টিম গেমে মাঝে মাঝে এমন সময় আসে যখন পুরো স্পটলাইট চলে যায় একজনের উপর।
এই মুহূর্তে যা হচ্ছে বিরাট কোহালিকে নিয়ে।
বিরাটের সঙ্গে জড়িত সব কিছুই এখন বাজারে দারুণ বিক্রি হচ্ছে— ওর ক্রিকেট, ওর হেয়ারস্টাইল, ওর দাড়ি, ওর টুইট, হয়তো বা ওর পুরনো টুথব্রাশও! এই নতুন ট্রেন্ডটাকে ব্যাখ্যা করতে একটা শব্দ ব্যবহার হচ্ছে— কোহালিফাইড। পুরো ব্যাপারটা কিন্তু আমার দারুণ লাগছে। কারণ আমার মনে হয়, এই তরুণের এই সব কিছু, এর চেয়েও অনেক বেশি প্রাপ্য। তবে পাশাপাশি টিমের বাকিদের জন্য খারাপ লাগছে। বিরাটের তুলনায় ওদের নিশ্চয়ই নিজেদের লিলিপুটের মতো লাগছে।
আমি এমন কিছু টিমের সদস্য ছিলাম যেখানে অরিজিন্যাল ‘গ্রেট ম্যান’ খেলত। সচিন তেন্ডুলকরের কথা বলছি। ২০০৭-’০৮ অস্ট্রেলিয়া সফরের কথা মনে আছে। ওই সফরে স্থানীয়দের যাবতীয় মনোযোগ পেত সচিন পাজি। যত বার খেলতে নামত মাঠে, তত বার সবাই উঠে দাঁড়িয়ে ওকে অভিবাদন জানাত। যত বার আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরত, তত বার আবার স্ট্যান্ডিং ওভেশন পেত। আমার মতো নগণ্য মানুষ বুঝতেই পারতাম না, এ সব কী হচ্ছে। কারণ ওই প্রথম বার দেখছিলাম যে একজন ব্যাটসম্যান বিশেষ রান না করে আউট হওয়া সত্ত্বেও গ্যালারির বাহবা পাচ্ছে। টিমে সব সময় পাজি জনপ্রিয় ছিল। মনোযোগের ভারসাম্যের এই অভাব নিয়ে তাই কারও আপত্তি ছিল না।
কোনও কোনও ব্যক্তি আবার এই সত্যটা উপভোগ করে যে, তাদের উপর কারও বিশেষ মনোযোগ নেই। বাকিরা যখন দেখনদারি নিয়ে ব্যস্ত, তারা তখন চুপচাপ নিজেদের খেলা নিয়ে পড়ে থাকে। আমি নিশ্চিত টিম ইন্ডিয়ার বর্তমান ড্রেসিংরুমের অবস্থা ঠিক এ রকমই। আজ, বৃহস্পতিবারের সেমিফাইনালে টিম যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মোকাবিলার প্রস্তুতি করবে, তখন কেউ কেউ দর্শকের মন পেতে মুখিয়ে থাকবে। ওদের বলতে হবে, ওদের মনে করিয়ে দিতে হবে যে, ওরাও ভাল ক্রিকেটার। টিমটায় শুধু বিরাটই একমাত্র সদস্য নয়। বাকিরাও চাইবে মিডিয়া ওদের নিয়ে আলোচনা করুক। ফটোগ্রাফাররা ওদের দুর্দান্ত কভার ড্রাইভের ফ্রেম ক্যামেরাবন্দি করুক। ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা ওদের টেকনিকের প্রশংসা করুন। আমার মনে হয় এখানেই টিম ম্যানেজমেন্টের ভূমিকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। এটা নিয়ে ওদের প্রোঅ্যাক্টিভ হতে হবে।
বুধবার ওয়াংখেড়েতে জাতীয় নির্বাচকদের সঙ্গে ধোনি-শাস্ত্রী। -উৎপল সরকার
টিম ডিরেক্টর রবি শাস্ত্রী আর ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গার, দু’জনেরই এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা উচিত। ওঁরা দু’জনেই এমন সব টিমে খেলেছেন যেখানে তারকার ছড়াছড়ি ছিল। আর তাই ওঁরা নিশ্চয়ই জানেন, সব কিছু যখন ওয়ান ম্যান শো-এ পরিণত হয় তখন কম প্রতিভাবানদের মানসিক অবস্থা কেমন দাঁড়ায়। একটা ব্যাপার খুব জরুরি। অত্যধিক প্রশ্রয়ী বাবার মতো সাধারণ সন্তানকে খুব বেশি বকাঝকা করে তার সামনেই অন্য সন্তানটির বাড়াবাড়ি রকম প্রশংসা করা— এটা যেন একদম না হয়। টিমের বাকি সদস্যদের মনে করাতে হবে যে, ওরাও সব কিছুর অংশ। আমি কী বলছি, সঞ্জয়ের সেটা বোঝা উচিত। ও বহু বছর রেলওয়েজ রঞ্জি টিমের সদস্য ছিল। যে টিমে এক মুরলী কার্তিককে বাদ দিলে কোনও দিনই বিশাল তারকা খেলেনি।
এক দিক দিয়ে দেখলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ টিমটাও এক রকম চ্যালেঞ্জের সামনে। আমাদের হিরো যেমন বিরাট, ওদের তেমন ক্রিস গেইল। ওদের টিমের একটা ব্যাপার আমার বেশ ভাল লাগলে। টিমের বাকিরা ঘড়ি ধরা রুটিনে ট্রেনিং করে। কিন্তু ওরা ক্রিসকে নিজের মতো ছেড়ে দেয়। ওর যখন যেটা মনে হয়, তখন সেটা করে।
যাই হোক, বৃহস্পতিবারের যুদ্ধের দিকে গোটা ক্রিকেটবিশ্ব তাকিয়ে আছে। লড়াইটা কিন্তু বেশ মশলাদার। পিচের চরিত্র নিয়ে প্রচুর তত্ত্ব হাওয়ায় ভাসছে। আমার মনে হয় ওয়াংখেড়ের উইকেট ফ্ল্যাট আর প্রচুর রানে ভর্তি হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেটা উপভোগ করবে। এটা বলছি বটে। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও বলতে হবে যে, ভারতই পরিষ্কার ফেভারিট। কারণ আমার মনে হয়, জেতার শৃঙ্খলাটা আমার ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বন্ধুদের মধ্যে নেই। যদি না আমাদের টিম কোহালি-ম্যানিয়া নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলে ম্যাচটা হেরে বসে।
(হকআই কমিউনিকেশন্স)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy