গ্যালারি মাতালেন রজনীকান্ত, মাঠ মাতালেন লোকেশ রাহুল। গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ
উইকেটের পিছনে এবং সামনে নিজেকে উজাড় করে দিলেন লোকেশ রাহুল। দলে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাওয়া রাহুলই শুক্রবার ভারতীয় ক্রিকেট দলের রজনীকান্ত। দর্শকাসনে ছিলেন দক্ষিণী সিনেমার সুপারস্টার। তাঁর সামনে ম্যাজিক না হলেও মধ্যবিত্তের টানাটানির সংসারের মতো কিছুটা যেন অনিশ্চয়তা ভরা জয় এল ওয়াংখেড়েতে। রবীন্দ্র জাডেজার সঙ্গে রাহুলের ১০৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে জয় এল ৬১ বল বাকি থাকতে। অস্ট্রেলিয়াকে ৫ উইকেট হারিয়ে এক দিনের সিরিজ়ে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ভারত।
প্রথমে ব্যাট করে স্টিভ স্মিথদের ইনিংস শেষ হয়ে যায় ১৮৮ রানে। টস হেরে প্রথমে ব্যাট করার সুযোগ পাওয়ায় খুশি ছিলেন স্মিথ। ইনিংসের শেষে অবশ্য তাঁর মুখে আর খুশির তেমন রেশ ছিল না। ম্যাচের প্রথমার্ধে মহম্মদ শামি, মহম্মদ সিরাজদের দাপটে টস হার্দিক পাণ্ড্যর প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্তকে সঠিক-ই মনে হয়েছে। শামি ১৭ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার মিডল অর্ডারের প্রতিরোধ ভেঙে দিয়েছে তাঁর রিভার্স সুইং। তাঁর সঙ্গে মানানসই ছিলেন সিরাজও। ২৯ রানে ৩ উইকেট তাঁর। ওয়াংখেড়ের ২২ গজ হতাশ করেনি স্পিনারদেরও। জাডেজা ৪৬ রানে ২টি এবং কুলদীপ যাদব ৪৮ রানে ১টি উইকেট নিয়েছেন।
ওপেনার মিচেল মার্শ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ার কোনও ব্যাটারই শুক্রবার তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারলেন না। মার্শ উইকেটের এক দিন আগলে রেখে করলেন ৮১ রান। ৬৫ বলের ইনিংসে মারলেন ১০টি চার এবং ৫টি ছক্কা। তাঁর আগ্রাসী ব্যাটিং দাম পেল না সতীর্থদের ব্যর্থতায়। মার্শের পর অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক জশ ইংলিস করলেন ২৭ বলে ২৬ রান। স্মিথের অবদান ৩০ বলে ২২। বাকিরা শুধু ২২ গজে এলেন এবং সাজঘরে ফিরলেন।
ভারতীয় দলের ইনিংসের শুরুটাও তেমনই। শুভমন গিল এক দিক আগলে রাখার চেষ্টা করলেও দলকে ভসা দিতে পারলেন না ঈশান কিশন (৩), বিরাট কোহলি (৪), সূর্যকুমার যাদবরা (শূন্য)। শুভমন করলেন ৩১ বলে ২০ রান। কিছুটা চেষ্টা করলেন অধিনায়ক হার্দিক। তাঁর ব্যাট থেকে এল ৩১ বলে ২৫ রান। তাঁর ইনিংস ব্যাটিং বিপর্যয় রুখতে পারলেও জয়ে এনে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল না। সেই কাজটি জাডেজাকে নিয়ে করলেন রাহুল। ৩৯ রানে ৪ উইকেট চলে যাওয়ার পর ভারতীয় দলের ‘রজনীকান্ত’ তখন রাহুলই। নিন্দকেরা বলেন, বড় ম্যাচে পারফরম্যান্স করতে পারেন না সুনীল শেট্টির জামাই। ভুল। প্রবল চাপের মুখে শুক্রবার রাহুলই ঢাল হয়ে দাঁড়ালেন অস্ট্রেলীয় বোলিং আক্রমণের সামনে। পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে শেষ পর্যন্ত রাহুল অপরাজিত থাকলেন ৭৫ রানে। তাঁর দায়িত্বশীল ইনিংসে রয়েছে ৭টি চার এবং ১টি ছক্কা। দলকে জেতানোর লড়াইয়ে রাহুল যোগ্য সঙ্গী হিসাবে পেলেন জাডেজাকে। তিনি অপরাজিত থাকলেন ৬৯ বলে ৪৫ রান করে। বাঁহাতি অলরাউন্ডারের ব্যাট থেকে এল ৫টি চার। অস্ট্রেলিয়ার ১৮৮ রানের জবাবে ভারত তুলল ৫ উইকেটে ১৯১ রান।
শুধু ব্য়াটার রাহুল নয়, শুক্রবার দেখা গেল উইকেটরক্ষক রাহুলের মুন্সিয়ানা। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে প্রথম একাদশে থাকতে হলে রাহুলকে নাকি উইকেটরক্ষকের দায়িত্বও সামলাতে হবে। ঋষভ পন্থের অনুপস্থিতিতে এই শর্তেই নাকি হারিল পেতে পারেন বিশ্বকাপের টিকিট। ব্যাটে নিয়মিত রান পাচ্ছেন না। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তৃতীয় এবং চতুর্থ টেস্টের দলে জায়গা পাননি। সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল সহ-অধিনায়কের পদ থেকেও। রাহুলের উপর চাপিয়ে দেওয়া এই ‘শর্ত’ ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে করিয়ে দিতে পারে আরও এক রাহুলের কথা। তিনিও আছেন ভারতের সাজঘরে। কোচ রাহুল দ্রাবিড়। এক সময় তাঁকেও সাদা বলের ক্রিকেটে জায়গা ধরে রাখতে উইকেটে পিছনে ঘাম ঝরাতে হত। সিনিয়র রাহুলই হয়তো পথ দেখিয়েছেন জুনিয়র রাহুলকে।
ওয়াংখেড়েতে রাহুল কিন্তু বুঝিয়ে দিলেন তিনি ফুরিয়ে যাননি। উইকেটের সামনে তো বটেই, পিছনেও তাঁর উপর ভরসা রাখা যায়। চাপের মুখেও রুখে দাঁড়াতে পারে তাঁর ব্যাট। ক্রমশ দূরে সরে যাওয়া জয়কে টেনে আনতে পারেন কাছে। ব্যাটে-বলে ঠিকমতো হলেই তাঁর দিন। প্রতিপক্ষ বা ২২ গজ যেমনই হোক, দলকে ভরসা দিতে পারেন রাহুল।
অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা শুরুর ঝাপটা ধরে রাখতে পারলেন না শেষ পর্যন্ত। ৩৯ রানে ভারতের ৪ উইকেট ফেলে দিয়েও রাহুল-জাডেজা জুটির সামনে অসহায় দেখাল তাঁদের। দুই জোরে বোলার মিচেল স্টার্ক (৪৯/৩) এবং মার্কাস স্টোইনিসের (২৭/২) তৈরি করা চাপ ধরে রাখতে পারলেন না অন্যরা। ফল স্বরূপ ব্যাটিং ব্যর্থতার পর লড়াইয়ে ফিরে এসেও জিতে মাঠ ছাড়তে পারলেন না সফরকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy