এফডি ব্লকের অনুষ্ঠানে দীপা কর্মকারকে মুকুট পরাচ্ছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
ছোট্ট ছোট্ট হাতগুলো তাঁকে এক বার ছুঁয়ে দেখার জন্য ছটফট করছে। তুমুল ভিড়ে কারও সেলফি তোলার আবদার। কেউ ব্যস্ত ভিডিও রেকর্ডিংয়ে।
রবিবার দমদম বিমানবন্দর থেকে হোটেল। শিবপুরে দিদির বাড়ি থেকে এফডি ব্লকের মাঠ— স্থান আলাদা হলেও ছবি এক। ক্যামেরার সব আলো এক দিকেই তাক করা! প্রবল হুড়োহুড়ি। বাউন্সারদের ছড়াছড়ি। উন্মাদনার ডেসিবেল এতটাই তীব্র যে, মনে হতে পারে বিরাট কোহালি কিংবা মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মতো কোনও মহাতারকা ক্রিকেটার এসেছেন!
না, বিরাট আসেননি। ধোনিও নন। রবিবার শহরের তাপমাত্রা অনেক ডিগ্রি বাড়িয়ে দিলেন জিমন্যাস্ট দীপা কর্মকার। অলিম্পিক্সে তাঁর ইভেন্টের তেত্রিশ দিন পর প্রথম কলকাতায় পা দিয়েই।
রীতিমতো ঘোড়ার গাড়িতে চেপে সল্টলেক এফডি ব্লকের পুজো থিম ‘যন্ত্রম’-এর উদ্বোধন করতে এ দিন এসেছিলেন দীপা। তবে শুধুই এফডি পার্ক? গোটা শহরকে আলোর রোশনাইয়ে ভাসিয়ে দিয়ে গেলেন তিনি। শিবপুরে যে দিদির বাড়ির কথা উপরে লেখা হয়েছে, তা আদতে তাঁর কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দীর দিদির বাড়ি। যেখানে বিশ্বেশ্বর গেলেন দীর্ঘ ষোলো বছর পর! এবং শুধু যে শহরে আবেগের অন্তহীন স্রোতে দীপা ভেসে গেলেন, তা নয়। নতুন শপথও নিলেন। বাইলস বধের শপথ। বললেন, ‘‘আমার দেখা বিশ্বের সেরা জিমন্যাস্ট সিমোন বাইলস। টোকিওতে বাইলসকে হারিয়েই পদক জিততে চাই।’’
বাইলস-কাঁটা তিনি আদৌ উপড়ে ফেলতে পারবেন কিনা, সেই উত্তর ভবিষ্যতের ডায়রিতে বন্দি। তবে ত্রিপুরার অগ্নিকন্যার আগমনে শহরে দেবীপক্ষের আগে যে ‘দীপাপক্ষ’ শুরু হয়ে গেল, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে বাংলার রঞ্জিজয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ফুটবলার বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, বিধায়ক সুজিত বসু সবার মুখে শুধুই দীপা-বন্দনা। বিশ্বজিৎ বলে ফেললেন, ‘‘অলিম্পিক্স যে কোনও স্পোর্টসম্যানের স্বপ্ন। এই জন্মে তো আর হল না। সেই বয়স পেরিয়ে এসেছি। তবে পুনর্জন্ম পেলে দীপা হয়ে জন্মাতে চাই।’’ এ দিনের অনুষ্ঠানে দীপাকে তো সংবর্ধনা দেওয়া হলই। দীপা নিজেও সংবর্ধনা দিলেন আনন্দবাজারের রতন চক্রবর্তী সহ-আরও ছ’জন ক্রীড়া সাংবাদিককে। যাঁরা অলিম্পিক্স কভার করতে গিয়েছিলেন। পুজোর প্রধান উদ্যোক্তা প্রদীপ সেনগুপ্ত বলছিলেন, ‘‘দীপার শর্ত ছিল ওকে সংবর্ধনা দিলে বাকি সাত জন সাংবাদিককেও সংবর্ধনা দিতে হবে। আর সেটা ও নিজে হাতে দেবে।’’ দীপার যে মহানুভবতা মুগ্ধ করছে সবাইকে।
কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দীকে সংবর্ধনা দিচ্ছেন সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য। রবিবার।
বাংলা অবশ্য একা নয়। অমিতাভ বচ্চন থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গোটা দেশই এখন দীপা-মুগ্ধতায় ডুবে। দীপা বলছিলেন, ‘‘শনিবার এক অনুষ্ঠানে অমিতাভ স্যারের সঙ্গে দেখা হয়। ওঁর সঙ্গে একটা ছবি তুলব বলে অনুরোধ করেছিলাম। তাতে উনি বলেন, একটা কেন দশটা তোলো। আমি আধ ঘণ্টা তোমার জন্য দাঁড়িয়ে আছি।’’ প্রধানমন্ত্রী তো আবার এক ধাপ এগিয়ে। তিনি দীপাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যে কোনও দরকারে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন দীপা। এমনকী চাইলে টুইটারেও সমস্যার কথা জানাতে পারেন। দীপার কোচ বলছিলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনেকক্ষণ কথা হয়েছে। দীপার প্র্যাকটিসে যাতে সমস্যা না হয়, সেটা নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন উনি। এ বার দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল আমাদের।’’
তারকার সারা দিন হোটেলে ব্রেকফাস্টের আগে।
অলিম্পিক্সের পরে সে ভাবে এখনও প্র্যাকটিস শুরু না করলেও, রোজ বিকেলে নিয়মিত সাড়ে তিন ঘণ্টা জিম করছেন দীপা। আসলে দুর্গা পুজোর আগে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আর ফিতে কাটার আবদার মেটাতেই বেশির ভাগ সময় চলে যাচ্ছে। এখনও পর্যন্ত যা ঠিক হয়ে আছে তাতে গোটা পুজো এ বার বাড়িতেই কাটাবেন দীপা। আর পুজোর পরে পরিবার নিয়ে ছুটি কাটাতে সোজা আন্দামান উড়ে যাচ্ছেন। দীপা বলছিলেন, ‘‘পাঁচ বছর পর পুজোতে বাড়ি থাকব। চুটিয়ে ঠাকুর দেখব, ঘুরব আর খাব। একটাও প্যান্ডেল বাদ দেব না।’’ যা শুনে বিশ্বেশ্বরবাবুর মন্তব্য, ‘‘পুজো পর্যন্ত ওর ছুটি। যা ইচ্ছে করে নিক। তার পরে সব উসুল করে নেব।’’ গুরু সংবর্ধনা না পেলেও একটা অভিনব পুরস্কার পেলেন। ক্ষিদ্দা পুরস্কার— যা এফডি ব্লকই প্রথম চালু করল।
সংবর্ধনা। ফিতে কাটা। দুর্গাপুজো। আন্দামান। সব কিছু নিয়েই চরম ব্যস্ততা দীপার। শেষ তিন রাত ঠিক মতো ঘুমোতেও পারেননি। কিন্তু ক্লান্তির কোনও ছায়া তাঁর চোখে মুখে নেই। কোচেরও নেই। উল্টে সব কিছুকে ছাপিয়ে যেন একটা অদৃশ্য জেদ উঁকি মারছে। একটা সুস্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে।
টোকিও আই অ্যাম কামিং!
ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy