কলকাতা নাইট রাইডার্সের বোলারদের দাপটে যখন চেন্নাই সুপার কিংসের একের পর এক ব্যাটার আউট হচ্ছেন, তখন ক্যামেরা ধরল তাঁকে। রুতুরাজ গায়কোয়াড়। ২৪ ঘণ্টা আগে যাঁকে সরিয়ে চেন্নাই অধিনায়কত্বের দায়িত্ব দিয়েছে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে। কারণ হিসাবে জানানো হয়েছে, রুতুরাজের কনুইয়ের হাড়ে চিড় ধরেছে। তা সত্ত্বেও চেন্নাইয়ের ডাগআউটে বসেছিলেন রুতুরাজ। সেখানে বসেই দলের লজ্জার হার দেখলেন তিনি। ক্যামেরায় দেখে বোঝা যাচ্ছিল, কতটা অসহায় তিনি। খেলা শেষে সেই রুতুরাজের কাছে কাতর আর্জি জানালেন চেন্নাইয়ের সমর্থকেরা।
রুতুরাজের বদলে ধোনিকে অধিনায়ক করার যে কারণ চেন্নাই জানিয়েছিল, সেখানেই অনেক প্রশ্ন উঠেছে। চেন্নাইয়ের প্রধান কোচ স্টিফেন ফ্লেমিং জানিয়েছিলেন, রাজস্থান রয়্যালসের জফ্রা আর্চারের বলে কনুইয়ে চোট পেয়েছিলেন রুতুরাজ। সেই ম্যাচ হয়েছিল ৩০ মার্চ। যদি রুতুরাজের হাড়ে চিড় ধরত, তা হলে তাঁকে তখনই বাদ দেওয়া হল না কেন? তার পরে আরও দু’টি ম্যাচ খেললেন রুতুরাজ। অধিনায়কত্ব করলেন। ফিল্ডিং করলেন ২০ ওভার। ব্যাট করতেও নামলেন। এক বার দেখেও মনে হয়নি কনুইয়ে কোনও সমস্যা হচ্ছে। ১১ দিন পরে তাঁর হাড়ে চিড় ধরল? এ-ও কি সম্ভব? কেউ চোট পেলে তো তাঁর খেলতে সমস্যা হবে। রুতুরাজের তো সেটা হল না। তবে কি ফ্লেমিং যা বলছেন, সেটাই একমাত্র কারণ নয়। রুতুরাজকে সরিয়ে ধোনিকে আনার নেপথ্যে কি দলের পারফরম্যান্স?
তিন বছর আগে চেন্নাই শিবিরে ঠিক একই ঘটনা হয়েছিল। সে বার মরসুমের শুরুতে ধোনি অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন। অধিনায়ক করা হয়েছিল রবীন্দ্র জাডেজাকে। সেই জাডেজা ব্যর্থ হন। প্রথম আটটি ম্যাচের মধ্যে ছ’টি হারে চেন্নাই। জেতে মাত্র দু’টি। অষ্টম ম্যাচের পর জাডেজা হঠাৎ জানিয়ে দেন, তিনি নেতৃত্ব থেকে সরছেন। বদলে ধোনি আবার অধিনায়ক হন। তাতে অবশ্য চেন্নাইয়ের ভাগ্যবদল হয়নি। পরের ছ’টি ম্যাচের মধ্যে দু’টি জিতেছিলেন অধিনায়ক ধোনি। হেরেছিলেন চারটি। ১৪ ম্যাচের মধ্যে চারটি জিতে পয়েন্ট তালিকায় নবম স্থানে শেষ করেছিল চেন্নাই। শেষ চারটি ম্যাচে আর খেলেননি জাডেজা। জানিয়েছিলেন, চোট পেয়েছেন। এ বারও রুতুরাজ সেই চোটের কারণেই কিন্তু মরসুমের বাকি কোনও ম্যাচে খেলবেন না।
আরও পড়ুন:
গত বারের মতো এ বারও ধোনি অধিনায়কত্ব নেওয়ার পর ভাগ্য বদলায়নি চেন্নাইয়ের। কলকাতার বিরুদ্ধে প্রথমে ব্যাট করে মাত্র ১০৩ রান করেছে চেন্নাই। আইপিএলের ইতিহাসে ঘরের মাঠে এটি ধোনিদের সর্বনিম্ন রান। ১০.১ ওভারেই ৮ উইকেটে ম্যাচ জিতেছে কলকাতা। আইপিএলে প্রথম বার পর পর পাঁচটি ম্যাচ হেরেছে চেন্নাই। আর সেই হার ডাগআউটে বসে দেখলেন রুতুরাজ। তাঁর হাতে কিন্তু কোনও প্লাস্টার বা নিদেনপক্ষে ব্যান্ডেজও ছিল না। যাঁর কনুইয়ে চিড় ধরেছে তিনি কিছু না পরেই বসে রয়েছেন। এই ছবি চেন্নাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তবে কি রুতুরাজ অসহায়? দলের চাপে বাধ্য হয়েছেন তিনি। দল ভাল খেলছে না বলে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। চোটের কারণ না দেখালে অধিনায়ককে বাদ দেওয়া সম্ভব ছিল না বলেই সেটা করা হয়েছে? তাই যদি হয়, তা হলে এই সিদ্ধান্ত হয়তো দলকে আরও ডুবিয়ে দেবে। কারণ, এমনিতেই চেন্নাইয়ের ব্যাটিং আক্রমণে দায়িত্ব নেওয়ার মতো কেউ নেই। টপ অর্ডার, মিডল অর্ডার সব ব্যর্থ। রুতুরাজ দু’একটি ম্যাচে ভাল খেলেছেন। তিনিই এই দলের একমাত্র ব্যাটার যিনি দ্রুত রান করার পাশাপাশি বড় ইনিংস খেলতে পারেন। সেই ব্যাটারকে সরিয়ে দিয়ে কি ভুল করল ধোনিদের দল?
আগের মরসুম পর্যন্ত রুতুরাজ ওপেন করতেন। এ বার তিনি তিন নম্বরে খেলছেন। রুতুরাজ জানিয়েছেন, মিডল অর্ডার সামলাতে চান তিনি। সেই কারণে অনেকে তাঁর সমালোচনা করেছিলেন। চেন্নাইয়ের সেই সমর্থকেরাই এখন তাঁর কাছে ক্ষমা চাইছেন। কেউ কেউ তো বলেছেন, এক হাতে ব্যাট করলেও রুতুরাজ বাকিদের থেকে ভাল খেলতেন। দ্রুত সুস্থ হয়ে ফেরার আর্জি জানিয়েছেন চেন্নাইয়ের সমর্থকেরা।
ধোনির ন’নম্বরে নামা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন চেন্নাইয়ের সমর্থকেরা। কলকাতার বিরুদ্ধে যখন চেন্নাইয়ের ব্যাটিং ধুঁকছে, ব্যাটারদের আয়ারাম-গয়ারাম দশা, তখন সকলে ভেবেছিলেন ধোনি নামবেন। কিন্তু তিনি নামেন ন’নম্বরে। চার বল খেলে ১ রান করে ফিরে যান। ধোনির এই ‘স্বার্থপর’ মনোভাবের সমালোচনা এ বার শুরু হয়েছে চেন্নাইয়ের। রুতুরাজ দায়িত্ব নেওয়ার জন্য তিন নম্বরে খেলতে চেয়েছিলেন, সেখানে ধোনি দায়িত্ব এড়াতে চাইছেন। বল করার সময়ও তাঁর সিদ্ধান্ত দেখে মনে হয়েছে, খেলা আগেই হেরে গিয়েছেন তিনি। নইলে যে পিচে স্পিনারেরা দাপট দেখিয়েছে সেখানে ধোনি তাঁর সেরা স্পিনারকে আনলেন খেলা শেষ হওয়ার আগে। রুতুরাজও অসহায় হয়ে পুরোটা দেখলেন। আর এই মিউজ়িক্যাল চেয়ারের খেসারত দিতে হল চেন্নাইয়ের সমর্থকদের। ছবিটা কিন্তু মোটেই ভাল নয় পাঁচ বারের আইপিএল চ্যাম্পিয়নদের জন্য।
- চলতি বছর আইপিএলের ১৮তম বর্ষ। ২০০৮ সাল থেকে শুরু হয়েছিল এই প্রতিযোগিতা। এখন এই প্রতিযোগিতায় খেলে মোট ১০টি দল। তাদের মধ্যেই চলে ভারতসেরা হওয়ার লড়াই।
- গত বার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। তিন বার এই ট্রফি জিতেছে তারা। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও চেন্নাই সুপার কিংস পাঁচ বার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু, দিল্লি ক্যাপিটালস, পঞ্জাব কিংস ও লখনউ সুপার জায়ান্টস এখনও পর্যন্ত এক বারও আইপিএল জিততে পারেনি।
-
২২:৪৮
আবার নায়ক রোহিত, বিপর্যস্ত হায়দরাবাদকে হারিয়ে আইপিএলে আরও এগোল মুম্বই -
২১:৩৭
‘ধোনির ধারেকাছেও আসে না’, দিল্লির কাছে লখনউ হারতেই পুজারার নিশানায় পন্থ -
১৪:২৪
কলকাতার দেখানো পথে চেন্নাই, ১০ নম্বরে থেকেও সমর্থকদের আশা দেখাচ্ছেন ধোনিদের কর্তা! -
১৩:০৩
গোয়েন্কার দলে অশান্তি! ডাগ আউটেই মেন্টর জাহিরের সঙ্গে কথা কাটাকাটি অধিনায়ক পন্থের -
১২:১১
পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডে নিহতদের শ্রদ্ধার্ঘ্য, বুধবার আইপিএল ম্যাচে তিন সিদ্ধান্ত ভারতীয় বোর্ডের