বিজয়িনী: চোট সারিয়ে ফিরেই ওয়ার্ল্ড চ্যালেঞ্জ কাপে সোনা জয়। পদক মঞ্চে দীপা কর্মকার। রবিবার। ছবি: টুইটার
রিয়ো অলিম্পিক্সে ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্সকে প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। প্রথম ভারতীয় মহিলা জিমন্যাস্ট হিসেবে অলিম্পিক্সে যোগ দেওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। কিন্তু চোটের জন্য দু’বছর কোনও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নামতে না-পারায় আসন্ন এশিয়ান গেমসে তাঁর যোগদান নিয়ে জল্পনা ছিল।
যাবতীয় জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে দীপা কর্মকার বিশ্ব মঞ্চে ফের সোনাজয়ী।
‘আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিক্স ওয়ার্ল্ড চ্যালেঞ্জ কাপ’-এ সোনাজয়ী দীপা রবিবার উচ্ছ্বসিত গলায় তুরস্ক থেকে ফোনে বললেন, ‘‘দু’বছর পরে এমন একটা প্রতিযোগিতায় সাফল্য পেয়ে দারুণ লাগছে। বিশেষ করে এশিয়ান গেমসের আগে সোনা জয় আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বাড়াবে। এর জন্য সাই, জিমন্যাস্টিক্স ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া, আমার স্পনসররা আর স্যর বিশ্বেশ্বর নন্দীকে ধন্যবাদ জানাব। এঁরা পাশে না-থাকলে এই জায়গায় আসতে পারতাম না। বিশেষ করে বিশ্বেশ্বর স্যরের কথা বলতে চাই। উনি না-থাকলে কিছুই হত না।’’
নতুন একটি ভল্টও এই প্রতিযোগিতায় দেন দীপা। ছাত্রীর পারফরম্যান্সে দারুণ খুশি দীপার কোচ বিশ্বেশ্বর। দীর্ঘদিন পরে এ ভাবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ফিরে সোনা জয় কতটা কঠিন ছিল? তুরস্ক থেকে রবিবার রাতে ফোনে উচ্ছ্বসিত বিশ্বেশ্বর বললেন, ‘‘খুব কঠিন ছিল। দীপার এই সাফল্যটা ভীষণ দরকার ছিল। সামনের মাসেই তো এশিয়ান গেমস। তার আগে এমনই একটা জয় চাইছিলাম, যা ওর আত্মবিশ্বাস বাড়াবে। ওয়ার্ল্ড চ্যালেঞ্জ কাপে এই প্রথম সোনা জিতল ও।’’
আরও পড়ুন: বিশ্ব মঞ্চে জিতে এশিয়াডের আশা
এই সাফল্যে কতটা আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলেন দীপা? বিশ্বেশ্বর বলেন, ‘‘এই সোনায় ওর ৯৫ শতাংশ আত্মবিশ্বাস ফিরে এল বলতে পারেন।’’ হাঁটুর চোটের অস্ত্রোপচারের পরে এ ভাবে দুরন্ত প্রত্যাবর্তন ঘটাতে পারবেন ভেবেছিলেন? বিশ্বেশ্বর বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন এই পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় না-নামলে আত্নবিশ্বাসে একটা ঘাটতি এসে যায়। সেটা কাটাতে পারল। ওর হাঁটুর অস্ত্রোপচার করেছিলেন চিকিৎসক অনন্ত জোশী। ওঁকেও ধন্যবাদ জানাব। দীপাকে প্রস্তুতি পর্বে ঠিক যা যা শিখিয়েছিলাম, সেগুলো নিখুঁত ভাবে করে দেখিয়েছে। ওর ফিটনেস নিয়েও আমি খুশি।’’
ভল্টে সোনা জিতলেও ব্যালান্সিং বিমে পদক একটুর জন্য হাতছাড়া হওয়ায় হতাশ ত্রিপুরার মেয়ে। বিশ্বেশ্বর বলেন, ‘‘দীপার সোনা জেতার উচ্ছ্বাস যেমন রয়েছে, তেমনই ও কিছুটা হতাশও। পয়েন্টে সামান্য পিছিয়ে থাকার জন্য বিমে পদকটা পেল না।’’ ব্যালান্সিং বিমের প্রাথমিক পর্বে দীপা ১১.৮৫০ স্কোর করে ফাইনালে নামার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন।
তবে বিশ্বেশ্বর বেশি খুশি এই প্রতিযোগিতায় দীপা নতুন ভল্ট দিয়ে সফল হওয়ায়। রিয়ো অলিম্পিক্সের পরে চোট সারিয়ে দীপা এ বছর কমনওয়েলথ গেমসে নামতে পারবেন মনে করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর রিহ্যাবে আরও সময় লেগে যায়। ফলে গোল্ড কোস্ট কমনওয়েলথ গেমসে নামতে পারেননি তিনি। শোনা গিয়েছিল, চোটের জন্যই দীপা আর প্রোদুনোভা ভল্ট দিকে পারবেন না। চোট থেকে সদ্য ফেরার জন্যই জিমন্যাস্টিক্স বিশ্বের অন্যতম কঠিন ভল্ট প্রোদুনোভা দেওয়ার ঝুঁকি নেননি কোচ বিশ্বেশ্বর। যাতে ফের চোট লাগার আশঙ্কা এড়ানো যায়। বদলে নতুন একটি ভল্ট নেন দীপা। প্রথম বারেই সেই ভল্ট নিয়ে বাজিমাত। দীপা এই প্রতিযোগিতায় ব্যাকে সুকাহারা ৭২০ ডিগ্রি টার্ন ভল্ট আর ফ্রন্টে দেন হ্যান্ডস্প্রিং স্ট্রেট বডি সমারসল্ট ৩৬০ ডিগ্রি টার্ন ভল্ট। এই দ্বিতীয় ভল্টটিই নতুন। এখন দীপা ভল্টটি ৩৬০ ডিগ্রি নিলেও লক্ষ্য ৫৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া।
কাল, মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে ফিরছেন দীপা এবং বিশ্বেশ্বর। এর পরে সেখানে চলবে দীপার এশিয়ান গেমসের প্রস্তুতি। ১৮ অগস্ট জাকার্তায় শুরু এশিয়ান গেমস। তবে এশিয়ান গেমসের প্রস্তুতির মধ্যেও এক দিনের জন্য ত্রিপুরায় ফিরবেন দীপা। পরীক্ষা দিতে। বিশ্বমঞ্চে ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্সের মুখ দীপার জীবনে ফাঁকি শব্দটাই যে নেই। তা সে জিমন্যাস্টিক্স হোক বা পড়াশোনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy