Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
India vs England 2024

রবিচন্দ্রন অশ্বিন না যশপ্রীত বুমরা? পিচ কার জন্য, বাড়ছে বিভ্রান্তি

এমন কাউকে ধরুন প্রশ্নটা করা গেল যিনি ভারতীয় ক্রিকেট সম্পর্কে অবহিত। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে প্রথম দুই টেস্টের খবর রাখতে পারেননি। কী জবাব দিতে পারেন?

An image of Ravichandran Ashwin

নজরে: প্রস্তুতির ফাঁকে অশ্বিন। মঙ্গলবার। ছবি: সংগৃহীত।

সুমিত ঘোষ
রাজকোট শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৬:২৪
Share: Save:

মুম্বই থেকে রাজকোট উড়ানে আসতে আসতে কুইজ়ের প্রশ্ন মাথায় এল। চলতি ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজ়ে উইকেটশিকারির তালিকায় এই মুহূর্তে এক নম্বরে কে?

এমন কাউকে ধরুন প্রশ্নটা করা গেল যিনি ভারতীয় ক্রিকেট সম্পর্কে অবহিত। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে প্রথম দুই টেস্টের খবর রাখতে পারেননি। কী জবাব দিতে পারেন? নিশ্চয়ই রেগেমেগে বলবেন, ইয়ার্কি হচ্ছে? ভারতে টেস্ট ম্যাচ হচ্ছে, বিদেশি দল খেলতে এসেছে আর এটা একটা প্রশ্ন হল? দুরন্ত ঘূর্ণির এই লেগেছে পাক। এই দুনিয়া ঘোরে বন্‌বন্‌ বন্‌বন্‌। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গানটা কখনও শোনেননি নাকি? স্পিনের কড়াইতে ভাজা ভাজা করছি ওদের। ২-০ এগিয়ে আছি!

যদি তাঁকে খামিয়ে দিয়ে বলা হয়, আজ্ঞে না। সিরিজ় ১-১। সর্বোচ্চ উইকেট প্রাপক কোনও ভারতীয় স্পিনার নন। তাঁর নাম যশপ্রীত বুমরা। বিশ্বাস করানো যাবে? পরিসংখ্যান খুলে অবাক নয়, ভীষণ ভীষণ অবাক হয়ে যাচ্ছি। দু’টি টেস্ট হয়ে গেল, সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় শীর্ষে যশপ্রীত বুমরা। সংগ্রহ ১৫ উইকেট। দু’নম্বরে কে? অশ্বিন-জাডেজারা কেউ নন। তিনি ইংল্যান্ডের বাঁ হাতি স্পিনার টম হার্টলি। দুই টেস্টে ১৪ উইকেট। তিন নম্বরে অশ্বিন। ৯ উইকেট। হার্টলির চেয়ে পাঁচ উইকেট পিছিয়ে, ভাবা যায়! চার নম্বরে ইংল্যান্ডের রেহান আহমেদ। ৮ উইকেট। শেষ কবে ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজ়ে এমন সব বিদঘুটে পরিসংখ্যান দেখা গিয়েছে, মনে পড়ছে?

দেশের মাঠে খেলা মানেই তো গত কয়েক বছর ধরে জানা হিসাব, এ প্লাস বি হোল স্ক্যোয়ার ফর্মুলায় ফেলো। দেড় মাস আগে ফোন যাবে পিচ প্রস্তুতকারকের কাছে— শুনুন, প্রথম ঘন্টা থেকে ঘোরার ব্যবস্থা করুন। এ বারে সে সব উধাও। খুব সাংঘাতিক ঘূর্ণি দেখা যাচ্ছে না। রাজকোটের মাঠে মঙ্গলবার এসে যা দেখা গেল, তা তো আরওই বিস্ময়কর। পিচে ঘাস রয়েছে। তার বেশ কিছুটা দ্রুত অন্তর্হিত হয়ে যাওয়ার কথা আগামী কয়েক ঘণ্টায় ঠিকই, কিন্তু প্রশ্ন উঠছে রোহিত শর্মা-রাহুল দ্রাবিড়রাও কি বিভ্রান্ত? তাঁরাও কি গভীর চিন্তায় পড়েছেন, কোন ধরনের বাইশ গজে বেন স্টোকসদের ফেলা উচিত? ঘূর্ণি বানানো হবে? নাকি গতিকে প্রাধান্য দেব? নাকি ব্যাটিং ভাল হয় এমন বাইশ গজই শ্রেয়?

বিভ্রান্তি নম্বর এক: অশ্বিন নয়, বুমরা এই মুহূর্তে ভারতের এক নম্বর তাস। ইংরেজ ব্যাটসম্যানেরা দেদার সুইপ ও রিভার্স সুইপ মেরে ভারতীয় স্পিনারদের কালঘাম ছুটিয়ে দিয়েছে। বাজ়বল নিয়ে জেফ বয়কটের মতো সনাতনী ক্রিকেট পণ্ডিতরা যতই প্রশ্ন তুলুন, এ জিনিস টেস্ট ক্রিকেটে কখনও দেখা যায়নি যে, একটা দল সব বলে রান করার লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নামছে। যে কোনও রকম দুঃসাহসিক শট খেলতে ভয় পাচ্ছে না।

বিভ্রান্তি নম্বর দুই: দেখা যাচ্ছে বল ঘুরলেও ভারতের স্পিনারদের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিচ্ছেন ইংরেজ স্পিনাররা। হায়দরাবাদে তাঁদের সামনে ভেঙে পড়েছে ভারতীয় ব্যাটিং। তাতে শিবিরে যে সামান্য হলেও শিরশিরানি ঢোকেনি, জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না।

অশ্বিনদের রহস্য যত ভেদ হয়ে যাচ্ছে, ততই দুর্ভেদ্য হয়ে উঠছেন বুমরা। অলি পোপকে ইয়র্কারে করা বোল্ড শতাব্দীর সেরা বলের লড়াইয়ে এখন দু’জনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চলে এসেছে। এক জন প্রয়াত শেন ওয়ার্ন। মাইক গ্যাটিংকে সেই পায়ের পিছন দিক থেকে ঘোরা লেগস্পিনে বোল্ড করেছিলেন। অন্য জন ওয়াসিম আক্রম। ১৯৯২ বিশ্বকাপ ফাইনালে অ্যালান ল্যাম্ব ও ক্রিস লিউইসকে আউট করা তাঁর সেই জোড়া টর্নেডো। বলাবলি হচ্ছে, অমর সেই বোলিংয়ের পাশে স্বচ্ছন্দে রাখা যেতে পারে বুম বুম বুমরার ইয়র্কার জাদু-বল। স্বয়ং আক্রম বিশ্বকাপ থেকে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা পাকিস্তানের টিভি অনুষ্ঠানে বলে চলেছেন, বুমরার ধারেকাছে কেউ নেই।

সঙ্গে সবাইকে মুগ্ধ করবে বুমরার মস্তিষ্ক। বোলিংয়ের ধরন দেখে যে কেউ বলে দেবে, তিনি কতটা বুদ্ধিদীপ্ত বোলার। যেমন ইয়র্কার দেবেন, তেমন দুর্বোধ্য স্লোয়ার বল। কী করে ব্যাটসম্যান বুঝবে কখন, কোনটা আছড়ে পড়বে? ক্রিকেটে আগ্রহ যাঁর একদম নেই, তিনিও বুঝতে পারবেন বুমরা কত গভীরে ভাবতে পারেন। ক’দিন আগে এক নম্বর বোলার হওয়ার পরে সমাজমাধ্যমে তুলে দেওয়া তাঁর সেই দু’টো ছবি। জীবনের কঠিন সময়ে ফাঁকা গ্যালারি। পাশে কেউ নেই। স্বীকৃতির সময় গ্যালারি জুড়ে হাততালির বন্যা। জাতীয় নির্বাচক বা ভারতীয় বোর্ডেরও দেরিতে হলেও টনক নড়েছে। বুমরাকে ফের সহ-অধিনায়কের পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। হয়তো পরিষ্কার করে দেওয়া হল, টেস্টে তিনিই ভবিষ্যৎ নেতা।

এই মুহূর্তে ইংল্যান্ডের ব্যাটিং বিভাগকে যদি জিজ্ঞেস করা যায়, রাতে একটাই ঘুমের ওষুধ খাওয়া যাবে। কার জন্য লাগবে বলো? অশ্বিন না বুমরা? চোখ বুজে উত্তর আসবে বুমরা। কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালামের মন্ত্রে টি-টোয়েন্টির শট টেস্টে দেদার ব্যবহার করে ইংরেজ ব্যাটসম্যানেরা ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছেন ভারতীয় স্পিনারদের। বোঝাই যাচ্ছে, ভারতে আসার আগে আবু ধাবিতে যে শিবির করেছিল ইংল্যান্ড দল, কেন করেছিল। আইপিএলে খেলে অভ্যস্ত এবং আগ্রাসী মনোভাবে বিশ্বাসী ম্যাকালামের মন্ত্রে দীক্ষিত হচ্ছিল দল। সুইপ, রিভার্স সুইপের মহড়া দিয়ে ভারতে চলো। তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে পরিসংখ্যান তালিকায়। ঘুর্ণির দেশে এসে ঘূর্ণি নয়, গতির আতঙ্কে ভুগছে ইংল্যান্ড। কোনও পেসারকে নিয়ে শেষ বার তাদের এতটা আতঙ্কিত থাকতে দেখা গিয়েছে মিচেল জনসনের বিরুদ্ধে অ্যাশেজ়ে। সব খেলা ছেড়ে বাড়ি পালিয়ে যেতে পারলে বেঁচে যাচ্ছিলেন। এ বারে ভারতের এমন শুকনো উইকেটে সেই তেজ দেখাচ্ছেন বুমরা। যা দেখে দেশ জুড়ে পাল্টা দাবি উঠেছে, ভারতের মাটিতে টেস্ট জিততে সব সময় ঘুর্ণিই কেন বানাতে হবে? কেন ধরে নেব শুধু অশ্বিন-জাডেজারাই জেতাবে? কেন বুমরার কথা ভেবে গতিসম্পন্ন বাইশ গজ বানাব না? এই পাল্টা মতবাদের হাওয়া যিনি তুলেছেন, পুরনো অ্যালবামে চোখ বোলালে রাহুল দ্রাবিড় তাঁকে খুব সহজেই পেয়ে যাবেন। তাঁর পুরনো সতীর্থ ও প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তার পরে এখন অনেকেই বলছেন।

তার প্রভাব রাজকোটে দেখা যাবে কি না হয়তো বুধবার, টেস্ট শুরুর আগের দিনই স্পষ্ট হয়ে যাবে। কতটা ঘাস থাকবে, কতটা উড়বে তখনই বোঝা যাবে। সরস্বতী পুজোর দিনে বুমরা-বন্দনা দেখা যাবে? ইয়র্কার রঞ্জিত, স্লোয়ার হস্তে। নাকি ভ্যালেন্টাইন্‌স ডে-তে অশ্বিনদের প্রতি পুরনো প্রেম ধরে রেখেই এগোবে দল?

দেখা গেল ইংল্যান্ড শিবিরেও ঘাসের ছোঁয়া পৌঁছেছে। অলি পোপ এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলে গেলেন, রাজকোটের পিচে ঘাস থাকলে তাঁরা দুই পেসারে খেলবেন। জেমস অ্যান্ডারসনের সঙ্গে মার্ক উড। ভারতীয় শিবির থেকে এলেন কুলদীপ যাদব। পিচ নিয়ে তিনিও কিন্তু বলে গেলেন, তৃতীয় দিনের আগে ঘুরবে বলে মনে করছেন না। ভারতীয় দলের প্রথম একাদশ নিয়ে চর্চা অব্যাহত। বিরাট কোহলি নেই। শ্রেয়স আয়ার নেই। কে এল রাহুল নেই। রজত পাটীদার আগের টেস্টে অভিষেক ঘটিয়েছেন। এ বারে হয়তো সরফরাজ়ের পালা। মঙ্গলবার অনুশীলনে রবীন্দ্র জাডেজাকে ব্যাট-বল করতে দেখা গেল। জোরালো চেষ্টা হবে তাঁকে খেলানোর। তার উপরে তাঁর ঘরের মাঠ।

কিন্তু জাডেজার ঘরে পিচ কার জন্য বানানো হবে? তাঁদের জন্য না বুমরার জন্য? বাজ়বল রোখার মতোই কঠিন ধাঁধা দ্রাবিড়-রোহিতদের সামনে!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy