ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এক দিনের সিরিজ় ৩-০ ব্যবধানে জিতল ভারত। এই নিয়ে ২০১১ সাল থেকে ১২টি এক দিনের সিরিজ়ে প্রতিপক্ষকে চুনকাম করল ভারতীয় দল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে এই সিরিজ় ছিল মূলত প্রস্তুতির। সিরিজ়ের তিন ম্যাচেই দাপুটে জয় পেয়েছে ভারতীয় দল। বড় প্রতিযোগিতার আগে নিশ্চিত ভাবে আত্মবিশ্বাস বাড়বে রোহিত শর্মাদের।
ইংল্যান্ড সিরিজ় থেকে ভারতীয় দলের প্রাপ্তি বেশ কয়েকটি ইতিবাচক দিক। তবে প্রদীপের তলার অন্ধকারের মতোই রয়েছে একাধিক নেতিবাচক দিকও। যেগুলি কোচ গৌতম গম্ভীরকে কিছুটা হলেও চিন্তায় রাখতে পারে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরুর সাত দিন আগে।
ভারতীয় শিবিরের প্রাপ্তি
১) ব্যাটারদের ব্যাটে রান: প্রথম সারির সব ব্যাটার রান পেয়েছেন এক দিনের সিরিজ়ে। শুভমন গিল এবং শ্রেয়স আয়ার ধারাবাহিক ভাবে রান পেয়েছেন। দু’জনেই বেশ ভাল ফর্মে আছেন। দীর্ঘ দিন রানের মধ্যে না থাকা রোহিত এবং বিরাট কোহলিও রান করেছেন। কটকে শতরান করেছেন রোহিত। অহমদাবাদে অর্ধশতরান কোহলির। প্রথম দু’ম্যাচে রান না পাওয়া লোকেশ রাহুলকেও চেনা ফর্মে দেখা গিয়েছে শেষ ম্যাচে। ব্যাটার হিসাবে সাফল্য পেয়েছেন অক্ষর পটেলও। তাঁকে পাঁচ নম্বরে খেলানোর পরীক্ষা সফল।
২) বরুণ চক্রবর্তী এবং হর্ষিত রানা: কলকাতা নাইট রাইডার্সের দুই বোলারকে নিয়ে কিছুটা ঝুঁকি নিয়েছিলেন গম্ভীর। এই সিরিজ়ের আগে দু’জনের কেউ এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেননি। টি-টোয়েন্টি সিরিজ়ের পারফরম্যান্স দেখে বরুণ চক্রবর্তীকে এক দিনের দলে নেন গম্ভীর। জসপ্রীত বুমরাহের বদলে প্রথম দু’টি ম্যাচের দলে ছিলেন হর্ষিত রানা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তিনটি ম্যাচই খেলেছেন। ভরসা করার মতো বল করেছেন দিল্লির জোরে বোলার। প্রমাণ করে দিয়েছেন যোগ্য হিসাবেই থাকছেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে।
৩) ফর্মে বোলারেরা: শুধু বরুণ বা হর্ষিত নন, দলের বাকি বোলারেরাও উইকেট পাচ্ছেন। হার্দিক পাণ্ড্য, রবীন্দ্র জাডেজা, অক্ষর পটেল, ওয়াশিংটন সুন্দর, মহম্মদ শামিরা উইকেট পেয়েছেন এই সিরিজ়ে। প্রথণ দু’ম্যাচে খেলার সুযোগ না পাওয়া অর্শদীপ সিংহও তৃতীয় ম্যাচে নিজের দক্ষতা মেলে ধরেছেন। ব্যাটারদের মতো ভারতীয় দলের বোলারেরাও প্রয়োজনীয় আত্মবিশ্বাস পেয়েছেন এই সিরিজ়ে।
৪) দলের ভারসাম্য: হার্দিক, জাডেজা, অক্ষর এবং ওয়াশিংটন— দলের চার অলরাউন্ডারকেই গম্ভীর খেলিয়েছেন ইংল্যান্ড সিরিজ়ে। প্রত্যেকেই কোচের আস্থার মর্যাদা দিয়েছেন। পরিস্থিতি এবং দলের প্রয়োজন অনুযায়ী পারফর্ম করার চেষ্টা করেছেন। তাতে ব্যাটিং, বোলিং দু’বিভাগেই পর্যাপ্ত বিকল্প, বৈচিত্র্য এবং গভীরতা থাকছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে।
৫) জয়ের অভ্যাস: নিউ জ়িল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার কাছে পর পর দু’টি টেস্ট সিরিজ় হেরে সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছিল ভারতীয় দল। সাদা বলের ক্রিকেটে রোহিতদের ঝকঝকেই দেখাচ্ছে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আটটি সাদা বলের ম্যাচের সাতটিতেই জিতেছে ভারতীয় দল। প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই দাপুটে জয় পেয়ে ভারত। অর্থাৎ জয়ের অভ্যাস তৈরি করে দুবাইয়ের বিমানে উঠবেন ভারতীয় ক্রিকেটারেরা। যে কোনও বড় প্রতিযোগিতার আগে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দলের পরিবেশ থাকবে ফুরফুরে। চাপ মুক্ত ভাবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি অভিযান শুরু করতে পারবে ভারতীয় দল।
ভারতীয় শিবিরের উদ্বেগ
১) বিরাট কোহলির ব্যাটিং: তৃতীয় এক দিনের ম্যাচে রান পেয়েছেন কোহলি। খেলেছেন অর্ধশতরানের ইনিংস। বেশ কয়েকটা ম্যাচ পর রান পেলেও অহমদাবাদে কোহলিসুলভ সহজ, স্বাভাবিক ব্যাটিং করতে পারেননি বিরাট। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে অস্বস্তি এখনও রয়েছে। ব্যাটিং অর্ডারের গুরুত্বপূর্ণ তিন নম্বরে খেলেন কোহলি। তিনি চেনা ফর্ম ফিরে না পেলে সমস্যায় পড়তে পারে ভারতীয় শিবির।
২) ফিল্ডিং: ভারতীয় দলের ফিল্ডিং মোটের উপর সন্তোষজনক হলেও কিছু ভুলত্রুটি হচ্ছে। সহজ ক্যাচ ফেলেছেন অক্ষর, শুভমনেরা। উইকেটের পিছনে সুযোগ নষ্ট করেছেন রাহুল। বিশেষ করে আরও দ্রুত স্টাম্পিং করার চেষ্টা করতে হবে তাঁকে। রান আউট করার ক্ষেত্রেও সিদ্ধান্তহীনতা দেখা গিয়েছে ক্রিকেটারদের মধ্যে। ফিল্ডিংয়ের ছোট ছোট ভুল বা খামতি হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে গম্ভীরের দলকে।
৩) প্রথম একাদশ: চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে আর ম্যাচ নেই ভারতীয় দলের। কিন্তু চূড়ান্ত প্রথম একাদশ বেছে উঠতে পারেননি কোচ গম্ভীর। প্রতি ম্যাচেই প্রথম একাদশ পরিবর্তন করেছেন। ক্রিকেটারেরাও বুঝতে পারছেন না কোন ম্যাচে খেলবেন। এমন অনিশ্চয়তা মানসিক প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করে। প্রভাব ফেলতে পারে মাঠের পারফরম্যান্সেও।
৪) মহম্মদ শামি: জসপ্রীত বুমরাহ না থাকায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে শামিকে। জোরে বোলিং আক্রমণকে নেতৃত্ব দেওয়ার বার থাকবে তাঁর কাঁধে। তিনিই দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ পেসার। চোট সারিয়ে ফেরা শামিকে এখনও চেনা ফর্মে পাওয়া যায়নি। পরিচিতি ছন্দ এখনও খুঁজে পাননি তিনি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতীয় দলের সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করবে নতুন বলে শামির পারফরম্যান্সের উপর।
৫) ঋষভ পন্থ: দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক হিসাবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে আছেন ঋষভ পন্থ। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ়ে এক মাত্র তিনিই কোনও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। শেষ যে ক’টি ম্যাচ খেলেছেন, তাতে তেমন রান পাননি ব্যাট হাতে। অথচ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে ৫০ ওভারে ম্যাচ খেলার সুযোগই পেলেন না পন্থ। গত বছর অগস্টের পর তিনি কোনও এক দিনের ম্যাচ খেলেননি। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সরাসরি নামিয়ে দিতে হতে পারে তাঁকে।
আরও পড়ুন:
দলের যে উন্নতির সুযোগ আছে তা রোহিতও মেনে নিয়েছেন বুধবার ম্যাচের পর। ভারতীয় দলের অধিনায়ক বলেছেন, ‘‘ইংল্যান্ড সিরিজ়ে আমরা তেমন বড় ভুল কিছু করিনি। তবু কয়েকটি বিষয় রয়েছে যেগুলোয় আমাদের নজর দিতে হবে। সেগুলো নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করতে চাইছি না।’’ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে একটি ম্যাচ হারলেই চড়া মাসুল দিলে হতে পারে। ভারতের প্রথম ম্যাচ ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে।