গুরু-শিষ্য: স্তিমাচ-সুনীল জুটির নতুন পরীক্ষা এশিয়ান কাপে। —ফাইল চিত্র।
এশিয়ান গেমসের আগে দল গড়া নিয়ে প্রবল সমস্যায় পড়েছিলেন তিনি। কার্যত বিনা প্রস্তুতিতেই মাঠে নেমেছিলেন সুনীল ছেত্রীরা। এ বার সামনে এএফসি এশিয়ান কাপ। পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ কি পাবেন ভারতীয় দলের কোচ? ক্রোয়েশিয়ায় পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটানোর ফাঁকে আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন ইগর স্তিমাচ।
প্রশ্ন: ভারতীয় ফুটবল দলের কোচ হিসেবে আপনার এই দীর্ঘ যাত্রার অনুভূতি কী?
ইগর স্তিমাচ: অনেক আশা ও ভারতীয় ফুটবল সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে প্রায় পাঁচ বছর আগে যাত্রা শুরু করেছিলাম। লক্ষ্য ছিল প্রয়োজন অনুযায়ী মানসিকতা পরিবর্তন ও নতুন ঘরানার ফুটবল শুরু করা। রাস্তা কঠিন ছিল। কারণ, সব কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য সময় দরকার। ফুটবলারদের নিয়ে কাজ করার জন্য যদি পর্যাপ্ত সময় না পাওয়া যায়, তা হলে কোনও লক্ষ্যই পূরণ হয় না। এখন পিছনের দিকে তাকালে গর্ব অনুভব করি। সকলের সহযোগিতায় আমরা এতটা দূর আসতে পেরেছি।
প্র: ভারতীয় ফুটবলের উন্নতিতে প্রধান অন্তরায় কী?
ইগর: জাতীয় দলে কখনও স্ট্রাইকার, আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার, ডিফেন্ডারদের খেলার উন্নতি করা যায় না। এই দায়িত্বটা ক্লাবের। সমস্যার সমাধানসূত্র খুঁজে বার করতেই হবে। লিগে যদি বেশি সংখ্যায় নিজেদের দেশের স্ট্রাইকার, আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার ও ডিফেন্ডাররা খেলার সুযোগ না পায়, সার্বিক ভাবে ধাক্কা খাবে ভারতীয় ফুটবল। আমি খুবই খুশি হব, যদি দেখি ভারতীয় ফুটবলাররা উন্নতমানের লিগে খেলছে। জাতীয় দলও উপকৃত হবে। অন্যান্য দেশগুলির মতো আমাদের উচিত ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভাল ফুটবলারদের জাতীয় দলে খেলানোর ব্যাপারে ভাবনা-চিন্তা করা। আমাদের ক্লাব ফুটবলে বিদেশিদের সঙ্গে তাদের খেলিয়ে দেখে নিতে হবে। বহু দেশ এ ভাবেই দলের শক্তি বাড়িয়েছে ও উন্নতি করেছে। তা ছাড়া ভাল ফুটবলারদের কয়েকটি প্রজন্ম তৈরি করতে না পারলে উন্নতি করা কঠিন।
প্র: কাতারের কাছে ০-৩ গোলে হারের পরে কিংবদন্তি আর্সেন ওয়েঙ্গার জানিয়েছিলেন, ভারতীয় দল ভাল খেলতে পারেনি। আপনি কি হতাশ তাঁর এই মন্তব্যে?
ইগর: একেবারেই না। এর আগে ভারতীয় দল কী রকম খেলত, তা আর্সেন ওয়েঙ্গার দেখেননি। কয়েক বছর আগেও কেউ আমাদের গুরুত্ব দিত না। সম্প্রতি আর্সেনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। কী ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করে কবে আমরা লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব, সেই সম্পর্কে ওয়াকিবহাল উনি। আমার শুনে খুব ভাল লেগেছে, ভারতীয় দলের লড়াকু মানসিকতা ও জয়ের খিদে আর্সেনকে মুগ্ধ করেছে।
প্র: হ্যাংঝাউয়ে এশিয়ান গেমসের জন্য ক্লাবগুলির ফুটবলার ছাড়ার ক্ষেত্রে অনীহা আপনাকে কি কষ্ট দেয়নি? ভবিষ্যতে এই ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি আটকাতে আপনার কী ভাবনা?
ইগর: অবশ্যই আমরা সমস্যায় পড়েছিলাম। কিন্তু আমি কখনওই পিছনের দিকে তাকাই না। যা ঘটে গিয়েছে তা তো আর পরিবর্তন করা যাবে না। আমি আশা করি, প্রত্যেকটি ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের উন্নত করব। নতুন ভাবে দিন শুরু করব। কোচ হিসেবে আমার দায়িত্ব সময়ের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করা। আমি সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে সফল হয়েছি, যেখানে ছেলেদের লড়াই ও খেলা ভারতের সকল ফুটবলপ্রেমীকে গর্বিত করবে। মাঠের মধ্যে যে আবেগ এখন আমরা আনতে সফল হয়েছি, তা ভাল কিছু হওয়ার আশা জাগাচ্ছে।
প্র: কার্যত বিনা প্রস্তুতিতেই এশিয়ান গেমসের শেষ ষোলোয় পৌঁছে ছিল ভারতীয় ফুটবল দল। এই সাফল্য কী ভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
ইগর: লক্ষ্য যদি স্থির থাকে, কোনও কিছুই অসম্ভব নয়। ছেলেরা সিংহের মতো লড়াই করেছিল এশিয়ান গেমসে। দেশের জন্য নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছিল। ছেলেদের দায়বদ্ধতার পুরস্কারই আমরা পেয়েছি।
প্র: সামনে এ বার এএফসি এশিয়ান কাপ। কাতারে অভিযান শুরু করার আগে চার সপ্তাহের প্রস্তুতি শিবির করার পরিকল্পনা কি বাস্তবায়িত হচ্ছে?
ইগর: ২৯ ডিসেম্বর আইএসএলে দু’টি ম্যাচ রয়েছে। তার পরেই এশিয়ান কাপের জন্য বিরতি শুরু হচ্ছে। যার অর্থ একসঙ্গে মাত্র ১৩ দিনের প্রস্তুতি নিয়েই আমাদের খেলতে হবে তিন শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে (অস্ট্রেলিয়া, উজ়বেকিস্তান ও সিরিয়া)। আমরা এশিয়ান কাপের আগে একটা প্রস্তুতি ম্যাচও খেলতে পারব না। কারণ, তা হলে আমাদের চার-পাঁচ দিনের কঠোর অনুশীলনে ব্যাঘাত ঘটবে। এএফসি কাপের জন্য অন্যান্য দলগুলি যত দিন প্রস্তুতি নিচ্ছে, আমরা তার অর্ধেকও পাব না। কিন্তু কিছু করার নেই। সময় যতটুকু পাব, তার মধ্যেই সব কিছু করব। সেরা ফল করার চেষ্টা করব।
প্র: এশিয়ান কাপের শেষ ষোলোয় ভারতীয় দলের যোগ্যতা অর্জনের আদৌ কি কোনও আশা আছে?
ইগর: আনোয়ার আলি, আশিক কুরুনিয়ন ও জিকসন সিংহ চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যাওয়ায় শেষ ষোলোয় ওঠার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে গেলেও আমরা আশা ছাড়িনি। প্রতিটি ম্যাচেই নিজেদের উন্নতি করার ও শেখার সুযোগ থাকবে। আমাদের দলে একাধিক তরুণ ফুটবলার রয়েছে, যারা প্রথমবার এই ধরনের বড় প্রতিযোগিতায় খেলবে। তাই ওদের উপরে আমি কোনও চাপ দিতে চাই না। খেলা উপভোগ করতে এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করতে বলব। আগেও বলেছি ২০২৪ সালে আমাদের প্রধান লক্ষ্য বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের তৃতীয় পর্যায়ে খেলা নিশ্চিত করা। সে ক্ষেত্রে আমরা এশিয়ার সেরা ১৮টি দেশের বিরুদ্ধে খেলতে পারব এবং এর পরের এশিয়ান কাপের মূল পর্বে সরাসরি যোগ্যতা অর্জন করতে পারব। অর্থাৎ, টানা তৃতীয়বার এশিয়ান কাপে খেলার ছাড়পত্র আদায় করব।
প্র: এশিয়ান কাপের আগে ভারতীয় দলের ফুটবলারদের চোট-মুক্ত থাকার জন্য কী পরামর্শ দিচ্ছেন?
ইগর: একশো শতাংশ ফিট না থাকলে কোনও ম্যাচে শুরু থেকে খেলবে না। প্রয়োজনে একটা ম্যাচে মাঠের থাকবে। কারণ, পুরো সুস্থ না হয়ে ম্যাচ খেলতে নেমে পড়লে বড় চোট লাগার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। সে ক্ষেত্রে কয়েক মাসের জন্য মাঠের বাইরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রতিটি ম্যাচের পরেই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। ঠিক মতো খেতে হবে। প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে।
প্র: সুনীল ছেত্রীর বয়স এখন ৩৯। ভারত অধিনায়ককে তরতাজা রাখার জন্য বিশেষ কোনও পরিকল্পনা?
ইগর: সুনীল পেশাদার। ওর দায়বদ্ধতা অবিশ্বাস্য। তাই সুনীলের জন্য বিশেষ কোনও পরিকল্পনার প্রয়োজন নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy