যুদ্ধের আগে। বৃহস্পতিবার আটলেটিকো অনুশীলনে হাবাসের সঙ্গে ফিকরু। ছবি: উত্পল সরকার।
ঘড়ির কাঁটায় তখন ঠিক পৌনে পাঁচটা। যুবভারতীর গেটের সামনে আটলেটিকো দে কলকাতার টিম বাস এসে দাঁড়ানোর পরেই উন্মাদনার আঁচটা ঢের পাওয়া গেল। শুধু কালো কালো মাথার ভিড়। আর মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তোলার চরম হুড়োহুড়ি।
তবে কী অদ্ভুত ব্যাপার!
নিরাপত্তা রক্ষীদের এড়িয়ে সবাই এত গুঁতোগুতি করে যতটা সম্ভব হাত উঁচু রেখে ফুটবলারদের ছবি তোলার জন্য তৈরি হলেও, ক্লিক করছেন না? বোরহা ফার্নান্ডেজ, হোফ্রে, আর্নাল থেকে শুরু করে অর্ণব-শুভাশিস এমনকী গার্সিয়াও স্টেডিয়ামের ভিতরে ঢুকে পড়লেন। কিন্তু না তাঁদের ছবি উঠল, না তাঁদের ঘিরে কোনও হইহুল্লোড়!
তবে হইহুল্লোড় কী হয়নি? জয়ধ্বনি, ঠেলাঠেলি-ও হয়নি? হয়েছে। যখন একেবারে শেষে ফিকরু নামলেন বাস থেকে। ইথিওপিয়ার স্ট্রাইকারকে ক্যামেরা-বন্দি করতে তখন আট থেকে আশি, সবাই তত্পর। কানে হেডফোন আর ভিড়ের দিকে হাত নাড়তে নাড়তে হেঁটে যাওয়ার ছবি যেন কেউ মিস করতে চাইছেন না! মাত্র ছ’ম্যাচেই ফিকরু যে ভাবে জনপ্রিয়তার চূড়ায় পৌঁছে গিয়েছেন, তাতে এখন কলকাতার আটলেটিকোর মার্কি ফুটবলারের নাম অনায়াসে বদলে ফেলা যেতে পারে!
ফিকরু যে শুধু বাইরের মহলেই জনপ্রিয়, সেটা কিন্তু নয়। টিমের অন্দরেও তাঁর চাহিদা প্রবল। যে দু’টো ম্যাচ তাঁকে ছাড়া খেলতে হয়েছে আটলেটিকোকে, সেই ম্যাচগুলোতে পুরো পয়েন্ট তো তুলতে পারেইনি। খেলার মানও কমেছে। নাতো যেমন বলছিলেন, “ফিকরু দলে থাকলে এমনিতেই আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। ও খেলা মানে গোল করা নিয়ে চিন্তা অনেকটা কমে যায়। আর ডিফেন্সে বাড়তি ভরসা থাকে, ও খেলছে।”
পুণের বিরুদ্ধে নামার আগে অবশ্য জোড়া স্বস্তি ফিরছে। মাঠে ফিকরু। সাইডলাইনের ধারে কোচ আন্তোনিও হাবাস। নিবার্সন কাটিয়ে ফের এই হিট জুটিকে এক সঙ্গে দেখা যাবে মাঠে। আর হয়তো সে জন্যই টিমের প্র্যাকটিসে একটা বাড়তি উচ্ছ্বাসের আবহাওয়া। বৃহস্পতিবার ফুটবলারদের ‘কুল ডাউন’ সেশন শুরু হয় দুপুরে সুইমিং পুলে। তার পরে বিকেলে প্র্যাকটিস শুরু ‘ফান ট্রেনিং’ দিয়ে। যেখানে সুইং বল, টেনিস বলের পরে এ বার নতুন সংযোজন ‘কক ট্রনিং’।
সেটা আবার কী? এ দিন যুবভারতীতে দেখা গেল, হাতে বল ছোড়াছুড়ি করছেন আর এক পা তুলে মোরগের ডাক দিচ্ছেন ফিকরু-সঞ্জুরা। অর্থাত্ যাঁর হাতে বল তাঁর মুখেই মোরগ-ডাক। কখনও ফিকরু ‘ক ক ক...’ করে উঠছেন আর গার্সিয়ারা হো হো করে হাসছেন। কখনও আবার গার্সিয়া ডাকছেন, ফিকরু-অর্ণবরা হাসছেন। এই ট্রেনিং থেকে কোচ হাবাসও বাদ গেলেন না। প্রায় চল্লিশ মিনিটের প্র্যাকটিসে বেশি ভাগ সময়ই হাসি-ঠাট্টার মধ্য দিয়ে কাটালেন আটলেটিকো-ফুটবলাররা। আর যেটুকু সময় স্ট্র্যাটেজি নিয়ে আলোচনা হল, তাতে বেশি উঠে আসে ইস্টবেঙ্গল স্ট্রাইকার ডুডুর নাম।
আসলে পুণে টিমে ত্রেজেগুয়ে না থাকায় ডুডুকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে আটলেটিকো টিমে। এমনকী ডুডুকে নিয়ে হাবাস এতটাই আগ্রহী যে, তাঁর শক্তি-দুর্বলতা জানতে ভারতীয় ফুটবলারদের সঙ্গে তো বটেই আলাদা করে টিম ম্যানেজার রজত ঘোষদস্তিদারের সঙ্গেও আলোচনা করছেন। টিম হোটেলে ফিরে প্রায় আধ ঘণ্টা কোচ-ম্যানেজারের বৈঠক হয়। দেখা হয় আগের ম্যাচের ভিডিও। জানা গেল, হাবাস তাঁর ফুটবলারদের বলেছেন, “ডুডু বল নিয়ে দারুণ হাফ টার্ন করতে পারে। বক্সের ভিতরে যাই হোক ওকে ঘুরতে দেওয়া যাবে না।” টিম সূত্রের খবর, ডুডুকে আটকাতে তাঁর ক্লাব ইস্টবেঙ্গলেরই সতীর্থ অর্ণব মণ্ডলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ দিন যিনি বলে গেলেন, “ক্লাব ফুটবলে ডুডু আমার সতীর্থ হলেও, শুক্রবারের ম্যাচে ও আমার প্রতিপক্ষ। ওকে গোল করতে দেব না। আমরা শপথ নিয়েছি লিগ শীর্ষে থেকে প্রথম পর্ব শেষ করব।”
আলোচনায় আরও একটা ব্যাপার যেটা উঠে এসেছে, সেটা হল পুণের মাঝমাঠ। আগের ভিডিও দেখে হাবাসের নির্যাস
১) দুই সাইড ব্যাক ওভারল্যাপে যাচ্ছে না।
২) উইং প্লে-ও কাজ করছে না। এবং
৩) সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে প্রচুর মিস পাস হচ্ছে।
তাই শুক্রবারের ম্যাচে ‘ডাউন দ্য মিডল’ দিয়েই আক্রমণ করতে চাইছেন কলকাতা কোচ। তবে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে পাঁচ গোল হজমের পরে যেভাবে প্রত্যাবর্তন করেছে পুণে, তাতে বিপক্ষকে কোনও ভাবেই হালকা ভাবে নিচ্ছেন না হাবাস। কেন না এ বার আর এক পয়েন্ট নয়। তিন পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছাড়তে মরিয়া তিনি। আর সেটা অসম্ভব নয়!
ফিকরুও মাঠে। তিনি নিজেও সাইডলাইনে। ‘ফাটাফাটি ফুটবল’ তো হওয়াই উচিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy