প্রতীক্ষা: হার্দিকের ফেরার দিকে তাকিয়ে রোহিতরা। —ফাইল চিত্র।
ইতিহাস বলবে, দেশের সর্বপ্রথম এসটিডি কল হয়েছিল নবাবদের শহর থেকে। সাল ১৯৬০। প্রথম সরাসরি এসটিডি ফোন গেল লখনউ থেকে কানপুরে। তার আগে পর্যন্ত যা হয়েছে, সবই অপারেটরের মাধ্যমে।
ক্রিকেট ইতিহাস কি বলবে, ২০২৩ বিশ্বকাপের সব চেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ফোন কলটিও হয়েছিল লখনউ থেকে? আর তা গিয়েছিল কানপুর নয়, বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে?
এখনকার দিনে দেশের এক শহর থেকে অন্য শহর কী, মোবাইলে কয়েকটা আঙুলের স্পর্শে পৌঁছে যাওয়া যায় বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। লখনউয়ে ইংল্যান্ড ম্যাচের প্রস্তুতির ফাঁকে রাহুল দ্রাবিড় নিজের শহরে মোবাইল ঘোরালেন কি না জানা নেই। তবে তিনি ফোন করুন বা ও দিক থেকে এসটিডি আসুক, ভারতীয় শিবিরের জন্য যে বেশ উৎসাহব্যঞ্জক খবর এসে পৌঁছেছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কী সেই খবর? না, গোড়ালিতে চোট পাওয়া হার্দিক পাণ্ড্যর বিশ্বকাপ অকালে শেষ হওয়ার ভয় আপাতত নেই। আশা করা হচ্ছে, গ্রুপ পর্বের শেষের দিকেই তিনি মাঠে ফিরতে পারবেন। একান্তই যদি তা সম্ভব না হয়, তা হলে সেমিফাইনাল থেকে অন্তত পাওয়া যাবে বলেই আশাবাদী ভারতীয় শিবির।
জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি থেকে দ্রাবিড়দের জানানো হয়েছে, হার্দিকের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে এবং সম্ভবত শনিবার থেকেই দৌড়াদৌড়ি শুরু করবেন। লখনউয়ে রোহিত, কোহলিরা যখন ইংল্যান্ড ম্যাচের অন্তিম মহড়ায় ব্যস্ত থাকবেন, তখন বেঙ্গালুরুতে সহ-অধিনায়ক শুরু করতে চলেছেন বিশ্বকাপে ফিরে আসার আসল লড়াই।
ভারতীয় দলের তারকা অলরাউন্ডার গোড়ালিতে চোট পান পুণেতে গত ১৯ অক্টোবর, পঞ্চমীর দিন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম ওভার বল করার সময় ব্যাটসম্যানের ড্রাইভ পা দিয়ে ঠেকাতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন তিনি। গোড়ালি মচকে যায় তাঁর। উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেও পারেননি। আর বল, ব্যাট কিছুই করতে পারেননি তিনি। পুণে থেকে দল ধর্মশালায় পরের ম্যাচ খেলতে গেলেও হার্দিককে পাঠানো হয় বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে শুশ্রূষার জন্য। জানা গিয়েছে, লিগামেন্টে ‘গ্রেড ওয়ান টিয়ার’ রয়েছে। এত দিন ব্যথা ও পায়ের ফোলা কমানোর ইঞ্জেকশন নিচ্ছিলেন তিনি। শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে পর্ব-২। হাল্কা দৌড় ও জগিং শুরু করিয়ে দেখা হবে গোড়ালি কতটা ধকল নিতে পারছে। তার পরে বোঝা যাবে, কত তাড়াতাড়ি তিনি সম্পূর্ণ সুস্থতায় ফিরতে পারবেন।
আগ্রার মতোই লখনউ দুর্দান্ত সব স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত। বড়া ইমামবড়া ঘুরে দেখতে গিয়ে কেউ বিশ্বাস করবে, এমন বিশাল স্থাপত্য দাঁড়িয়ে আছে কোনও পিলার ছাড়াই! তেমনই এই বিশ্বকাপে হার্দিক হচ্ছেন রোহিতের দলের স্তম্ভ। তাঁকে ছাড়া যে দুরন্ত ছন্দে থাকা নিউ জ়িল্যান্ডকে ধর্মশালায় উড়িয়ে দেওয়া গেল, তা কম অত্যাশ্চর্য ঘটনা নয়। প্রথম একাদশের নকশাটাই পাল্টে ফেলতে হয়েছে হার্দিকের অনুপস্থিতিতে। ব্যাটসম্যান হিসেবে সূর্যকুমার যাদবকে আনতে হয়েছে, ও দিকে বোলিং পোক্ত করতে শার্দূল ঠাকুরকে বসিয়ে নেওয়া হয়েছে মহম্মদ শামিকে। অর্থাৎ, এক জনের অভাব কার্যত মেটানো হচ্ছে দু’জনকে দিয়ে।
বেন স্টোকসদের বিরুদ্ধে লখনউ অভিযানের পরে রোহিতদের পরের দু’টি ম্যাচ মুম্বই ও কলকাতায়। মুম্বইয়ে প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। কলকাতায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এই দু’টি ম্যাচেও হার্দিকের পক্ষে খেলা কঠিন। তবে হাল্কা একটা আশা দেখা দিয়েছে, কলকাতায় ৫ নভেম্বর ভারতের ম্যাচের সময় তিনি দলের সঙ্গে যোগ দিলেও দিতে পারেন। যদি তাঁর উন্নতি প্রত্যাশিত রাস্তায় চলে। ইডেনের ম্যাচের পরে অনেকটা বিরতি রয়েছে ভারতের সূচিতে। পরের ম্যাচ বেঙ্গালুরুতে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ১২ নভেম্বর, দীপাবলির দিন। ভারতীয় ক্রিকেটের যুক্তিবাদী অংশের মত হচ্ছে, নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ওই ম্যাচ থেকেই ফেরানো হোক হার্দিককে। টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে নক-আউট পর্বে ওঠা তো কার্যত নিশ্চিতই হয়ে গিয়েছে। অযথা ঝুঁকি নিতে যাব কেন? নেদারল্যান্ডস ম্যাচে নামালে অপেক্ষাকত কম চাপের মধ্যে হার্দিক সেমিফাইনাল, ফাইনাল যুদ্ধের জন্য তৈরি হতে পারবেন, এই যুক্তিও ফেলে দেওয়ার মতো নয়। গ্রুপ পর্বের বাকি ক’টা ম্যাচের চেয়েও অনেক বেশি করে তাঁকে দরকার পড়বে নক-আউটে। ট্রফির আসল যুদ্ধ তখন শুরু হবে।
সব ইমারত কি লখউয়ের বড়া ইমামবড়া হয়? পিলার ছাড়া দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকবে, সেই নিশ্চয়তা কোথায়?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy