Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
আমার চোখে সেরা ১৩

কার্টলের না বলা কথা

যাদের খেলা দেখেছি বা যাদের বিরুদ্ধে খেলেছি, তাদের নিয়েই আমার এই সেরা ১৩। তাই এই দলে স্যর ডন ব্র্যাডম্যান, স্যর গারফিল্ড সোবার্সরা নেই। আরও একটা ব্যাপার হল, এই দলে কোনও ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটারকে রাখিনি। রাখলে আমার সময়ের বহু গ্রেট-কে এই দল থেকে বাদ দেওয়া মুশকিল হত। তা সত্ত্বেও দলটা গড়া অত সোজা হয়নি। তিনজন ছাড়া এদের সবার বিরুদ্ধেই আমি খেলেছি।

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৫ ০৩:৫১
Share: Save:

যাদের খেলা দেখেছি বা যাদের বিরুদ্ধে খেলেছি, তাদের নিয়েই আমার এই সেরা ১৩। তাই এই দলে স্যর ডন ব্র্যাডম্যান, স্যর গারফিল্ড সোবার্সরা নেই। আরও একটা ব্যাপার হল, এই দলে কোনও ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটারকে রাখিনি। রাখলে আমার সময়ের বহু গ্রেট-কে এই দল থেকে বাদ দেওয়া মুশকিল হত। তা সত্ত্বেও দলটা গড়া অত সোজা হয়নি। তিনজন ছাড়া এদের সবার বিরুদ্ধেই আমি খেলেছি। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, সুনীল গাওস্কর ও রিচার্ড হ্যাডলি। এঁদের মুখোমুখি হওয়ার সৌভাগ্য হয়নি কখনও। অরবিন্দ ডিসিলভা, অ্যালান বর্ডার, জাভেদ মিয়াঁদাদের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধা থাকলেও এঁদের আমার সেরা দলে রাখতে পারলাম না। এই দলের কোনও অধিনায়ককেও খুঁজে বার করতে পারিনি আমি।

সুনীল গাওস্কর: সম্ভবত সর্বকালের সেরা ওপেনার। মার্শাল, রবার্টস, হোল্ডিং, গার্নারদের বিরুদ্ধে ১৪টা টেস্ট সেঞ্চুরি রয়েছে যাঁর, সে তো একজন উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের স্বর্ণযুগে এমন দাপুটে পারফরম্যান্সের জন্যই আমার দলে থাকবে সানি। আমি ওর বিরুদ্ধে কখনও খেলিনি। কিন্তু খেলার খুব ইচ্ছা ছিল।

গ্রাহাম গুচ: কাউন্টি ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রায়ই আমাদের যুদ্ধ হত। নাছোড়বান্দা ও কঠিন প্রতিপক্ষ। গাওস্করের যোগ্যতম সঙ্গী। টপ অর্ডারে এর চেয়ে ভাল কম্বিনেশন আর কী হতে পারে। ১৯৯১-এ হেডিংলের সেই টেস্টে অপরাজিত ১৫৪ শুধু নয়, আরও অনেক বারই গুচ আমাদের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত ব্যাট করেছে। সবসময়ই চেষ্টা করতাম ওকে চটপট আউট করতে।

জাক কালিস: আমার দেখা সেরা অলরাউন্ডার। এই জায়গাটাতে স্যর গ্যারি সোবার্সকে হয়তো রাখা যেত। কিন্তু তাঁকে তো কখনও খেলতে দেখিনি। আর তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান। কালিসকে বরং বহুবার দেখেছি এবং আমার সময়ে ওর চেয়ে ভাল অলরাউন্ডার কেউ ছিল না। স্যর ইয়ান বোথামের চেয়েও এগিয়ে রাখব ওকে। বোলিংটা না করলেও ও দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা তারকা হয়ে উঠতে পারত ওর ব্যাটিংয়ের জন্য।

সচিন তেন্ডুলকর: তেন্ডুলকর সম্পর্কে কোনও বর্ণনাই যথেষ্ট নয়। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৬ বছরের সচিনের সেঞ্চুরি দেখেই বুঝেছিলাম একজন গ্রেট-কে পেতে চলেছি। আমি তখন ওখানে কাউন্টি ক্রিকেট খেলছি। এত রেকর্ডের মালিক হওয়া সত্ত্বেও কী নম্র ছেলেটা! দেশের মাঠে ১৯৯৭-এ ওর বিরুদ্ধে একটাই সিরিজ খেলার সৌভাগ্য হয়েছিল। আরও কয়েকটা সিরিজে ওকে পেলে ভাল হত। ভারতে যদি ওকে বল করার সুযোগ পেতাম!

রিকি পন্টিং: এই ছেলেটা সবসময়ই বেশ ‘টাফ’। কখনও ফাস্ট বোলারদের ভয় পেত না। বরং তাদের দমিয়ে রাখার চেষ্টা করত এবং সাফল্যও পেত। এই ধরনের ক্রিকেটাররা আমার কাছে বরাবরই শ্রদ্ধেয়। পন্টিং শুরু থেকেই বোলারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার মনোভাব নিয়ে ক্রিজে আসত।

স্টিভ ওয়: স্টিভের সঙ্গে প্রচুর যুদ্ধ করেছি। সে যুদ্ধের কাহিনী আমার বইয়ের অন্য অধ্যায়ে লিখেছিও। আমার বিরুদ্ধে ও প্রচুর রান করেছে। আমার অন্যতম প্রিয় ক্রিকেটার। তাই এই দলে ও অবশ্যই থাকবে।

অ্যাডাম গিলক্রিস্ট: আমি ওর বিরুদ্ধে খেলিনি কখনও। কিন্তু গিলক্রিস্ট যেমন অসাধারণ উইকেটকিপার, তেমনই ধ্বংসাত্মক ব্যাটসম্যান। আমার দেখা সেরা উইকেটকিপারদের তালিকায় ও-ই এক নম্বরে থাকবে। টেস্ট হোক বা ওয়ান ডে। ব্যাট হাতে একটাই রাস্তা ধরত গিলক্রিস্ট, বোলারকে শেষ করে দাও। তাই ওকে বল করার সুযোগ পেলে বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতাম, ‘রানটা অন্য কারও বিরুদ্ধে করো, আমার বলে নয়।’

রিচার্ড হ্যাডলি: হ্যাডলির বিরুদ্ধে না খেললেও ওকে বহুবার খেলতে দেখেছি। আর তাতেই ওর ভক্ত হয়ে গিয়েছি। অসাধারণ অলরাউন্ডার। তবে বোলিংয়ের জন্যই বেশি বিখ্যাত। এ জন্যই আমার দলে থাকবে ও।

ওয়াসিম আক্রম: সম্ভবত গ্রেটেস্ট। একেবারে অন্য ধরনের। সুইং ও সিম দুটোই সমান ভাবে করাতে পারত। চাইলেই তীব্র গতিতে বল করতে পারত। কমপ্লিট প্যাকেজ ছিল ওয়াসিম। ব্যাট হাতেও কিন্তু খরগোশ নয়। স্যার ভিভ, গ্রিনিজ, হেইনসদের দলে যখন খেলতাম, তখন ওকে নিয়ে কম আলোচনা হত না। বল নিয়ে ওকে যা করতে দেখেছি, তা আমিও করতে পারতাম না।

শেন ওয়ার্ন: এই জায়গাটায় ওয়ার্নকে রাখা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আমার দেখা সেরা লেগ স্পিনার। একা ম্যাচ জেতাতে পারত। ব্যাটিংটাও কমজোরি নয়। অসাধারণ স্লিপ ফিল্ডার। সব মিলিয়ে দুর্দান্ত এক অলরাউন্ড ক্রিকেটার। আমি মুরলীধরন ও আব্দুল কাদিরের কথাও ভেবেছিলাম। কিন্তু শেন ওয়ার্ন থাকতে আর কেউ এই জায়গায় কেন? ওর মতো আক্রমণাত্মক স্পিন বোলারকে সামলানো মোটেই সোজা ব্যাপার নয়। সবচেয়ে বড় কথা, ওর ক্যাপ্টেন যখনই কোনও কঠিন পরিস্থিতিতে ওকে বল তুলে দিয়েছে, ও তাকে নিরাশ করেনি।

গ্লেন ম্যাকগ্রা: এমন এক ম্যাচ জেতানো বোলার, যাকে আমি চিরকাল পছন্দ করে এসেছি। আমরা দু’জন প্রায় একই ধরনের বল করতাম। সবসময় নিয়ন্ত্রণ ও নিখুঁত বোলিংয়ের উপর নির্ভরশীল। ম্যাকগ্রা আমাদের বিরুদ্ধে বরাবর ভাল বল করত।

ইয়ান বোথাম: কাউন্টিতে ওঁর বিরুদ্ধে খেলেছি। তখন উনি কেরিয়ারের শেষ পর্বে। ১৯৯১-এ একটা টেস্টেও খেলেছি অবশ্য। সে বারই তো তার সেই কুখ্যাত হিট উইকেট। ভারসাম্য বজায় রাখতে না পেরে পা দিয়ে বেল ফেলে দিয়েছিল বোথাম। কিন্তু তখন সেই বোথামকে আমরা পাইনি, যে বোথাম সারা ক্রিকেট দুনিয়ায় বিখ্যাত। সেই বোথামকেই আমার এই দলে রেখেছি। যে তার ব্যাটিং, বোলিং ও স্লিপ ক্যাচিং দিয়ে একটা ম্যাচের চেহারা পাল্টে দিতে পারত।

ডেভিড গাওয়ার: অনেকে বলেন, ডেভিড নাকি প্রচুর স্ট্রোক খেলত। কিন্তু সব ব্যাটসম্যানই তো তাই করে। স্টিভ ওয়র কথা অবশ্য বাদই দিন। সে অপেক্ষা করত, কখন তার প্রিয় জায়গায় স্ট্রোক নেওয়ার বল দেবে বোলার। কিন্তু গাওয়ার সে রকম নয়। ও খুবই ঠান্ডা, নির্বিকার প্রকৃতির ব্যাটসম্যান। সেঞ্চুরি বা কম রানে আউট হয়েও যার মধ্যে কখনও কোনও হেলদোল দেখা যায়নি।

(কার্টলে অ্যামব্রোজের আত্মজীবনী ‘টাইম টু টক’ থেকে নির্বাচিত অংশ। প্রকাশক ম্যাকমিলান)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE