আকর্ষণ: অলরাউন্ডার রাজ বাওয়াকে নিয়ে আগ্রহ নিলামে।
প্রথম বার আইপিএল নিলামে তাঁর নাম উঠতে চলেছে। ১২ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি ভুবনেশ্বরের হোটেলে কোয়রান্টিনে থাকতে হবে তাঁকে। কিন্তু চোখ থাকবে টেলিভিশনের পর্দায়। রঞ্জি ট্রফি অভিযান শুরুর আগে আইপিএলে কোনও দল পাচ্ছেন কি না, সে দিকেই নজর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ীর।
ফাইনালে পাঁচ উইকেট-সহ ৩৫ রান করে ম্যাচের সেরা হওয়ার পরে তাঁর দিকে নজর রয়েছে বেশ কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির। তিনি রাজ অঙ্গদ বাওয়া। জানিয়ে দিলেন, বিরাট কোহলি অথবা মহেন্দ্র সিংহ ধোনির দলে থাকতে পারলে সবচেয়ে খুশি হবেন। কিন্তু যে দলেই সুযোগ পান না কেন, সেরাটা উজাড় করে দেবেন।
প্রথম ভারতীয় হিসেবে প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ রান এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে। উগান্ডার বিরুদ্ধে ১৬২ রানে অপরাজিত থেকে নজির গড়েছিলেন। ফাইনালে আরও একটি নজির ছিল রাজের নামের পাশে। প্রথম ভারতীয় হিসেবে পাঁচ উইকেট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে এক ধাপ এগিয়ে দেন দলকে। সে দিন থেকেই তাঁর উপরে নজর ছিল বেশ কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজ়ির। দশ দলের আইপিএলে দল পেতে তাঁর খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথাও নয়। শুক্রবার সকালে আনন্দবাজারকে ফোনে রাজ বলছিলেন, ‘‘প্রথমবার আইপিএল নিলামে আমার নাম উঠতে চলেছে। সত্যি কথা বলতে, প্রচণ্ড উত্তেজিত। দেশের হয়ে খেলার সঙ্গেই আইপিএল খেলার স্বপ্ন থাকে প্রত্যেক ক্রিকেটারের। সেই লক্ষ্যে এক ধাপ এগোতে পারলে খুব খুশি হব।’’
রাজের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কার দলে সুযোগ পেলে সবচেয়ে খুশি হবেন? বিশ্বকাপ জয়ী অলরাউন্ডারের উত্তর, ‘‘বিরাট ভাই অথবা মাহি ভাইয়ের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ব্যবহার করতে পারলে সবচেয়ে ভাল লাগবে। ছোটবেলা থেকে ওঁদের খেলা দেখেই বড় হয়েছি। দু’জনেই কিংবদন্তি।” হাসতে হাসতে যোগ করলেন, “কলকাতা নাইট রাইডার্সে খেলতে পারলে শাহরুখ খানের সঙ্গে অন্তত আলাপ করতে পারব।’’ আরও বললেন, ‘‘তবে আইপিএলে যে কোনও দলে সুযোগ পেলেই অনেক কিছু শিখতে পারব। যে দলেই খেলার সুযোগ পাই না কেন, সেরাটা উজাড় করে দেব।’’
রাজের পরিবারের প্রত্যেকেই ক্রীড়াপ্রেমী। ঠাকুরদা তারলোচন বাওয়া দেশের হয়ে অলিম্পিক্স পদক জিতেছেন ১৯৪৮ সালে। বাবা সুখবিন্দর বাওয়া খেলা শিখিয়েছেন যুবরাজ সিংহকে। ছোটবেলায় রাজ ডান-হাতে ব্যাট করতেন। নেটে যুবরাজের ব্যাটিং দেখে তাঁকে অনুকরণ করতেন। রাজ যখনই বাঁ-হাতি ব্যাটারদের মতো স্টান্স নিয়ে দাঁড়াতেন, তাঁর বাবা ডান-হাতে ব্যাট ধরিয়ে দিতেন। বহু চেষ্টার পরেও ছেলে বাঁ-হাতেই ব্যাটিং শুরু করেন। ছেলেকে সাবলীল ভঙ্গিতে ব্যাট করতে দেখে বাবা তাঁকে ডানহাতি ব্যাটার হতে বাধ্য করেননি। যুবরাজকে দেখে বাঁ-হাতে বল করার চেষ্টা করে যদিও তাতে সফল হননি। ডানহাতি পেসার হিসেবেই যাত্রা শুরু করতে হয় তাঁকে। সুইংয়ের পাশাপাশি সীমিত ওভারের ক্রিকেটে মানিয়ে নেওয়ার জন্য বৈচিত্র এনেছেন বোলিংয়ে। ব্যাট হাতে দ্রুত রান করার জন্য ফ্রন্টফুট পুল থেকে স্কুপ, সমস্ত কিছুই রপ্ত করতে হয়েছে রাজকে। বলছিলেন, ‘‘সাদা বলের ক্রিকেটে টিকে থাকতে গেলে বৈচিত্র প্রয়োজন। অফকাটার, লেগকাটার, নাক্ল বল করতে সমস্যা হয় না। স্লোয়ার বাউন্সারও রপ্ত করেছি।’’ যোগ করেন, ‘‘বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও একাধিক শট রপ্ত করতে হয়েছে। আমাদের মতো মাঝের সারির ব্যাটারদের উইকেটে থিতু হওয়ার সময় থাকে না। স্কোরিং শটের সাহায্যেই রান এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়।’’
যুব বিশ্বকাপের অভিজ্ঞতা কখনও ভুলতে পারবেন না রাজ। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সঙ্গেই প্রথমবার বিদেশে গিয়ে খেলার অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। ভিভিএস লক্ষ্মণ, কার্টলি অ্যামব্রোজদের মতো কিংবদন্তিদের পরামর্শ নিয়ে দেশে ফিরেছেন বিশ্বকাপ নিয়ে। রাজ বলছিলেন, ‘‘দেশে ফেরার পর থেকে অদ্ভুত লাগছে। কখনও ভাবিনি আমার সঙ্গে সেলফি তোলার ইচ্ছেপ্রকাশ করবেন কেউ। প্রথম বার এই অনুরোধ পেয়ে এতটাই খুশি হই যে, আমি তার সঙ্গে একটি ছবি তুলে রেখেছি। ছবিটি পরে দেখলে সেই মুহূর্তের কথা মনে থাকবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘অ্যামব্রোজ স্যর আমাকে ডেকে ১৫ মিনিট কথা বলেছিলেন। তাঁর নির্দেশ, লাইন ও লেংথ নিয়ে ভাবতে হবে না। গতি বাড়াও। যতটা সম্ভব জোরে বল করার চেষ্টা করো। সাফল্য আসবেই। স্যরের কথা অনুযায়ী গতি বাড়ানোর উপরে কাজ করব।’’ চণ্ডীগড়ের তরুণ অলরাউন্ডারের লক্ষ্য, দেশের হয়ে টেস্ট খেলার। সেই স্বপ্ন নিয়েই ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলেন। তাঁর বাবাও একই স্বপ্ন দেখেন। রাজের লক্ষ্য, আগামী তিন বছরের মধ্যে সেই স্বপ্ন পূরণ করার। বলে দিলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার জন্য রঞ্জি ট্রফিতে পারফর্ম করতে হবে। আপাতত সেটাই লক্ষ্য। তবে আগামী তিন বছরের মধ্যে দেশের হয়ে খেলতেই হবে। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতির মাত্রা বাড়াতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy