রোহিত শর্মা। — ফাইল চিত্র।
যা কোনও দিন ভাবা যায়নি সেটাই হয়েছে। ঘরের মাঠে টানা টেস্ট সিরিজ় জয় নিয়ে ভারতীয় দলের যে অহঙ্কার ছিল তা চূর্ণ হয়েছে। নিউ জ়িল্যান্ডের কাছে ০-৩ হেরে চুনকাম হতে হয়েছে। সেই নিউ জ়িল্যান্ড, যারা ভারতে খেলতে এসেছিল শ্রীলঙ্কায় গিয়ে নিজেরাই চুনকাম হয়ে। এশিয়ায় তাদের রেকর্ড খুবই খারাপ। তার পরেও ভারতকে কেন চুনকাম হতে হল?
রোহিত শর্মাদের জয় নিয়ে কারও মনে সংশয় ছিল না। কিন্তু সিরিজ়ের শুরু থেকেই ভারত পিছিয়ে ছিল। নিউ জ়িল্যান্ডের স্পিনের বিরুদ্ধে গোটা সিরিজ়েই খেলতে পারেনি ভারত। কার্যত আত্মসমর্পণ করেছে। মিচেল স্যান্টনার, অজাজ পটেলের সামনে অসহায় লেগেছে রোহিত শর্মাদের। তাঁরা তিনটি ম্যাচে ২৮টি উইকেট নিয়েছেন। ভারতের হারের পিছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে।
ওপেনারদের ব্যর্থতা
প্রথম টেস্টে আট উইকেটে জেতে নিউ জ়িল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে ভারতীয় ওপেনারদের জুটি স্থায়ী হয়েছিল মাত্র ৯ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে তা হয়েছিল ৭২ রান। গোটা সিরিজ়ে এটাই ভারতীয় ওপেনারদের বলার মতো জুটি। পুণে টেস্টে আবার রোহিত-যশস্বী জয়সওয়াল ব্যর্থ হন। প্রথম ইনিংসে ১ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৪ রানের জুটি হয়। ভারত হারে ১১৩ রানে। মুম্বই টেস্টে প্রথম ইনিংসে ২৫ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩ রানের জুটি। অর্থাৎ কোনও টেস্টেই শতরানের জুটি হয়নি, যা পরের দিকের ব্যাটারদের চাপ বাড়িয়েছে।
পরিস্থিতি বুঝতে ভুল করা
বেঙ্গালুরু টেস্ট শুরুর আগে তিন দিন পিচ ঢাকা ছিল। ম্যাচের আগে টানা বৃষ্টি হয়েছে। স্যাঁতসেতে পরিস্থিতি ছিল। টসে জেতার পরেও রোহিত সবাইকে অবাক করে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। তা ভুল প্রমাণিত হতে সময় নেয়নি। ভারত অল আউট হয় ৪৬ রানে। পাঁচ জন শূন্য করেন। সিরিজ়ের শুরুটাই এত খারাপ ভাবে হলে বাকিটা ভাল যাবে কী করে? নিউ জ়িল্যান্ড সেই যে ছন্দ পেয়ে গিয়েছিল তাতে ভর করেই বাকি সিরিজ়ে ভাল খেলেছে। পরে রোহিতও স্বীকার করেন যে পিচই বুঝতে পারেননি!
রোহিত, কোহলির খারাপ ফর্ম
দলের দুই সিনিয়র ক্রিকেটার তাঁরাই। অথচ সেই রোহিত এবং বিরাট কোহলি ব্যাট নিউ জ়িল্যান্ড সিরিজ়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নীরব। বস্তুত, গোটা বছরেই বার বার ব্যর্থ হয়েছেন তারা। নিউ জ়িল্যান্ড সিরিজ়ে মাত্র ৯৩ রান করেছেন কোহলি। গড় মাত্র ১৫.৫০। তাঁর মানের থেকে অনেক কম। এ বছর ছ’টি টেস্টে মোটে ২৫০ রান করেছে ২২.৭২ গড়ে। কোহলির ব্যর্থতা দেখে প্রশ্ন উঠেছে যে এটাই তাঁর শেষের শুরু কি না।
রোহিতও কম যান না। এই সিরিজ়ে মোটে ৯১ রান করেছেন। গড় ১৫.১৭। শুরুতে যে আগ্রাসনটা দরকার হয় সেটা দেখাতেই পারেননি তিনি। এ বছর ১১টি ম্যাচে মাত্র ৫৮৮ রান করেছেন। গড় ২৯.৪০। অতীতের পারফরম্যান্সের থেকে অনেকটাই খারাপ। রোহিত, কোহলির ব্যর্থতা ভারতের বাকি ব্যাটারদের চাপ অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ়ের আগে ফর্ম ফিরে না পেলে ভারতের কপালেও দুঃখ অপেক্ষা করছে।
স্পিনের বিরুদ্ধে অসহায়তা
অতীতে টেস্ট ক্রিকেটে ভারতীয় দলের একটাই নীতি ছিল, দেশের মাটিতে যে বিদেশি দলই আসুক, ঘূর্ণি পিচ লেলিয়ে দাও। সেই ফাঁদে পড়ে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউ জ়িল্যান্ড আগে বার বার হেরেছে। এশিয়ার দলগুলিও ছাড় পায়নি। ভারত মানেই ঘূর্ণি পিচ এবং হার, এই ত্রাস ছড়িয়ে পড়েছিল বিদেশি দলগুলির মধ্যে। সেই ভয় আর নেই। উল্টে আইপিএল খেলার সুবাদে ভারতের বেশির ভাগ মাঠের সঙ্গে পরিচিত বিদেশি ক্রিকেটারেরা। তাই ঘূর্ণি পিচ দেওয়া হলেও অনায়াসে তাঁরা খেলে দিচ্ছেন। সেখানে নিজেদের পিচ নিজেরাই বুঝতে পারছে না ভারত। বিপক্ষের সাধারণ মানের স্পিনারের বল খেলতেও কালঘাম ছুটে যাচ্ছে রোহিতদের। অজাজ পটেল, মিচেল স্যান্টনারেরা নিজেদের দেশেও অত বেশি ম্যাচ খেলেন না। কিন্তু ভারতে এসে তাঁরাই তারকা বনে গেলেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy