Advertisement
১৯ জানুয়ারি ২০২৫
ICC Champions Trophy 2025

১৫ জনের দলে চিন্তা তিন জনকে নিয়ে, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের একটি বিভাগ নিয়েই উঠছে প্রশ্ন

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের ১৫ জনের মধ্যে তিন জনকে নিয়ে চিন্তা রয়েছে। ভারতীয় দলের একটি বিভাগ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

cricket

(বাঁ দিকে) ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা, কোচ গৌতম গম্ভীর (মাঝে) ও নির্বাচক প্রধান অজিত আগরকর (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:০৩
Share: Save:

চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য ১৫ জনের দল ঘোষণা করেছে ভারত। ছয় বিশেষজ্ঞ ব্যাটার, এক উইকেটরক্ষক, চার অলরাউন্ডার, এক বিশেষজ্ঞ স্পিনার ও তিন পেসার রয়েছে দলে। এই ১৫ জনের মধ্যে তিন জনকে নিয়ে চিন্তা রয়েছে। ভারতীয় দলের একটি বিভাগ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তা হল পেস বিভাগ। তিন পেসারকে রাখলেও তাঁদের মধ্যে জসপ্রীত বুমরাহের খেলা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আর এক পেসার আরশদীপ সিংহের এক দিনের ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা কম। তৃতীয় পেসার সবে চোট সেরে ফিরেছেন। গত বছর নভেম্বরের পর থেকে আর জাতীয় দলে খেলেননি তিনি। তাই তাঁরা কতটা প্রভাব ফেলতে পারবেন তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। দলের পেস আক্রমণকে নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা ও নির্বাচক প্রধান অজিত আগরকর। তার পরেও চিন্তা থেকেই যাচ্ছে।

চিন্তা বুমরাহের চোট

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিডনি টেস্টে পিঠের পেশিতে চোট পেয়েছিলেন বুমরাহ। সেই টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে বল করতে পারেননি তিনি। তাঁকে বিশ্রাম নিতে বলেছেন চিকিৎসকেরা। তিনি কতটা সুস্থ সে বিষয়ে বোর্ড কিছু বলছে না। ইংল্যান্ড সিরিজ়ে এক দিনের দলে তাঁকে নেওয়া হলেও প্রথম দু’টি ম্যাচে যে তাঁকে পাওয়া যাবে না তা নিশ্চিত। যদি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তাঁকে খেলাতে হয় তা হলে অন্তত একটি ম্যাচে তাঁকে নামাতে চাইবে ম্যানেজমেন্ট।

বুমরাহের খেলা নিয়ে আশাবাদী হলেও প্রধান নির্বাচক অজিত আগরকরের কথায় দুশ্চিন্তা বেড়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল ঘোষণার পরে বুমরাহের চোট নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা ফিজ়িয়োর রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি। আমরা শুধু জানি, বুমরাহকে পাঁচ সপ্তাহ বল করতে নিষেধ করা হয়েছিল। সেই মতো আমরা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই পারি। ঠিক সময় মতো বুমরাহের ফিটনেস নিয়ে আলোচনা করব আমরা। কোনও ভুল খবর দিতে চাই না। মনে হয় বিসিসিআই সরকারি ভাবে খুব তাড়াতাড়ি কিছু একটা জানাবে। আমাদের শুধু একটা সময় বলা হয়েছে। এটুকু বলব, বুমরাহের খেলার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।” বুমরাহ না খেলতে পারলে যে ভারতের পেস বিভাগ দুর্বল হবে তা বলা বাহুল্য।

শামির ফর্ম কেমন

চোট সারিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা শুরু করেছেন শামি। বাংলার হয়ে রঞ্জি, সৈয়দ মুস্তাক আলি ও বিজয় হজারে খেললেও জাতীয় দলে খেলার ধকল নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। প্রথমে শোনা গিয়েছিল, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শেষ দুই টেস্টে পাঠানো হবে শামিকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে পাঠানো হয়নি। শামিকে নিয়ে আগরকর বলেন, “২০২৩ সালে এক দিনের বিশ্বকাপের পর থেকে শামি খেলতে পারছে না। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি সিরিজ়ের দলে নেওয়া হয়েছে তাঁকে। দল শামির উপর ভরসা রেখেছে। সেই জন্যই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে নেওয়া হয়েছে।”

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি ও এক দিনের দলে শামিকে রাখা হয়েছে। তাঁকে খেলিয়ে ম্যাচ ফিটনেস বাড়াতে চাইছেন নির্বাচকেরা। আগরকর আরও বলেন, “সাদা বলের ক্রিকেটে খেলার মতো ফিটনেস শামির রয়েছে। আমরা চাইছিলাম ও অস্ট্রেলিয়ায় খেলুক। কিন্তু ওর হাঁটুর যা অবস্থা ছিল তাতে চার বা পাঁচ দিনের ম্যাচ খেলা সম্ভব হত না। সাদা বলের ক্রিকেটে শামি সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফিতে সব ম্যাচ খেলেছে। বিজয় হজারে ট্রফিতেও কিছু ম্যাচ খেলেছে। বুমরাহকে নিয়ে সংশয় রয়েছে। এমন অবস্থায় শামি যখন সুস্থ রয়েছে তখন ওকে দলে নিতেই হবে। শামির ফিটনেস দেখে নেওয়ার জন্যই টি-টোয়েন্টি দলে নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার চাপটাও রয়েছে। শামি দুর্দান্ত বোলার। সুস্থ থাকলে ও তো খেলবেই। আশা করছি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে ম্যাচগুলো খেলে শামি নিজের ১০০ শতাংশ দেওয়ার জায়গায় পৌঁছে যাবে।”

শামিকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে পেয়ে খুশি অধিনায়ক রোহিতও। তিনি বলেন, “সাদা বলের ক্রিকেটে শামি কতটা ভয়ঙ্কর তা আমরা জানি। সেটা এক দিনের বিশ্বকাপে দেখা গিয়েছে।” রোহিত খুশি হলেও বাংলার হয়ে যে কয়েকটি ম্যাচে শামি নেমেছেন তাতে আহামরি কিছু করেননি। কিছু ম্যাচে উইকেট নিলেও রান দিয়েছেন প্রচুর। অবশ্য শামি সেই দলে পড়েন যাঁরা যত বল করেন তত ফিটনেস বাড়ে। সেই কারণেই হয়তো নেওয়া হয়েছে তাঁকে।

বুমরাহের বিকল্প আরশদীপ

ভারতের হয়ে এক দিনের ক্রিকেটে মাত্র ছ’টি ম্যাচ খেলেছেন আরশদীপ। নিয়েছেন ১০টি উইকেট। তার মধ্যে একটি ম্যাচেই পাঁচটি উইকেট নিয়েছেন তিনি। ২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর শেষ বার এক দিনের দলে খেলেছেন আরশদীপ। অর্থাৎ, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ৫০ ওভারের ম্যাচে নামেননি তিনি। প্রতি ম্যাচে ১০ ওভার বল করার অভিজ্ঞতা কম তাঁর। আরশদীপকে নেওয়ার একটি কারণ তিনি বাঁহাতি বোলার। দলে আর কোনও বাঁহাতি নেই। পাশাপাশি নতুন ও পুরনো বলে তাঁর দক্ষতা আরশদীপকে জায়গা করে দিয়েছে। সেই যুক্তি দিয়েছেন রোহিতও। তিনি বলেন, “বুমরাহ খেলতে পারবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। তাই আমরা এমন একটা দল চেয়েছি যেখানে নতুন ও পুরনো বলে বল করার দক্ষতা থাকা বোলার চেয়েছি। সেই কাজটা আরশদীপ করতে পারবে।” অর্থাৎ, বুমরাহকে নিয়ে সংশয় থাকাতেই আরশদীপকে দলে রাখা হয়েছে।

আরশদীপের অনভিজ্ঞতাকেও লুকোনোর চেষ্টা করেছেন রোহিত। তিনি টেনে এনেছেন টি-টোয়েন্টির প্রসঙ্গ। ভারতের কুড়ি-বিশের ক্রিকেটে ধারাবাহিক ভাবে খেলেন আরশদীপ। তাই তাঁকে অনভিজ্ঞ বলতে চান না ভারত অধিনায়ক। রোহিত বলেন, “আরশদীপ হয়তো বেশি এক দিনের ম্যাচ খেলেনি কিন্তু টি-টোয়েন্টি খেলেছে। তাই ওকে অনভিজ্ঞ বলা যাবে না।” তবে টি-টোয়েন্টি ও এক দিনের ক্রিকেটে বিস্তর ফারাক। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বিশ্বের সেরা আটটি দল খেলবে। সেখানে স্নায়ুর চাপ ধরে রাখতে হবে আরশদীপকে।

বুমরাহের কারণেই বাদ সিরাজ

গত কয়েক বছরে ভারতের হয়ে বুমরাহ ও শামির পাশাপাশি ধারাবাহিক ভাবে খেলেছেন মহম্মদ সিরাজ। ভারতের হয়ে এক দিনের বিশ্বকাপেও খেলেছেন তিনি। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দলে তিনি নেই। কেন? রোহিতের মতে, বুমরাহকে নিয়ে সংশয় থাকাতেই সিরাজের বদলে আরশদীপকে নিতে হয়েছে। কারণ, তাঁরা এমন বোলার চাইছেন যিনি নতুন ও পুরনো বলে সমান দক্ষ। রোহিত বলেন, “একমাত্র সিরাজই দলে নেই। আমরা এই বিষয়ে অনেক আলোচনা করেছি। সিরাজকে যদি নতুন বল দিতে পারি তা হলে কী লাভ? সেখানেই ও পিছিয়ে পড়েছে। আমরা তিন জন পেসারই নিতে পারতাম। তাই সিরাজকে বাদ দিতে হয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু দলের ভারসাম্যের জন্য করতে হয়েছে। আমরা এমন তিন জন পেসার নিয়েছি যারা নতুন ও পুরনো বলে সমান দক্ষ। দলের ভারসাম্য রাখতে গিয়ে কেউ কেউ বাদ যেতেই পারে। সকলকে তো খুশি করা যায় না। আমাদের সেরা দল বাছতে হবে। সেটাই করেছি।”

তবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সিরাজের অভিজ্ঞতার দিকে নজর দেননি নির্বাচকেরা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি পরীক্ষিত। যদি কোনও কারণে বুমরাহ খেলতে না পারেন, বা আরশদীপ সে ভাবে পারফর্ম না করতে পারেন, তা হলে সিরাজের প্রয়োজনীয়তা হতে পারে। কিন্তু সেই জায়গা খোলা রাখেনি ভারত। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এক দিনের সিরিজ়ে বুমরাহের বিকল্প হিসাবে নেওয়া হয়েছে হর্ষিত রানাকে। অর্থাৎ, বুমরাহ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে না পারলে হর্ষিত দলে জায়গা পাবেন। সে ক্ষেত্রে আরও অনভিজ্ঞ হবে ভারতের পেস বোলিং আক্রমণ।

দুর্বলতা ঢাকতে পারবেন অলরাউন্ডারেরা?

ভারতীয় দলে চার জন অলরাউন্ডার নেওয়া হয়েছে। দলের ব্যাটিং গভীরতা ও পাশাপাশি বোলিংয়ের কথা মাথায় রেখেই তাঁদের নেওয়া হয়েছে। তাঁদের উপর ভরসা রাখছেন রোহিত। তিনি বলেন, “স্পিনার-অলরাউন্ডার বেশি থাকলে দলের ব্যাটিং গভীরতা বাড়ে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমাদের বেশি পেসার-অলরাউন্ডার নেই। ওয়াশিংটন, জাডেজা, অক্ষরেরা ভাল মানের অলরাউন্ডার। ওরা দলের জন্য অনেক ভাল ইনিংস খেলেছে। উইকেট নিয়েছে। এই মানের বোলার থাকলে দলের ভারসাম্য ভাল থাকে। আমাদের সব ধরনের স্পিনার আছে। প্রতিযোগিতার কথা মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

রোহিত বা আগরকর হয়তো ভাবছেন, দুবাইয়ের মাটিতে স্পিনারের বেশি সাহায্য পাবেন। সেই কারণেই পেসারের থেকে বেশি স্পিনার দলে রাখা হয়েছে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়ে দেখা দেবে না তো? ভারতের মাটিতে এক দিনের বিশ্বকাপে ভারতের পেস আক্রমণই কিন্তু দলকে ফাইনালে তুলেছিল। যে তিন পেসার খেলেছিলেন তাঁদের এক জন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নেই। এক জনের খেলা নিয়ে সংশয় রয়েছে। আর এক জন সবে চোট সারিয়ে ফিরছেন। তাই ভারতের পেস আক্রমণ যদি ব্যর্থ হয় তা হলে কি স্পিনার বা অলরাউন্ডারেরা সেই দুর্বলতা ঢাকতে পারবেন? প্রশ্ন উঠছে।

অন্য বিষয়গুলি:

ICC Champions Trophy 2025 Rohit Sharma Gautam Gambhir Ajit Agarkar India Cricket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy