E-Paper

চলছে নতুন জুয়া, মুক্তাঞ্চল জমি-মাফিয়ার

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এই জুয়া খেলতে এসে প্রতিদিন সর্বস্বান্ত হচ্ছেন অনেক যাত্রী। আর প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা উড়ছে। অভিযোগ, সেই টাকার ভাগ যাচ্ছে রেল পুলিশ, আরপিএফ এবং হাওড়া সিটি পুলিশের একাংশের কাছে।

জুয়া খেলতে এসে প্রতিদিন সর্বস্বান্ত হচ্ছেন অনেক যাত্রী।

জুয়া খেলতে এসে প্রতিদিন সর্বস্বান্ত হচ্ছেন অনেক যাত্রী। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ০৫:৫৩
Share
Save

রাতে শালিমার স্টেশনে ট্রেন ধরতে এসে অনেকেরই চোখে পড়ে ঘটনাটা। দেখেন, স্টেশন বিল্ডিং যেখানে শেষ হচ্ছে, তার উল্টো দিকে একটা বোর্ডকে ঘিরে ভিড় জমে প্রতিদিন। অধিকাংশ যাত্রী ভাবেন, বোধহয় ক্যারম খেলা হচ্ছে। খোঁজ করলেই জানা যাবে, ওখানে আমদানি হয়েছে নতুন ধরনের জুয়ার। নাম — ‘স্টাইর্গার’। চালাচ্ছে সিন্ডিকেটের মাথারা।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এই জুয়া খেলতে এসে প্রতিদিন সর্বস্বান্ত হচ্ছেন অনেক যাত্রী। আর প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা উড়ছে। অভিযোগ, সেই টাকার ভাগ যাচ্ছে রেল পুলিশ, আরপিএফ এবং হাওড়া সিটি পুলিশের একাংশের কাছে। তাই চোখের সামনে এই জুয়া চললেও এখনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এই অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন রেল পুলিশ, আরপিএফ বা হাওড়া সিটি পুলিশের আধিকারিকরা। যেমন ডিআইজি রেল এস সেলভামুরুগান বলেছেন, ‘‘প্রথমত রেলের এলাকায় এ সব জুয়া, সাট্টা বা অন্য কোনও অপরাধ হচ্ছে কি না তা দেখতে হবে। কারণ, স্টেশনের বাইরে মাত্র ১০ ফুট এলাকা আমাদের। তবুও এর মধ্যে কোনও রেল পুলিশ টাকা নিচ্ছে কি না তা খতিয়ে দেখে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘এই ধরনের অভিযোগ আমরা পাইনি। পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ তবে স্টেশন এলাকায় অপরাধমূলক কাজকর্ম যে হয় তা মেনে নিয়ে শালিমার আরপিএফের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার এস কে সিংহ বলেন, ‘‘হাওড়া সিটি পুলিশের সঙ্গে রেলের এলাকা ভাগাভাগি স্পষ্ট না থাকায় নিয়মিত গোলমাল হচ্ছে। তবে স্টেশনটি ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে, দুষ্কৃতীদের দাপটও কমছে। দুষ্কৃতীদের থেকে টাকা নেওয়ার কোনও অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। ’’

শালিমার স্টেশনের সামনে দিয়ে যে রাস্তাটা গিয়েছে, তার নাম শালিমার রোড। রাস্তাটা সামনের দিকে এগিয়ে ডান দিকে মোড় নিয়ে চলে গিয়েছে বটানিক্যাল গার্ডেনের দিকে। টানা দুই কিলোমিটার এই রাস্তার বাঁ দিকে গঙ্গার পাড় বরাবর জাহাজ মেরামত-সহ বিভিন্ন কারখানা। আর ডান দিকে বস্তি। দীর্ঘদিনের পুরনো ওই সব কারখানায় যে শ্রমিকরা কাজ করতেন, তাঁরাই বংশানুক্রমে ঘরবাড়ি করে রয়ে গিয়েছেন শালিমারে। অধিকাংশ কারখানা কাজের অভাবে ধুঁকতে থাকায় বহু শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছে। শ্রমিক পরিবারের অনেকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিকল্প আয়ের সন্ধান না পেয়ে চুরি, ছিনতাই, মাদক বিক্রি, জুয়া খেলা-সহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন। সম্প্রতি তাতে যোগ হয়েছে শিশু বিক্রি চক্রের অভিযোগও।

এলাকার পুরনো বাসিন্দাদের অভিযোগ, কাজ না-পাওয়া যুবক, কিশোরদের একাংশকেই দলে টেনে শালিমার স্টেশন চত্বর জুড়ে অপরাধের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছে সিন্ডিকেটের মাথারা। এ জন্য প্রয়োজনে, পুলিশের খাতায় নাম থাকা অভিযুক্তদের শাসক দলের ব্লক কমিটি বা যুব সংগঠনে জায়গা করে দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন তাঁরাই। অন্য দিকে নিজেরা বহুতল আবাসনের প্রোমোটারদের নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহের একচেটিয়া ফায়দা লুটে চলেছেন।

শালিমারের দুষ্কৃতীদের দলের নেতৃত্বে থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে দক্ষিণ হাওড়া তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা হাওড়া পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর ভাইস চেয়ারপার্সন সৈকত চৌধুরী বলেন, ‘‘দলের যুব সংগঠনে কাকে নেওয়া হয়েছে জানি না। তবে আগে যাদের ব্লক কমিটিতে নেওয়া হয়েছিল, তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। দল দুষ্কৃতীদের প্রশ্রয় দেয় না। আসলে শালিমারে গোলমাল পাকাচ্ছে ওই এলাকায় চলে আসা ভিন্‌ রাজ্যের লোকজন। আর রেলও তাঁদের সর্ম্পকে বিস্তারিতখবর না নিয়েই পার্কিংয়ের বরাতদিয়ে দিচ্ছে।’’

যদিও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের এক কর্তা বলেন, ‘‘রেলের পার্কিংয়ের টেন্ডার যাঁরা পাচ্ছেন, তাঁরা সকলেই স্থানীয় বাসিন্দা। পার্কিংয়ের বরাত পাওয়ার রেষারেষির জন্য এর মূল্য বহু গুণ বেড়ে গিয়েছে আর সেই টাকা তুলতে সাধারণ যাত্রীদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। আমরা আরপিএফ, রেলপুলিশকে সতর্ক করেছি।’’

এই গোলমালের মধ্যে পল্লবিত হচ্ছে আর এক বড় কর্মকাণ্ড। ওই এলাকায় গেলেই দেখা যাবে বস্তির পিছনে বহুতলের সারি। অভিযোগ উঠেছে, ওই সব বহুতলের সামনে থাকা সমস্ত বস্তি ধীরে ধীরে উচ্ছেদের পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেখানে তৈরি হবে পার্ক, সুইমিং পুল, রেস্তরাঁ। শালিমারের সিন্ডিকেটের নেতাদের কাজে লাগিয়ে সেই প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছে। অভিযোগ, ইতিমধ্যে ভয় দেখিয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে মুকেশ যাদব, শ্রীনিবাস সিংহ, কিশোর যাদবের মতো আরও অনেক বস্তিবাসীকে। প্রাণের ভয়ে ঘরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছেন তাঁরা। আর এই ঘটনাই ফের বুঝিয়ে দিয়েছে, জমি-মাফিয়ার গ্রাসে শালিমার এখন কার্যত মুক্তাঞ্চল।

(শেষ)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Betting Syndicates Betting racket betting Financial Risk Shalimar Shalimar Station

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।