Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
All India Football Federation

স্তিমাচ অসত্য বলছেন! ৭৬ ঘণ্টা পরে মুখ খুলল ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন, বরখাস্ত কোচকে জবাব

বরখাস্ত হওয়ার পরে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে নিশানা করেছিলেন ইগর স্তিমাচ। ৭৬ ঘণ্টা পরে প্রাক্তন কোচকে জবাব দিল ফেডারেশন।

football

সুনীল ছেত্রীর (ডান দিকে) পাশে ইগর স্তিমাচ। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪ ২১:১৫
Share: Save:

৭৬ ঘণ্টা পরে মুখ খুলল সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ)। ভারতের ফুটবল কোচের পদ থেকে বরখাস্ত হওয়ার পরে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে নিশানা করেছিলেন ইগর স্তিমাচ। সেই সব অভিযোগের পাল্টা জবাব দিয়েছে এআইএফএফ।

ফেডারেশন জানিয়েছে, পাঁচ বছর ধরে ভারতীয় দলের কোচ ছিলেন স্তিমাচ। সেই সময়ে প্রত্যেক পদক্ষেপে স্তিমাচকে সাহায্য করেছিল ফেডারেশন। তার পরেও তিনি ফেডারেশনকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করেছেন। ব্যক্তিগত স্বার্থে স্তিমাচ এই কাজ করেছেন বলে দাবি করেছে এআইএফএফ। তাঁকে ভারতের কোচের পদ থেকে সরিয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।

এআইএফএফ জানিয়েছে, এই সময় প্রাক্তন কোচের সঙ্গে বাদানুবাদে যাওয়ার কোনও ইচ্ছা তাদের ছিল না। কিন্তু স্তিমাচ যে সব অভিযোগ করেছেন, সে গুলি অসত্য। সেই সব অভিযোগের জবাব দেওয়া তাদের উচিত বলে মনে হয়েছে। তাই এই বিবৃতি দিয়েছে তারা।

স্তিমাচ বেশ কয়েকটি অভিযোগ করেছিলেন। তাঁর মধ্যে অন্যতম ছিল ফেডারেশনের চুক্তি নিয়ে। স্তিমাচ জানিয়েছিলেন, তিন বছর চুক্তির পরে তিনি কোচের পদ ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই সময় ফেডারেশনই তাঁর সঙ্গে আরও দু’বছরের চুক্তি করেছিল। অথচ পরে তাঁর সঙ্গে কথা না বলেই তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

জবাবে ফেডারেশন বলেছে, ২০২৩ সালের কোর কমিটির পরামর্শ মেনে স্তিমাচের চুক্তি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ফেডারেশনের আইনজীবীরা প্রস্তাব দিয়েছিলেন, মাসিক ৩০ হাজার ডলার বেতনে দু’বছরের জন্য স্তিমাচের চুক্তি বাড়ানো হবে। কিন্তু স্তিমাচ তাতে রাজি হননি। তাঁর সঙ্গে কথা বলে মাসিক ৪০ হাজার ডলার বেতনে দু’বছরের জন্য চুক্তি বাড়ানো হয়। প্রথমে ঠিক ছিল, চুক্তিতে লেখা থাকবে যে স্তিমাচকে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা ফেডারেশেনের হাতে রয়েছে। পরে সেই ক্লজ়ও সরিয়ে দেওয়া হয়। তবে বিশেষ কিছু কারণে স্তিমাচকে সরানোর ক্ষমতা ফেডারেশনের হাতে ছিল। তাই স্তিমাচকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

স্তিমাচ অভিযোগ করেছিলেন, কল্যাণ চৌবে সভাপতি হওয়ার পরে মাত্র দু’বার তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছিল। তা-ও বেশি ক্ষণ কথা হয়নি। কল্যাণকে দেখে তাঁর মনে হয়েছিল, তাঁর ফুটবল নিয়ে আলোচনা করার বিশেষ আগ্রহ নেই। এই অভিযোগেরও জবাব দেওয়া হয়েছে। ফেডারেশন জানিয়েছে, কল্যাণ সভাপতি হওয়ার পরে ১৮ মাসের মধ্যে পাঁচ বার স্তিমাচের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। স্তিমাচ যখনই চেয়েছেন, ফেডারেশনের যে কোনও কর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন। দল ও সাপোর্ট স্টাফ নির্বাচন থেকে শুরু করে কোন মাঠে খেলা হবে, কী ভাবে যাতায়াত করা হবে, সব সিদ্ধান্ত স্তিমাচের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এআইএফএফ তাতে নাক গলায়নি। একমাত্র সৌদি আরব যাওয়ার জন্য চার্টার্ড বিমানের যে আবেদন স্তিমাচ করেছিলেন, সময়ের অভাব থাকায় তা মানা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে তারা।

ভারতের প্রাক্তন কোচ অভিযোগ করেছিলেন, ফুটবলাররেরা ২০০ দিন ধরে জিপিএস ভেস্ট (জিপিএস লাগানো এক বিশেষ ধরনের জার্সি, অনুশীলনে ফুটবলারদের শারীরিক তথ্য সংগ্রহে কাজে লাগে) পাননি। তারও জবাব দিয়েছে ফেডারেশন। তারা জানিয়েছে, এশিয়ান গেমস খেলতে চিন যাওয়ার সময় বিমানে ফুটবলারদের জিপিএস ভেস্ট হারিয়ে গিয়েছিল। দলের ম্যানেজার ফেডারেশনকে তা জানিয়েছিলেন। ফেডারেশন বিমান সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছিল, জিপিএস ভেস্ট ফিরে পাওয়ার জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা পাওয়া যায়নি। তাই নতুন করে জিপিএস ভেস্ট কেনা হয়। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে তা চলে আসে। ভুবনেশ্বরে শিবির চলাকালীন ফুটবলারদের তা দেওয়া হয়। জিপিএস ভেস্ট ছাড়া ৫০ দিন অনুশীলন করতে হয়েছিল ফুটবলারদের। তার বেশি নয়।

স্তিমাচ কোচ থাকাকালীন অভিযোগ উঠেছিল যে জ্যোতিষীর কথা মেনে দল নির্বাচন করেছিলেন তিনি। সেই ঘটনা নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছিল। স্তিমাচের সাপোর্ট স্টাফ নির্বাচন নিয়েও অনেক প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু সেই সময় যাতে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনের প্রস্তুতিতে কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্য তারা স্তিমাচকে নিয়ে বিতর্ক থামাচাপা দিতে চেয়েছিল বলে জানিয়েছে ফেডারেশন।

কিন্তু তার পরেও স্তিমাচ ফেডারেশনকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা বার বার করেছেন বলে দাবি করেছে এআইএফএফ। ২০২৪ সালের মে মাসে মালয়েশিয়ায় একটি আলোচনাসভায় যোগ দিয়ে স্তিমাচ নাকি জানিয়েছিলেন, যে তাঁর সহকারীর সংখ্যা মাত্র চার জন। তাতে অনেকেই ভারতীয় ফুটবল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। ফেডারেশন জানিয়েছে, প্রতিটি প্রতিযোগিতার আগে শিবিরে ১৩ থেকে ১৬ জন সহকারী কোচ পেতেন স্তিমাচ। এশিয়ান কাপের জন্য এক জন অতিরিক্ত গোলকিপার কোচ ও ফ্রি কিক বিশেষজ্ঞ চেয়েছিলেন স্তিমাচ। তাঁকে সেটাও দেওয়া হয়েছিল।

স্তিমাচ জানিয়েছেন, ভারতীয় দলের কোচ থাকাকালীন হৃদ্‌যন্ত্রে অস্ত্রোপচার হয়েছিল তাঁর। পাল্টা এআইএফএফ জানিয়েছে, ফেডারেশনের গায়ে কালি লাগানোর জন্য এই সব কথা বলছেন স্তিমাচ। কারণ, কোচ থাকাকালীন নাকি স্তিমাচ ফেডারেশনকে জানাননি যে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়েছে। তা হলে এখন কেন এ সব কথা বলছেন তিনি? ফেডারেশনের দাবি, নিজের ব্যর্থতা ঢাকতেই ফেডারেশনকে কাঠগড়ায় তোলার চেষ্টা করছেন তিনি।

ফেডারেশন জানিয়েছে, স্তিমাচের সঙ্গে কথা বলেই তাঁকে সরাতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু স্তিমাচ পাল্টা নানা রকমের দাবি করতে থাকেন। অপেশাদার দাবি করতে থাকেন। সেই কারণেই স্তিমাচকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হয় তারা। পরবর্তী কোচ বাছার জন্য সময় দরকার ছিল ফেডারেশনের। সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। ভারতীয় ফুটবলের উন্নতির জন্য তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেই দাবি সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy