নায়ক: সমর্থকদের মন জয় করে নিলেন চুলোভা। —নিজস্ব চিত্র।
যখন ঝুঁটি বেঁধে থাকেন তখন তাঁকে মাঠে আলাদা করে চেনা যায়। ড্রেসিংরুমে এসে যখন তা খুলে ফেলেন তখন তাঁকে টিমের বাকি পাহাড়ি ছেলেদের মধ্যে থেকে খুঁজে পাওয়া কঠিন।
হিন্দি বা ইংরেজি বলতে পারেন না। আর যখন মিজো ভাষায় কথা বলেন বছর কুড়ির লালরাম চুলোভা, তখন সেটা বোঝার জন্য ডেকে আনতে হয় তাঁর অভিন্ন হৃদয় বন্ধু ব্র্যান্ডন ভানলালরেমডিকাকে।
গতবারের আই লিগ চ্যাম্পিয়ন আইজল এফ সি-র জার্সি গায়ে চমকে দেওয়ার পর লাল-হলুদে এসে প্রথম দিন থেকেই ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবেল’। ‘‘আমি সব জায়গাতেই খেলতে পারি। লেফট, রাইট, সেন্ট্রাল মিডিও। যেখানে খেলাবেন কোচ। খেলে দেব। কোনও সমস্যা নেই।’’ আইজলের গ্রাম আরমেড জেং-এ বেড়ে ওঠা চুলোভার বাবা পেশায় ছুতোর। চুলোভা যখন বাড়িতে যান বাবার সঙ্গে কাঠের কাজে হাত লাগান। চেহারার মধ্যেও অদ্ভুত কাঠখোট্টা ভাব। উইং প্লে বা রক্ষণ আঁটোশাটো—চুলোভার মধ্যে দু’টো গুণেরই মিশেল। গত কয়েক বছর রবার্ট, নারায়ন দাশরা লাল-হলুদের লেফট ব্যাক খেলেছেন। তাঁরা আইএসএল চলে যাওয়ায় তাই কোনও ক্ষতি হয়নি পাহাড়ি টাট্টু ভাল খেলায়। খালিদ জামিলের মতো চরম সংযত মানুষও চুলোভার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ‘‘ছেলেটার সবথেকে বড় গুণ খেলা থেকে কখনও হারিয়ে যায় না। চাপের মুখেও ভেঙে পড়ে না। শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়ে যায়।’’
শনিবার যখন পিয়ারলেস চেপে ধরেছে ইস্টবেঙ্গলকে, তখনও তাঁর পাশ দিয়ে একটা বলও নিয়ে যেতে পারেনি রহিম নবির টিম। বরং ইস্টবেঙ্গলের পাঁচটি গোলের মধ্যে তাঁর লম্বা পাস থেকে করা সুরাবুদ্দিনের হাফ ভলিতে করা দু’নম্বর গোলটাই সেরা ম্যাচের। বলছেন স্বয়ং সুরাবুদ্দিনই। ‘‘চুলোভা বলটা এত ভাল জায়গায় রেখেছিল যে একেবারে পড়ার আগেই হাফ ভলিটা মেরেছি।’’
খালিদ জামিলের সঙ্গে আইজল থেকে আরও যে তিন ফুটবলারকে নিয়েছেন ইস্টবেঙ্গল কর্তারা তাদের মধ্যে চুলোভা সম্ভবত সবথেকে প্রতিভাবান। কোনও অ্যাকাডেমি নয়, একেবারেই পাহাড়ের রুক্ষ জমির ফসল চুলোভা। প্রথমে আইজলের দুটো ছোট ক্লাবে খেলার পর এসে পড়েন খালিদের হাতে। ইস্টবেঙ্গলে এসে এত দর্শকের সামনে খেলতে ভয় লাগে না? চুলোভা হেসে ফেলেন। ‘‘আইজলের চেয়েও ইস্টবেঙ্গল সমর্থদের টিম নিয়ে অবেগ বেশি। ভয় পাব কেন? বেশ উপভোগ করছি।’’ তাঁর আরও বড় সুবিধা টিমে চার বছর একই সঙ্গে খেলা বন্ধু ব্র্যান্ডনের উপস্থিতি। খালিদও তাই টিম তৈরির সময়, চুলোভার সঙ্গে ব্র্যান্ডনের জুটিকে ব্যবহার করছেন। আইজলের ফসল লানোর চেষ্টা করছেন ইস্টবেঙ্গলে।
সুরাবুদ্দিন, গ্যাব্রিয়েলের পাশাপাশি এ দিন দেখা গেল চুলোভার সঙ্গে সেলফি তোলার জন্য লাল-হলুদ সমর্থকদের হুড়োহুড়ি। যা মনে হয় ছুঁয়ে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গল কোচকেও। এ দিন ম্যাচের পর খালিদ জামিল তাই বলে দিলেন, ‘‘বিরতিতে ১-১ থাকার সময় একটু চাপে পড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি জানতাম ছেলেরা ফিরবেই। টিম জিতবে।’’ টিমে খেলোয়াড় ঢোকানোর জন্য কর্তারা চাপ দেন, ট্রেভর মর্গ্যানের মতো কোচও কিছুদিন আগে এই অভিযোগ করে গিয়েছেন। কিন্তু এ দিন খালিদ বরং প্রশংসা করলেন এক শীর্ষ কর্তার, পরামর্শ দেওয়ার জন্য। বললেন, ‘‘হাফ টাইমে নিতু দা (দেবব্রত সরকার) বললেন সুরাবুদ্দিনকে নামা, গোল হয়ে যাবে। তাই করলাম। হ্যাটট্রিক হয়ে গেল।’’ খালিদ প্রশংসা করেন সুরাবুদ্দিনেরও। বললেন, ‘‘পরিশ্রমী ছেলে। গোলটা চেনে। ঠিক সময় গোলের সামনে পৌঁছে যায়।’’
এ দিকে, উইলস প্লাজা এবং কার্লাইল মিচেল চলে যাচ্ছেন দেশের হয়ে খেলতে। জাতীয় শিবিরে রয়েছেন অর্ণব মন্ডল, মহম্মদ রফিক-সহ চার ফুটবলার। এই অবস্থায় লিগে তাদের ম্যাচ না দেওয়ার জন্য আই এফ এ-কে অনুরোধ করতে চলেছে লাল-হলুদ শিবির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy