের কাছে। ৮৬ মিনিটে একটি নির্বিষ ব্যাক পাস ক্লিয়ার করতে গিয়ে ভুল করে ফেলেছিলেন রভশানের গোলকিপার। পেত্রাতোস কাছাকাছি থাকলেও তিনি বলের কাছে পৌঁছনোর আগেই ওফোরি এসে তা ক্লিয়ার করে দেন। পরের মিনিটে একটি ভাল সুযোগ নষ্ট করেন লিস্টন। স্টুয়ার্টের থেকে বল পেয়েছিলেন কোলাসো। বাঁ দিক দিয়ে বল নিয়ে ঢুকে সামনে একা পেয়ে গিয়েছিলেন গোলকিপারকে। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে গোলের বাইরে মারেন তিনি।
৮৮ মিনিটে স্টুয়ার্টের পাস পেয়ে রভশানের জালে বল জড়িয়ে দিয়েছিলেন পেত্রাতোস। তবে আগে থেকেই অফসাইডে থাকার কারণে সেই গোল বাতিল হয়। ৯০ মিনিটের মাথায় বক্সে ফেলে দেওয়া হয়েছিল পেত্রাতোসকে। মোহনবাগানের ফুটবলারেরা পেনাল্টির দাবি করলেও রেফারি তাতে কর্ণপাত করেননি। রিপ্লে-তে দেখা যায় সেটি পেনাল্টি ছিলও না। সংযুক্তি সময়ে আরও কিছু সুযোগ পেয়েছিল মোহনবাগান। তার মধ্যে সহজ একটি সুযোগ এসেছিল কামিংসের কাছেও। কিন্তু গোল হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy