Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
আমি হয়তো অমর হয়ে থেকে যাব

বিদায় ফ্লাইং ডাচম্যান, বিদায় রাজপুত্র

শিকারি আর চোখ খুলবে না। শিল্পী আর বলবে না, কম্পিউটার আমাকে কী মাপবে। সবুজ গালিচায় তিনি ছিলেন একই সঙ্গে ধ্বংসের দূত এবং শিল্পের সৃষ্টিকর্তা। যাঁকে দেখা যেত, কিন্তু ছোঁয়া যেত না। যাঁকে নিয়ে স্ট্র্যাটেজি কষা হত, কিন্তু সেই স্ট্র্যাটেজি তাঁকে রুখতে পারত না।

জোহান ক্রুয়েফ। ১৯৭৪ বিশ্বকাপে আর্জেন্তিনার বিরুদ্ধে।

জোহান ক্রুয়েফ। ১৯৭৪ বিশ্বকাপে আর্জেন্তিনার বিরুদ্ধে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৬ ০৩:৩৩
Share: Save:

শিকারি আর চোখ খুলবে না। শিল্পী আর বলবে না, কম্পিউটার আমাকে কী মাপবে।

সবুজ গালিচায় তিনি ছিলেন একই সঙ্গে ধ্বংসের দূত এবং শিল্পের সৃষ্টিকর্তা। যাঁকে দেখা যেত, কিন্তু ছোঁয়া যেত না। যাঁকে নিয়ে স্ট্র্যাটেজি কষা হত, কিন্তু সেই স্ট্র্যাটেজি তাঁকে রুখতে পারত না।

তিনি আজ শান্ত হয়ে শুয়ে আছেন। কিন্তু আজও যে তাঁকে ধরা যাবে না, ছোঁয়া যাবে না। তিনি যে আজ বহুদূরে।

জোহান ক্রয়েফ ঘুমিয়ে পড়েছেন। ক্যানসার তাঁকে চিরদিনের মতো নিয়ে গিয়েছে এই পৃথিবী থেকে।

ফুসফুসের ক্যানসার থেকে ভুগছিলেন সেই ২০১৫ সাল থেকে। বৃহস্পতিবার সকালে, বার্সেলোনায়, নিজের আত্মীয় পরিজনদের মাঝে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ক্রুয়েফের সরকারি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘‘এই দুঃখের সময় সবার কাছে আমাদের আবেদন, পরিবাররকে একান্তে থাকতে দিন। ওদের প্রতি সম্মান দেখান।’’

যে সম্মানটা প্রতিপক্ষ থেকে সতীর্থ, সবার কাছ থেকেই পেয়ে এসেছিলেন ফ্লাইং ডাচম্যান। ফুটবলার হিসেবে, কোচ হিসেবে। তাঁর অনুমানক্ষমতা এবং ক্ষিপ্রতার সাহায্যে পুরো মাঠেই রাজত্ব চালাতেন বিশ্ব ফুটবলের প্রথম রাজপুত্র। এক দিকে ক্রুয়েফ ছিলেন ঘাতক, আবার এক দিকে পুরো সিস্টেমের পরিচালক। এই গোলকিপারের কাছ থেকে একটা গড়ানো বল পেয়ে জন্ম দিচ্ছেন একটা মুভের। বল পায়ে দৌড়তে দৌড়তে নির্দেশ ছুঁড়ে দিচ্ছেন সতীর্থদের। পরমুহূর্তেই দেখা যাচ্ছে বিপক্ষের বক্সের সামনে কোন যাদুমন্ত্রে ভেসে উঠছেন। ছিটকে দিচ্ছেন গোলকিপারকে। বল জড়িয়ে দিচ্ছেন জালে।

বর্তমান প্রজন্মের কাছে বিস্ময় গোলের স্থপতি বলতে জ্লাটান ইব্রাহিমোভিচের নাম ভেসে ওঠে। কিন্তু তার অনেক অনেক বছর আগে ক্রুয়েফের পা থেকে যে সব গোল বেরিয়েছে, তাকে একটা শব্দেই ব্যাখ্যা করা যায়— অকল্পনীয়।

মাধ্যাকর্ষণকে হার মানিয়ে, শরীরকে দুমড়ে মুচড়ে, কখনও এক পায়ে, কখনও গলা পর্যন্ত উঁচু ক্যারাটে কিকে, অবিশ্বাস্য অ্যাঙ্গেল থেকে সব গোল। যা কোনও মানুষ করতে পারে বলে ভাবা যায়নি।

ক্রুয়েফকে পরিসংখানে মাপতে গেলে কতগুলো তথ্য দেওয়া প্রয়োজন। যেমন, ন’টা ডাচ চ্যাম্পিয়নশিপ, তিনটে ইউরোপিয়ান কাপ, একটা স্প্যানিশ লিগ খেতাব, এক বার বিশ্বকাপে রানার্স। কোচ হিসেবেও জিতেছেন ইউরোপিয়ান কাপ, চারটে স্প্যানিশ লিগ।

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন।

ফুটবলার ক্রুয়েফের সঙ্গে যে নামটা প্রায় সমার্থক হয়ে গিয়েছে, সেটা হল, টোটাল ফুটবল। যেখানে কারও কোনও নির্দিষ্ট জায়গা নেই। পুরো মাঠ জুড়ে ওঠা-নামা করছে টিম। যে সিস্টেমের সঙ্গে গোটা বিশ্বের পরিচয় সেই ১৯৭৪ বিশ্বকাপে। যেখানে ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে বিশ্বকাপ অধরা থেকে যায় ক্রুয়েফের।

এরিক কঁতোনা বলেছিলেন, ‘‘ক্রুয়েফ চাইলে মাঠে যে কোনও পজিশনে সেরা ফুটবলার হতে পারতেন।’’ আর রিনাস মিশেলস বলেছিলেন, ‘‘ক্রুয়েফ ছাড়া আমার কোনও টিম হত না।’’

আর নিজের সম্পর্কে ক্রুয়েফ কী বলেছিলেন? ‘‘আমি বোধহয় অমর থেকে যাব।’’

ভুল বলেননি। ফুটবল ক্রুয়েফকে অমরত্বই দিয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

johan cruyff football football legend
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE