মধ্যমণি: টম লাথামকে আউট করে সতীর্থদের সঙ্গে অশ্বিন। মুম্বইয়ে দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিনে। ছবি— পিটিআই।
মুম্বই টেস্টের তৃতীয় দিনের শেষে অঙ্কটা এ রকম। জয়ের জন্য নিউজ়িল্যান্ডকে করতে হবে ৪০০ রান। ভারতকে পেতে হবে পাঁচটি উইকেট। হাতে দু’দিন। জানি, ক্রিকেট মহান অনিশ্চয়তার খেলা। তবু বলা যেতেই পারে, আবহাওয়া সমস্যা না করলে সোমবারই টেস্ট এবং সিরিজ় জিততে চলেছে বিরাট কোহালিরা।
এই টেস্টে অধিনায়ক কোহালির দুই প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠল মায়াঙ্ক আগরওয়াল এবং আর অশ্বিন। টেস্ট জীবন খুব ভাল ভাবে শুরু করার পরে ছন্দ হারিয়েছিল মায়াঙ্ক। দল থেকেও ছিটকে যায়। সুযোগ পেয়েই মুম্বইয়ের কঠিন পিচে নিজেকে প্রমাণ করল। প্রথম ইনিংসে দেড়শো করার পরে দ্বিতীয় ইনিংসে করল ৬২।
এই দু’টো ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের টিকিট নিশ্চিত মায়াঙ্কের। যেখানে প্রথম তিন ওপেনার হতে চলেছে রোহিত শর্মা, কে এল রাহুল এবং মায়াঙ্ক। শুভমন গিল কিন্তু নিজের উপরে চাপ বাড়িয়ে চলছে। এক জন ওপেনার ৩০-৪০ রান করার পরে সেটাকে বড় ইনিংসে বদলে ফেলবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বারবার সেই কাজে ব্যর্থ হচ্ছে। এ দিনও ৪৭ রান করে ফিরে গেল।
ভারত যখন সাত উইকেটে ২৭৬ তুলে ইনিংস ডিক্লেয়ার করল, ম্যাচের ভাগ্য লেখা হয়ে গিয়েছে। জয়ের জন্য ৫৪০ রানের লক্ষ্য! একেবারে নিষ্প্রাণ উইকেটেও যা প্রায় অসম্ভব। আর ওয়াংখেড়ের পিচে তো বল ঘুরছে, বাউন্সও করছে। রয়েছে অশ্বিনের মতো বোলার। কোনও দ্বিধা না রেখে বলতে পারি, এই মুহূর্তে লাল বলের ক্রিকেটে বিশ্বের সেরা স্পিনারের নাম অশ্বিনই। এ দিনও নিউজ়িল্যান্ডের প্রথম তিনটে উইকেট তোলার কারিগর ও। একই সঙ্গে দু’দেশের টেস্ট দ্বৈরথে ৬৫ উইকেট পেয়ে ছুঁল রিচার্ড হ্যাডলিকে।
অনেকেই বলতে পারেন, ঘূর্ণি পিচে উইকেট তোলার মধ্যে কৃতিত্ব কোথায়। কৃতিত্ব আছে আর সেখানেই অশ্বিন বাকিদের থেকে আলাদা। ঘূর্ণি উইকেটে ও ফ্লোটার দিতে পারে, সোজা বল করতে পারে। যে বলগুলো ঘূর্ণি পিচে সবচেয়ে মারাত্মক হয়। এ দিনও বাঁ-হাতি টম লাথাম সেই বলের শিকার হল। বল ঘুরবে বলে ব্যাট অফস্টাম্পের লাইনে রেখেছিল ও। কিন্তু মিডল স্টাম্পে পড়া বল সোজা হয়ে পায়ে লাগে।
এক সময়কার বিশ্বের অন্যতম সেরা অফস্পিনার এরাপল্লী প্রসন্নর কথা মনে করাচ্ছে অশ্বিন। প্রসন্ন ছিলেন সব ধরনের পিচের বোলার। আমার তো মনে হয়, ঘূর্ণির চেয়েও নিষ্প্রাণ পিচে প্রসন্ন বেশি ভয়ঙ্কর ছিলেন। ক্রিজ়কে দারুণ কাজে লাগাতেন, অসাধারণ বৈচিত্র ছিল। অশ্বিনও সে রকম বোলার হয়ে উঠছে। এ দিনও কখনও উইকেট থেকে দূরে সরে, কখনও কাছে এসে বলটা করেছে। অফস্পিনের সঙ্গে ফ্লোটার, ক্যারম বল— এ সব তো আছেই।
সামনে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। তার আগে ব্যাটিং প্র্যাক্টিস করে নিচ্ছিল কোহালি। যখন মনে হচ্ছিল বড় রান আসবে, তখন রাচিন রবীন্দ্রের নিরীহ বল কাট করতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লাগিয়ে বোল্ড হল। কোহালির মুখ দেখে মনে হল, ও নিজেই বিশ্বাস করতে পারছে না আউট হয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে জায়গা নিশ্চিত ঋদ্ধিমান সাহারও। কানপুরে লড়াকু ইনিংসের পরে অসাধারণ কিপিং করল ওয়াংখেড়ের ঘূর্ণি পিচে। এখানে বাউন্স থাকায় কিপারদের কাজ কঠিন হয়। সেখানেই ঋদ্ধি ওর শ্রেষ্ঠত্ব বুঝিয়ে দিল। ঋদ্ধির পায়ের নড়াচড়া আর রিফ্লেক্সটা দারুণ। হাত দু’টো ঠিক বলের পিছনে নিয়ে যেতে পারে। যে কারণে ওর বল ধরতে সমস্যা হয় না। এ দিন ঋদ্ধির কিপিং দেখে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করল সুনীল গাওস্করও।
একটা অভিনব ঘটনার সঙ্গেও এ দিন নাম জুড়ে গেল ঋদ্ধির। নিউজ়িল্যান্ডের টম ব্লান্ডেলকে রান আউট করে। বলটা ছুড়েছিল পরিবর্ত ফিল্ডার হিসেবে নামা উইকেটকিপার কে এস ভরত। বল ধরে উইকেট ভাঙে ঋদ্ধি। রান আউট হয় নিউজ়িল্যান্ডের উইকেটকিপার। এক আউটে জড়িয়ে গেল তিন কিপার!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy