অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ২ রান ৩ উইকেট পড়ে গিয়েছিল ভারতের। সেই সময় কেমন ছিল ভারতীয় সাজঘরের অবস্থা? সবাই থম মেরে বসেছিলেন। পিন পড়লেও হয়তো শব্দ শোনা যেত। সেই সময় সাজঘর থেকে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। চাপ নিতে পারছিলেন না তিনি।
ম্যাচ শেষে একটি সাক্ষাৎকারে সাজঘরের পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেন অশ্বিন। তিনি বলেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস শেষ হওয়ার পরে আইস বাথ নিচ্ছিলাম। সাজঘরে ফিরে দেখি ৩ উইকেট পড়ে গিয়েছে। তার পরে বিরাটের ব্যাটে লেগে বলটা যখন উপরে উঠল তখন আমি সাজঘর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল পালিয়ে যাই। সব শেষ হলে কেউ আমাকে ডেকে দিক। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলা কখনওই সহজ নয়। পুরো ম্যাচ আমি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার পা ব্যথা করছে।”
মিচেল মার্শ কোহলির ক্যাচ ছাড়ার পরে প্রাণ ফিরে পেয়েছিলেন অশ্বিন। তার পরেও সংশয় ছিল তাঁর। বার বার মনে হচ্ছিল, অস্ট্রেলিয়া কি ২০ রান বেশি করে ফেলল? তবে তিনি জানতেন, চেন্নাইয়ের পিচে ৮-১০ বল খেললে তার পরে খেলা সহজ। বিরাট ও রাহুলের উপর তাঁর ভরসা ছিল।
আরও পড়ুন:
চেন্নাইয়ের পিচে বল সাধারণত ঘোরে। কিন্তু এ রকম পিচ তিনি দেখেননি বলে জানিয়েছেন অশ্বিন। ভারতীয় স্পিনার বলেন, ‘‘চেন্নাইয়ে প্রচুর ক্রিকেট খেলেছি। তবে এমন পিচ দেখিনি। অনেক জায়গাই ভেঙে গিয়েছে। ভাল হয়েছে টস হেরে গিয়েছি। দ্বিতীয় ইনিংসে হ্যাজ়লউড এবং বাকিদের বল নিচু হচ্ছিল। আমরা সাজঘরে বসে ভাবছিলাম কী হবে। তবে দর্শকেরা আমাদের জন্য সব সময় গলা ফাটিয়েছেন। আমি বল করতে গিয়ে বুঝতে পেরেছিলাম যে, এই পিচে এক রকম গতিতে বল করা কঠিন। গতির হেরফের করলে ব্যাটারেরা চাপে পড়বে। সেটাই হয়েছে।”

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বিশ্বকাপের প্রাথমিক দলে ছিলেন না অশ্বিন। প্রতিযোগিতা শুরুর আগে অক্ষর পটেল চোট পাওয়ায় তাঁর জায়গায় অশ্বিনকে নেওয়া হয়। প্রথম দলে সুযোগ তিনি কেন পাননি, সেই বিষয়ে এখন ভাবতে চান না অশ্বিন। তিনি বলেন, ‘‘এই বিষয়ে কথা বলে কোনও লাভ নেই। কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। আমি শুধু নিজের খেলার দিকে মন দিই। ভাবি, সুযোগ পেলে দলকে কী ভাবে জেতাতে পারব। আমি এ ভাবেই তৈরি হয়েছি। নিজের কাজটা করতে চাই। সে দিকেই মন দিই।’’
এখনও খেলার আগে চাপে থাকেন অশ্বিন। এত বছর পরে আবার বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলতে নামার আগে চিন্তা হচ্ছিল ৩৫ বছর বয়সি স্পিনারের। চাপের মধ্যে স্ত্রী, বন্ধুদের মেসেজ করেছিলেন তিনি। অশ্বিন বলেন, ‘‘খেলার আগে খুব চাপে পড়ে গিয়েছিলাম। স্ত্রী ও বন্ধুদের মেসেজ করেছিলাম। প্রথম দু’ওভারে একটু বেশি চিন্তা করছিলাম। অনেক কিছু ভাবছিলাম। তৃতীয় ওভার থেকে অনেকটা ধাতস্থ হলাম। তার পরে আর চাপ নিইনি। অনেক উপভোগ করে বল করেছি।’’

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
১৩ বছর ধরে ভারতের হয়ে খেলছেন অশ্বিন। তবে এ বারের বিশ্বকাপ নাকি খেলতেই চাননি তিনি। অশ্বিন বলেন, ‘‘হঠাৎ করে ডাক পেলাম। আমি তো বাড়ি বসে মজা করছিলাম। ঘরোয়া ক্রিকেটে কয়েকটা ম্যাচ খেললাম। তবে (রাহুল) দ্রাবিড় এবং রোহিত (শর্মা) আমাকে বলে রেখেছিল যে, প্রয়োজন হলে ডাকবে। আমি মজা করেই বলেছিলাম যে, আমাকে যেন ডাকতে না হয়।” এখনও মাঠে নামলে দলকে জেতানোর লক্ষ্য নিয়েই নামেন অশ্বিন। ভারতীয় স্পিনার বলেন, “যে দিন দলে ডাক পেলাম, সকলে আমাকে বলছিল, বিশ্বকাপ জেতাব। আমি বলেছিলাম, যত দিন ভারতের হয়ে খেলতে পারছি, তত দিন খুশি। ১৩ বছর হয়ে গেল। এখনও দলকে জেতানোর চেষ্টা করে যাই।”