যুগলবন্দি: কোচ বিশ্বেশ্বরের সঙ্গে দীপা। স্বপ্ন দেখা চলছে। ফাইল চিত্র
কখনও তিনি বলছেন, ‘‘দীপা, প্রেস হ্যান্ডস্ট্যান্ডটা সাবধানে করবে।’’ দীপা, অর্থাৎ দীপা কর্মকার তখন খুব সতর্ক ভাবে দু’হাতের উপরে ভর দিয়ে পা দুটো শূন্যে তুলে দিচ্ছেন।
কখনও তিনি বলছেন, ‘‘স্প্লিটটা ভাল হচ্ছে, আরও নিখুঁত করবে।’’ তীক্ষ্ণ নজর রেখে যাচ্ছেন ছাত্রীদের উপরে যাতে কোনও ভুলচুক না হয়। এই ভাবেই অনলাইনে রোজ চলছে ভারতীয় জিমন্যাস্টিক্সকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়া দীপা কর্মকার এবং তাঁর গুরু বিশ্বেশ্বর নন্দীর ভিডিয়ো ক্লাস। দীপার কোচের আমন্ত্রণে দু’দিন যে ভিডিয়ো ক্লাসের অংশ হয়ে দেখা গেল তারকা জিমন্যাস্টের রুটিনের এক ঝলক।
লকডাউনের ধাক্কায় দীপা গৃহবন্দি হয়ে আছেন প্রায় দু’মাস। বিশ্বেশ্বরবাবুর এই কোচিং ক্লাস চলছে এক মাসের উপরে। কতটা উপকৃত হয়েছেন আপনি? ক্লাস শেষ করে, সবুজ টি-শার্ট আর কালো শর্টস পরা কিছুটা ক্লান্ত দীপা ভিডিয়ো কলে বলে উঠলেন, ‘‘আমার জীবন লকডাউনেও একটা রুটিনে বাঁধা। স্বাভাবিক ভাবেই বাইরে বেরোনো বন্ধ। কিন্তু এই ফিটনেস ক্লাসগুলো করে খুবই উপকৃত হচ্ছি। চোটের জন্য আমার খুব সমস্যা ছিল। সেই চোট এখন প্রায় সেরে গিয়েছে।’’ কোচও জানাচ্ছেন, দীপা প্রায় ৯৫ শতাংশ সুস্থ।
কোচের এই ফিটনেস ক্লাস শুরু হয় রোজ বিকেল ৪.৪৫ থেকে। প্রথম দফার ক্লাস শেষ হয় সওয়া ছ’টা নাগাদ। তার পরে দীপাদের মতো পাঁচ সিনিয়র জিমন্যাস্টকে নিয়ে শুরু হয় ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টার এই বিশেষ ক্লাস। যে ক্লাসে বাংলা থেকে আছেন ভারতের অন্যতম সেরা জিমন্যাস্ট প্রণতি দাসও। আছেন আর এক প্রতিশ্রুতিমান প্রতিষ্ঠা সামন্ত বা উদীয়মান প্রতিভা অস্মিতা পাল, প্রিয়ঙ্কা দাশগুপ্তরা।
দীপার রুটিন অবশ্য শুরু হয়ে যায় সেই সকাল থেকেই। জাতীয় দলের ফিজিয়ো, মনোবিদ, পুষ্টিবিদ সবার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হয় তাঁকে। জানাতে হয় কতটা কী মেনে চলছেন। লকডাউনেও কতটা কড়াকড়ির মধ্যে দীপাকে থাকতে হচ্ছে, সেটা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে কোচের কথায়। বিশ্বেশ্বরবাবু বলছিলেন, ‘‘পুরো দিনটাই দীপা ব্যস্ত থাকে। ঢিলেমির কোনও জায়গা নেই। এমনকি রোজ কী খাচ্ছে, তা থালায় সাজিয়ে ছবি তুলে মুম্বইয়ে পাঠাতে হয় পুষ্টিবিদকে।’’
এই বছরে অলিম্পিক্স হলে দীপার যোগ্যতা পাওয়া কঠিন ছিল চোটের কারণে। কিন্তু এখন তো এক বছর সময় পাওয়া গিয়েছে। টোকিয়ো যাওয়ার ব্যাপারে কতটা আশাবাদী আপনি? দীপা বলছিলেন, ‘‘আমাদের হাতে আটটা বিশ্বকাপ থাকে। এখন সামনে আছে আর দুটো।’’ একটু থেমে রিয়ো অলিম্পিক্সে অল্পের জন্য চতুর্থ হওয়া দীপা যোগ করেন, ‘‘এই দুটো বিশ্বকাপ হওয়ার কথা ছিল প্রথমে মার্চে, পরে জুনে। কিন্তু যা পরিস্থিতি তাতে এ বছর কিছু হবে বলে মনে হয় না। পরের বছর হওয়া মানে আমি হাতে সময় পাব নিজেকে পুরো তৈরি করার। আমি নিশ্চিত, স্যর (বিশ্বেশ্বর নন্দী) আমাকে ঠিক তৈরি করে দেবেন।’’
এই লকডাউনে অনেক ক্রীড়াবিদেরই মানসিক অবসাদে ভোগার আশঙ্কা থাকছে। আপনি নিজেকে কী ভাবে তরতাজা রাখছেন? দীপার জবাব, ‘‘আমি নিয়মিত ধ্যান করি। তা ছাড়া আমাদের মনোবিদও আছেন। তাঁর সঙ্গে নিয়মিত ক্লাস হয়। আমার কোনও সমস্যা হচ্ছে না।’’
বিশ্বেশ্বরবাবু তাঁর ক্লাসে নজর দিয়েছেন ফিটনেসের উপরে। দ্রোণাচার্য পুরস্কার পাওয়া এই কোচ বলছিলেন, ‘‘জিমন্যাস্টিক্সে যে রকম ফিটনেস লাগে, তা অন্য কোনও খেলায় লাগে বলে মনে হয় না। তাই আমরা এখন ফিটনেসের উপরে জোর দিচ্ছি। যাতে লকডাউন পর্ব শেষ হলে যখন আসল ট্রেনিং শুরু হবে, তখন যেন কোনও সমস্যা না হয়।’’
সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে এই অনলাইন ভিডিয়ো কোচিং শুরু করেছেন দীপার গুরু। দেশের নানা জায়গা থেকে প্রায় জনা ষাটেক ছাত্র-ছাত্রী যোগ দিয়েছেন এই ক্লাসে। কেউ ছোট্ট একটা ঘরের মেঝেতে, কেউ বারান্দায়, কেউ বা ছাদে নিয়মিত অনুশীলনে ডুবে। সতর্কও থাকতে হচ্ছে যাতে শক্ত মেঝেতে পড়ে গিয়ে চোট না লাগে। বাংলার প্রণতি বলছিলেন, ‘‘স্যরের ট্রেনিংয়ে আমি দারুণ উপকার পাচ্ছি। পাশাপাশি আমার কিছু ভিডিয়োও দীপাদিদি আর স্যরকেও পাঠিয়ে দিই।’’
ভিডিয়ো-ট্রেনিং শেষ হল। দীপাদের সঙ্গে কথাবার্তার পালাও শেষ। এ বার পাঁচ ছাত্রী উঠে দাঁডিয়ে স্যালুট করে বলে উঠলেন, ‘‘জয় হিন্দ।’’
বোঝা গেল, করোনাভাইরাসের আতঙ্কও নিভিয়ে দিতে পারেনি এক দ্রোণাচার্য ও তাঁর অগ্নিকন্যাদের আগুন।
আরও পড়ুন: নায়ক হতে রাজি বিরাট যদি অনুষ্কা হন নায়িকা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy