চর্চায়: বিদায়বেলায় মুলারকে সান্ত্বনা কোচ লো-র। গেটি ইমেজেস
ইউরো ২০২০ শুরু হওয়ার আগে থোমাস মুলারদের নিয়ে জার্মানির অধিকাংশ মানুষই খুব একটা আশাবাদী ছিলেন না। কেউ কেউ তো ধরেই নিয়েছিলেন, গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেবে জার্মানি। ইউরোর প্রথম ম্যাচে ফ্রান্সের কাছে হারের পরে আরও উৎসাহ কমে গিয়েছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে পর্তুগালকে হারিয়ে টোনি খোস-রা দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন ঘটানোর পরে আবার চেনা উন্মাদনা ফিরেছিল। মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন, এই জার্মানি যে কোনও দলকে হারাতে পারে। ইউরোপ সেরা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেও শুরু করেছিলেন তাঁরা।
ইংল্যান্ডকে হারাতে পারলে জার্মানির চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল ছিল বলে জার্মানির মানুষ মনে করেছিলেন। কল্পনাও করতে পারেননি, মঙ্গলবার ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ৫৫ বছর পরে নক-আউট পর্যায়ে ইংল্যান্ডের কাছে হেরে যাবে তাঁদের দেশ। অবিশ্বাস্য ভাবে বল বাইরে মারবেন মুলার। যিনি এত গোল করেছেন। জার্মানিকে অসংখ্য ম্যাচে জিতিয়েছেন। সেই মুলার কি না এ ভাবে ব্যর্থ হলেন! অনেককেই বলতে শুনলাম, “মুলার তুমিও!”
মঙ্গলবার ওয়েম্বলিতে ৭৫ মিনিটে রাহিম স্টার্লিং গোল করে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে দেওয়ার পরেও জার্মানির মানুষ আস্থা হারাননি। মনে করেছিলেন, তাঁদের প্রিয় দলের ঘুরে দাঁড়ানো এখন সময়ের অপেক্ষা। ৮১ মিনিটে সেই সুযোগও চলে এসেছিল। মুলারের মতো ফুটবলার সামনে একা ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ডকে পেয়েও গোল করতে পারবেন না? ম্যাচের পরে গণমাধ্যমে ক্ষমা চেয়ে তিনি লিখেছেন, “আমি সতীর্থ, কোচ ও জার্মানির সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চাইছি। আপনাদের আস্থার মর্যাদা দিতে পারিনি।” ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে হারের জন্য মুলারকে অবশ্য কেউ কাঠগড়ায় তুলছেন না। ক্ষোভের কেন্দ্রে কোচ ওয়াকিম লো।
বুধবার জার্মানির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেটের উচ্ছ্বসিত প্রশংসার পাশাপাশি সমালোচনা করা হয়েছে লো-র। বলা হয়েছে, সমর্থকদের বিভ্রান্ত করেছেন জার্মান কোচ। প্রথম ১০ বছর দারুণ কাজ করেছেন তিনি। ২০১৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে ৭-১ হারিয়েছিল জার্মানি। লো চ্যাম্পিয়ন করেছেন দেশকে। কিন্তু শেষ পাঁচ বছরে তিনি উল্লেখযোগ্য কিছুই করতে পারেননি। তাঁর দল নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে গিয়েছিল জার্মানি। সেই সমস্যা কিন্তু এখনও রয়ে গিয়েছে। লো তা হলে এত দিন কী করলেন? স্পেনের বিরুদ্ধে ০-৬ হারতে হয়েছে জার্মানিকে। য়ুর্গেন ক্লিন্সম্যান, বাস্তিয়ান সোয়াইনস্টেইগারও সমালোচনা করেছেন লো-র।
জার্মানদের একটা বড় অংশ মনে করছেন, লো খুব গোঁড়া ছিলেন। যে রণনীতিতে এক বার সাফল্য পেয়েছেন, সেটাকেই আঁকড়ে ধরে থাকতেন। নতুন রণকৌশল প্রয়োগ করতেন না। দ্বিতীয়ত, জার্মানির এই দলটার প্রধান সমস্যা ছিল গোল করে ম্যাচ জেতানোর মতো ফুটবলারের অভাব। গার্ড মুলার, য়ুর্গেন ক্লিন্সম্যান, মিরোস্লাভ ক্লোজ়ের মতো স্ট্রাইকারদের উত্তরসূরি কি না টিমো ওয়ের্নার! তা হলে কি বুন্দেশলিগা থেকে ভাল মানের স্ট্রাইকার এখন আর উঠে আসছেন না? সকলেই জানেন মানসিক ভাবে জার্মানরা প্রচণ্ড আগ্রাসী। হার-না-মানা মনোভাবের জন্যই যোদ্ধা বলা হয় তাঁদের। দু’গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ার পরেও তিন গোল দেওয়ার ক্ষমতা ছিল জার্মানির। লো-র দলের মধ্যে সেই আগ্রাসনই উধাও হয়ে গিয়েছিল। ইংল্যান্ডের কাছে হারের যন্ত্রণার মধ্যেও অনেকে আগামী বছর বিশ্বকাপে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন। কারণ, এ বার দায়িত্বে আসছেন হ্যান্সি ফ্লিক। নতুন কোচের ভাবনা-চিন্তা অনেক বেশি উদার ও নমনীয়। তবে এখন যা পরিস্থিতি, ফ্লিককে নতুন ভাবে দল গড়ে তুলতে হবে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে হারের পরেই টোনি খোস জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছেন। আরও হয়তো কয়েক জন ওঁর পথ অনুসরণ করতে পারেন। এঁদের পরিবর্ত খোঁজার পাশাপাশি ফ্লিককে এমন এক জন স্ট্রাইকার তুলে আনতে হবে, যিনি গোলটা খুব ভাল চেনেন। কাতার বিশ্বকাপের কিন্তু খুব বেশি দেরি নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy