আশাবাদী: মূলপর্বে উঠতে মরিয়া স্তিমাচ। এআইএফএফ
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের দিন দোহায় ছিলেন ভারতীয় দল নিয়ে। সেখানে রিয়াল মাদ্রিদ বনাম লিভারপুল দ্বৈরথ দেখতে পারেননি জাতীয় ফুটবল দলের ক্রোয়েশীয় কোচ ইগর স্তিমাচ। ম্যাচের পরে তাঁর দেশ ক্রোয়েশিয়ার ফুটবলার লুকা মদ্রিচকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। আগামী সপ্তাহ থেকে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে তাঁর পরীক্ষা শুরু হচ্ছে এএফসি এশিয়ান কাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে।
জর্ডনের বিরুদ্ধে দোহায় প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে মঙ্গলবার সকালে রাজারহাটের হোটেলে দল নিয়ে ফিরেছেন স্তিমাচ। জাতীয় কোচ দুপুরে কলকাতার বাছাই করা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে মিলিত হন। আশাবাদী স্তিমাচ বলে দিলেন, ‘‘কাম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচটা গুরুত্বপূর্ণ। ওই ম্যাচটা জিতলে আফগানিস্তান ও হংকং ম্যাচের আগে আত্মবিশ্বাসী মেজাজে ফিরবে দল।’’ যোগ করেন, ‘‘ডি গ্রুপে আমাদের সঙ্গে যে দলগুলো রয়েছে, তাদের চেয়ে ফিফা ক্রমপর্যায়ে এগিয়ে রয়েছি। এই গ্রুপে আমরাই ফেভারিট। আশা করি, ১৪ জুন শেষ ম্যাচের পরে মূলপর্বে ওঠা নিয়ে সংশয় থাকবে না।”
মঙ্গলবার থেকেই মাঠে নেমে পড়লেন প্রীতম কোটাল, গুরপ্রীত সিংহেরা। এ দিন রাজারহাটে অনুশীলন করলেও বুধবার থেকে পরবর্তী চার দিন যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মূল স্টেডিয়ামেই অনুশীলন করবে ভারতীয় দল।
প্রস্তুতি পর্বে জ়াম্বিয়া ম্যাচ বাতিল হয়েছে। তা নিয়ে আক্ষেপ রয়েছে স্তিমাচের। শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে জর্ডনের বিরুদ্ধে ০-২ হেরেছে ভারত। যে প্রসঙ্গে ভারতীয় কোচ বলেন, ‘‘প্রস্তুতি নিয়ে আমি খুশি। জ়াম্বিয়া ম্যাচ বাতিল হওয়ায় অতিরিক্ত ৯০ মিনিটআমরা পাইনি।’’
প্রথম ম্যাচ খেলার আগে ৪৫ দিনের প্রস্তুতি শিবির করে খেলতে নামবে ভারতীয় দল। স্তিমাচের কথায়, ‘‘চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে আক্রমণ ও রক্ষণের সময়ের সেট-পিস অনুশীলন ছাড়াও আক্রমণ ও রক্ষণের ভারসাম্য নিয়ে বিশেষ অনুশীলন হবে।’’ তবে এই প্রস্তুতির মধ্যেও ফুটবলারদের চোট-আঘাত নিয়ে চিন্তিত ভারতীয় কোচ। ঋত্বিক দাসের চিকেন পক্স হয়েছে। পেশির চোটে কাবু লিস্টন কোলাসোও প্রথম ম্যাচে অনিশ্চিত। দল থেকে বাদ পড়েছেন প্রণয় হালদার। চোটের কারণে নেই রহিম আলি, রাহুল কে পি। ঋত্বিকের জায়গায় এসেছেন দীপক টাংরি।
গ্রুপের দ্বৈরথে স্তিমাচ প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে ধরছেন আফগানদের। বলেছেন, ‘‘আফগান ফুটবলারদের অনেকে ইউরোপে থাকে ও সেখানকার লিগের দ্বিতীয় বা তৃতীয় ডিভিশনে খেলে। শারীরিক ভাবে পোক্ত। তাই ওদের সঙ্গে কঠিন পরীক্ষা। হংকং দলেও একাধিক ব্রাজিলীয় ফুটবলার আছে। একজন ভাল মানের বিদেশিই একটা দলের মেজাজ বদলে দিতে পারে।’’
জর্ডন, বেলারুশ, বাহরিন-সহ বেশ কয়েকটি ম্যাচে দেখা গিয়েছে শেষ মুহূর্তে গোল খাচ্ছে ভারত। স্তিমাচ বলছেন, ‘‘ম্যাচেই শুরুটা ভাল করেছিলাম। জর্ডনের বিরুদ্ধে ৭৫ মিনিটে গোল খাওয়ার পরেই আত্মবিশ্বাসে ধাক্কা লাগে। এই ভুলগুলো থেকে শিক্ষা অবশ্যই নিতে হবে। তবে এই দলগুলো আমাদের চেয়ে বেশি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। ক্রমপর্যায়েও এগিয়ে।’’ যোগ করেন, ‘‘ছেলেদের বোঝাচ্ছি, আইএসএলের মতো এখানে কোনও বিদেশি গোলও করবে না। গোল বাঁচাবেও না। নিজেদেরই বাড়তি উদ্যোগ নিয়ে খেলে দলকে জেতাতে হবে।’’
গোলকিপার গুরপ্রীত সিংহ ও সুনীল ছেত্রী সম্পর্কে স্তিমাচ বলেন, ‘‘গুরপ্রীত নিজের দিনে এশিয়ার সেরা পাঁচ গোলকিপারের মধ্যে থাকবে। সুনীল দলের সম্পদ। কিন্তু ও একা গোল করবে না। কেউ বল কাড়বে, কেউ বাড়াবে। সেই বল ধরে সুনীল গোল করবে। তাই সবাইকে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে।’’
আইএসএলের সমালোচনা করে স্তিমাচ বলেন, ‘‘আইএসএলে ফুটবলারদের ভাল উপার্জন রয়েছে। সকলে স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকছে। এতে কিন্তু ওরা অলস হয়ে যাচ্ছে। আইএসএলের গতি ও আন্তর্জাতিক ম্যাচের গতি এক নয়।’’ যোগ করেন, ‘‘যদি আক্রমণাত্মকমিডফিল্ডার, স্ট্রাইকার ও স্টপার হিসেবে সব দলেই বিদেশি থাকে, তা হলে জাতীয় দল কাদের নিয়ে হবে? বিদেশি ফুটবলার কমানোর ব্যাপারটা ভাবতে বলা হয়েছিল।আমি ক্লাব কোচ হলে ভারতীয় ফুটবলারদের উৎকর্ষ বাড়ানোর দিকে চোখ দিতাম। বিদেশি বাদ দিয়ে আই লিগ হলেও ফলমিলতে পারে।’’
সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্তিমাচের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে ভারতীয় ফুটবল দলের। জল্পনা বাড়ছে, এএফসি এশিয়ান কাপের মূলপর্বে যেতে না পারলে চাপ বাড়তে পারে স্তিমাচের। তিনি বলেছেন, ‘‘ভারতীয় কোচ হওয়ার চেয়ে বড় পরীক্ষা হয় না। এখানে প্রত্যাশা বেশি অথচ রসদ ও বাস্তবতা কম। আমি সব জেনেই পরীক্ষাদিতে এসেছি।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy