ওভালে বৃষ্টি। ছবি: রয়টার্স।
দিনের শুরুটা ছিল ঝকঝকে। রোদ উঠেছিল ওভালের আকাশে। ব্যাট করতে নামছিলেন স্টুয়ার্ট ব্রড, যিনি ঘোষণা করে দিয়েছেন যে, এটাই তাঁর শেষ ম্যাচ এবং জেমস অ্যান্ডারসন, যাঁর রবিবার ছিল জন্মদিন। মাঠে নামার সময় ব্রডকে গার্ড অফ অনার দেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারেরা। ইংল্যান্ডকে দ্রুত আউট করে ব্যাট করতেও নেমে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। ৩৮ ওভার ব্যাটও করে। তার পরেই শুরু হয় বৃষ্টি। এমনই বৃষ্টি পড়ে যে পুরো খেলাই হল না চতুর্থ দিনে।
ব্যাট করতে নেমে জীবনের শেষ টেস্ট ইনিংসে অপরাজিত থাকলেন ব্রড। তাঁর শেষ শট মিচেল স্টার্ককে মারা ছক্কা। ব্রডের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটজীবনের শুরুটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল যুবরাজ সিংহের হাতে এক ওভারে ছয় ছক্কা খেয়ে আর ব্রড ব্যাট হাতে নিজের জীবনের শেষ ইনিংসে ছক্কা মারলেন। চতুর্থ দিনে ওই ছয় রানই তুলেছে ইংল্যান্ড। ৩৯৫ রানে শেষ হয়ে যায় ইংল্যান্ডের ইনিংস। অস্ট্রেলিয়ার সামনে জয়ের জন্য লক্ষ্য ৩৮৪ রান।
রবিবার স্থানীয় সময় ঠিক ১০টা ২৭ মিনিটে সাজঘর থেকে বেরিয়ে আসেন ব্রড এবং অ্যান্ডারসন। প্যাড, গ্লাভস, হেলমেট পরে মাঠে নামছিলেন দীর্ঘ দিনের দুই সতীর্থ। আগে থেকেই মাঠের ধারে দু’দলে ভাগ হয়ে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্যাট কামিন্সেরা। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের ওভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হেলমেট খুলে ফেললেন ব্রড। মাঠে পা দেওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে দাঁড়িয়ে পড়লেন অ্যান্ডারসন। বিষয়টি নজর এড়ায়নি ব্রডের। রবিবার ৪১ বছর পূর্ণ করা সতীর্থকে জড়িয়ে ধরে মাঠে ঢুকলেন ব্রড। অ্যান্ডারসন পা মেলালেন বন্ধুর সঙ্গে। বাউন্ডারি লাইন টপকে এগিয়ে যেতে দিলেন ব্রডকে। একা। দু’ধারে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা অসি ক্রিকেটারেরা হাততালি দিয়ে স্বাগত জানালেন ৬০০ টেস্ট উইকেটের মালিককে। দাঁড়িয়ে ব্রডকে অভিনন্দন জানাল ওভালের গোটা গ্যালারি। অ্যান্ডারসনকে নিয়ে ব্রড মাঠ ছাড়ার সময়ও হাততালি দিলেন দর্শকেরা।
অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার এবং উসমান খোয়াজা ৩৮৪ রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভাল করেছেন। ৩৮ ওভার ব্যাট করে ১৩৫ রান তুলেছেন তাঁরা। কোনও উইকেট হারায়নি অস্ট্রেলিয়া। অর্থাৎ শেষ দিনে ১০ উইকেট এবং অনেকটা আত্মবিশ্বাস নিয়ে ব্যাট করতে নামবেন অর্ধশতরান পার করে যাওয়া দুই ওপেনার। ইংল্যান্ডের এই টেস্ট জিততে হলে ১০টি উইকেটই তুলতে হবে। কেরিয়ার শেষ ম্যাচে ব্রডের। কাজটা কঠিন। কিন্তু ৬০০টি টেস্ট উইকেটের মালিক যে কোনও অঘটন সোমবার ঘটাবেন না তা বলা কঠিন। সঙ্গী দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞ অ্যান্ডারসন। যিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, এখনই অবসর নেবেন না। যদিও দিনের শুরুতে ব্রডকে গার্ড অফ অনার দেওয়ার সময় স্টিভ স্মিথ মজা করে অ্যান্ডারসনকে বলেছিলেন, ‘‘তুমিও চলে এসো।’’ জবাবে অ্যান্ডারসন তাঁকে বলেছেন, ‘‘আজ আমার দিন নয়।’’
অ্যাশেজে যদিও এমন বন্ধুত্বপূর্ণ দৃশ্য খুব কমই দেখা যায়। এই সিরিজ়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক ইতিহাস। যা কিছুটা ব্যঙ্গাত্মক। খানিকটা শোকেরও। ১৮৮২ সালে ওভালে আয়োজিত টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রথম হেরেছিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ফ্রেড স্পফোর্থের অনবদ্য বোলিংয়ের কাছে হারতে হয়েছিল ইংরেজদের। চতুর্থ ইনিংসে ৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে পারেনি তারা। স্পফোর্থ ৪৪ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন। ০-১ ব্যবধানে সিরিজ় হেরে গিয়েছিল। পরের দিন ইংল্যান্ডের সংবাদপত্র ‘দ্য স্পোর্টিং টাইমস্’ তাদের প্রতিবেদনে ক্রিকেট দলের তীব্র সমালোচনা করেছিল। লেখা হয়েছিল, ইংরেজ ক্রিকেটকে চিরস্মরণীয় করে রাখল ওভালের ২৯ অগস্ট, ১৮৮২ তারিখটি। গভীর দুঃখের সাথে বন্ধুরা তা মেনে নিয়েছে। ইংরেজ ক্রিকেটকে ভস্মীভূত করা হয়েছে এবং ছাইগুলো অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া হয়েছে। এর পরের বছর সিরিজ় পুণরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় যায় ইংল্যান্ড। সংবাদমাধ্যমের ব্যঙ্গ মনে রেখে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক আইভো ব্লাই বলেছিলেন, তাঁরা অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন।
সে সময় কয়েকজন অস্ট্রেলীয় মহিলা ব্লাইকে আগের সিরিজ়ে পরাজয় নিয়ে পাল্টা ব্যঙ্গ করে ছাই ভর্তি একটি পাত্র দিয়েছিলেন। যাতে ছিল উইকেটের উপরে থাকা বেলের ছাই। তার পর থেকে দু’দেশের টেস্ট সিরিজ় ‘অ্যাশেজ’ বলে পরিচিত হয়। ব্লাই অবশ্য ছাইয়ের সেই আধারটি ব্যক্তিগত উপহার হিসাবে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। বিজয়ী দলকে ট্রফি হিসাবে তা দেওয়া হত না তখন। ব্লাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী লর্ডসে এমসিসি জাদুঘরে সেই পাত্রটি দান করে দিয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy