Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

ধোনির প্রাসাদ ঘিরে উৎসবের প্রস্তুতি

একই শহরে যেন দুই পৃথিবী! একটিতে সব চলছে গতানুগতিক পথে। অন্য পৃথিবী সরগরম পুজো-পাঠ, উৎসবের আগাম প্রস্তুতিতে। সিডনিতে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মহারণের আগে রাঁচির ছবিটা এখন এমনই। প্রথম পৃথিবীর নাম ‘শৌর্য্য’। রাঁচির হরমু বাইপাসের লাগোয়া প্রাসাদোপম সেই পৃথিবী ‘গড়েছেন’ মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। কিন্তু বিশ্বকাপ নিয়ে ঘরের ছেলের ব্যক্তিগত আবেগের সুলুকসন্ধান নেই শৌর্য্যের বাসিন্দাদের কাছে।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
রাঁচি শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৫ ০৪:২৫
Share: Save:

একই শহরে যেন দুই পৃথিবী!

একটিতে সব চলছে গতানুগতিক পথে। অন্য পৃথিবী সরগরম পুজো-পাঠ, উৎসবের আগাম প্রস্তুতিতে।

সিডনিতে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে ভারত-অস্ট্রেলিয়া মহারণের আগে রাঁচির ছবিটা এখন এমনই।

প্রথম পৃথিবীর নাম ‘শৌর্য্য’। রাঁচির হরমু বাইপাসের লাগোয়া প্রাসাদোপম সেই পৃথিবী ‘গড়েছেন’ মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। কিন্তু বিশ্বকাপ নিয়ে ঘরের ছেলের ব্যক্তিগত আবেগের সুলুকসন্ধান নেই শৌর্য্যের বাসিন্দাদের কাছে। ভারতের ‘ক্যাপ্টেন কুল’-এর মনে এখন কী চলছে, তা জানাতে পারেননি বাবা পান সিংহ, মা দেবকীদেবীর মতো পরিবারের অন্য লোকেরাও। বিশ্বকাপে মাহির খেলা নিয়ে বাড়তি উচ্ছ্বাস নেই তাঁদের কারও। বরং ভারত পর পর দু’বার বিশ্বকাপ জেতে কি না, সে দিকেই নজর রেখেছেন সকলে।

যেমন গৌতম গুপ্ত। সম্পর্কে ধোনির ভগ্নীপতি। ধোনি পরিবারের এক মাত্র মুখপাত্রও। শিলিগুড়ি থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে জানালেন বিশ্বকাপের সব খেলা দেখছেন পান সিংহ। তিনি খেলার অনুরাগী। ক্রিকেট বা ফুটবল সবেতেই তাঁর আসক্তি। কিন্তু ধোনির মা দেবকীদেবী, বোন জয়ন্তী সময় পেলে তবেই খেলা দেখেন। গৌতমের কথায়, “আমি শিলিগুড়িতে রয়েছি। সেমিফাইনাল এখানেই দেখব। যদি ভারত ফাইনালে ওঠে, তবে রাঁচিতে ফিরে তা দেখতে চাই। ধোনি ভাল খেলুক। তবে আমরা সবাই চাই ভারত কাপটা জিতুক।”

সে ক্ষেত্রে ‘শৌর্য’তে এক সঙ্গে বসেই কি ফাইনাল দেখবেন ধোনি পরিবারের সদস্যরা? তার স্পষ্ট ছবি অবশ্য মেলেনি।

ঘরের ছেলে দেশের অধিনায়ক। ভারত বিশ্বকাপ জিতলে পর পর দু’বার তা জয়ের শিরোপা দেশে আসবে ধোনি পরিবারের ছোট ছেলের হাত ধরেই। সেখানে বিশ্বকাপ নিয়ে উত্তেজনা উধাও কেন?

ধোনির প্রাক্তন কোচ চঞ্চল ভট্টাচার্যের কথায়, “ধোনির পরিবার এখনও মাটির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন। ছেলে ভারতীয় দলের অধিনায়ক বলে তাঁর সঙ্গে দেশ-বিদেশ ঘুরতে যান না পান সিংহ। তাঁরা বাড়িতে বসেই খেলা দেখেন।”

এ নিয়ে রাঁচিতে একটি মজার গল্প শোনা যায়। এক বার রনজি ট্রফি দেখতে ছেলের সঙ্গে মাঠে গিয়েছিলেন পান সিংহ। সে বার মাহি শূন্য রানেই আউট হয়ে যান। তার পর থেকে নাকি মানসিক চাপমুক্ত থাকতে ধোনি নিজেই পরিবারের সদস্যদের মাঠে যেতে বারণ করে দেন। দীর্ঘ দিন পান সিংহরা ছেলের খেলা দেখতে মাঠে যেতেন না। দু’বছর আগে রাঁচিতে নতুন ক্রিকেট স্টেডিয়াম তৈরির পর মাঝেমধ্যে খেলা দেখতে যান তাঁরা।

ধোনিরা গাড়োয়ালি সম্প্রদায়ের। রাঁচিতে ওই সম্প্রদায়ের একটি সংগঠনের সভাপতি পান সিংহ। সেটির এক সদস্য বলেন, “ধোনির সদ্যেজাত মেয়ে জিবাকে নিয়ে ওঁরা ব্যস্ত। যদিও পুত্রবধূ সাক্ষী মেয়েকে নিয়ে গুরগাঁওতে রয়েছেন। তবে পান সিংহরা নাতনিকে দেখে এসেছেন। মাহিই শুধু সে সুযোগ পাননি।”

ভগ্নীপতি গৌতমের কথায়, “বাবা তাঁর মেয়ের কথা মনে করবে না, তা হতে পারে না। কিন্তু এখন ওঁর কাঁধে অনেক বড় দায়িত্ব। আমাদের সঙ্গে কথা বলার সময়ও নেই। কোয়াটার ফাইনালে জয়ের পর এক বার কথা হয়েছিল।” শৌর্য্যের বাইরের পৃথিবী কিন্তু ক্রিকেট জ্বরে আক্রান্ত। শহরের ছেলেকে ঘিরে ছড়িয়েছে তুমুল আশা-আকাঙ্খা। ধোনি-ভক্তরা বলছেন, বাবা হওয়ার পরও শুধু মাত্র দেশের জন্য মাহি এখনও মেয়ের মুখ দেখেননি।

গত বার বিশ্বকাপের পর ধোনিকে ৫ লক্ষ টাকা পুরস্কার দিয়েছিল ঝাড়খণ্ড ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন। ভারত যদি এ বারও জেতে, তা হলে কী উপহার পাবে ধোনি বাহিনী?

প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি তথা বিসিসিআইয়ের যুগ্মসচিব অমিতাভ চৌধুরী বললেন, “জেতে মানে কী? জিতে গেছে বলুন। এমন উৎসব হবে, যা আগে কেউ দেখেনি।” কিন্তু সেমি-ফাইনালে সামনে যে অস্ট্রেলিয়া? অমিতাভ মন্তব্য, “দেশের কথা ভেবে যে নিজের মেয়ের মুখ পর্যন্ত দেখল না, তাঁর ত্যাগ কখনও বিফল হতে পারে না।”

ক্রিকেটে মেতেছে গোটা শহর। হরমু, মেকন, কোকরের মতো পাড়ার অলিগলিতে ঝুলছে ধোনি বাহিনীর কাট-আউট। ফুলের মালায় ঢাকা সে সব। আজ দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে নিউজিল্যাণ্ড ফাইনালে উঠেছে। তার পরই ধোনিদের জয়ের জন্য যজ্ঞ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্রিকেট অধিনায়কের ভক্তরা। ধোনি ফ্যান ক্লাবের সদস্য জিতেন্দ্র সিংহ বলেন, “সেমিফাইনালে ওঠার পরও যজ্ঞ হয়েছিল। আসলে ফাইনাল তো হবে বৃহস্পতিবারই। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তাই তার আগের দিনও যজ্ঞ করা হবে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE