গুরু-শিষ্য: সিদ্ধার্থ লাহিড়ীর সঙ্গে পোপ। —নিজস্ব চিত্র।
ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে তাঁর ছাত্রের শতরান দেখতে পাননি কোচ। তখন এসএ২০ প্রতিযোগিতার দল পার্ল রয়্যালস দলের সঙ্গে যাত্রা করছিলেন বিমানে। গন্তব্যে পৌঁছে জানতে পারেন, তাঁর ছাত্র অলি পোপ ভারতের মাটিতে তাঁরই দেশের বিরুদ্ধে অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেলেছেন। ১৪৮ রানে অপরাজিত আছেন তৃতীয় দিনের শেষে। রোহিত শর্মাদের ছুড়ে দিয়েছেন কঠিন চ্যালেঞ্জ।
পোপের কোচ জানতেন না, তাঁর শেখানো শট খেলেই ভারতের মাটিতে সাফল্য পেয়েছেন ছাত্র। তিনি বেহালার বাসিন্দা। কলকাতা ময়দানে নিয়মিত প্রথম ডিভিশন ক্রিকেট খেলে পাড়ি দিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে। সেখানে স্টার ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে কোচ হিসেবে যোগ দেন। সেই ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতেই ক্রিকেট শিখতে আসেন অলি পোপ।
মাত্র আট বছর বয়স থেকে পোপকে ক্রিকেটের পাঠ দিচ্ছেন। তিনি সিদ্ধার্থ লাহিড়ী। বর্তমানে রাজস্থান রয়্যালস অ্যাকাডেমির প্রধান।
ব্যাটসম্যান হওয়ার স্বপ্ন বরাবরই ছিল। কিন্তু ছোটবেলায় উইকেটকিপিং করতেন ইংল্যান্ড তারকা। নামতেন ফিনিশার হিসেবে। শেষের ওভারগুলোয় ব্যাট করতে হলে দ্রুত রান করতেই হয়। তাই রান বার করার উপায়ও খুঁজতে হয় তাঁকে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মাঝের ওভারে ব্যাট করতে নামলে স্পিনারদের কী ভাবে মোকাবিলা করবেন তিনি? কী ভাবে দ্রুত রান বার করবেন? উত্তর নিজেই খুঁজে নেন।
তখন থেকেই সুইপ ও রিভার্স সুইপের ধার বাড়ান পোপ। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফোনে সিদ্ধার্থ বলছিলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই প্রচণ্ড সাহসী ছিল। সুইপ ও রিভার্স সুইপ অনেকেই প্র্যাক্টিস করে। কিন্তু মাঠে গিয়ে মারার সাহস ক’জন পায়? পোপ ছোটবেলা থেকেই এই দু’টো শট মারতে ভয় পেত না।’’ যোগ করেন, ‘‘আউট হওয়ার ভয় থাকে বলে সাধারণত এই দু’টো শট নিখুঁত না হলে কেউ মারতে চায় না। পোপ বুঝতে পেরেছিল, দ্রুত রান করতে গেলে সুইপ ও রিভার্স সুইপ ওকে রপ্ত করতেই হবে। তাই ঘূর্ণি পিচের উপরে সুইপের অনুশীলন করত।’’
বিশেষ দু’টি সুইপ উন্নতি করতে জো রুটের সাহায্যও নিয়েছেন পোপ। ইংল্যান্ড শিবিরের এক সদস্য বলছিলেন, ‘‘আবু ধাবিতে পিচের উপরে বালি ফেলে পোপকে সুইপ ও রিভার্স সুইপ অনুশীলন করিয়েছিল রুট ও মার্কাস ট্রেসকোথিক। বেশ কয়েক বার ওর ব্যাট ঘুরে যেত। উঠত ক্যাচ। কব্জির পজ়িশনিং পরিবর্তন করে ধীরে ধীরে রপ্ত করেছে এই শট।’’
পোপের ইনিংসে মুগ্ধ তাঁর অন্যতম গুরু রুট। সাংবাদিক বৈঠকে এসে বলছিলেন, ‘‘ভারতের মাটিতে আমার দেখা অন্যতম সেরা ইনিংস।’’ যোগ করেন, ‘‘চেন্নাইয়ে আমি দ্বিশতরান করেছি ঠিকই। কিন্তু এই রকম পিচ ছিল না। ব্যাটিংয়ের জন্য আদর্শ ছিল। হায়দরাবাদে কঠিনতম পরিস্থিতিতে শতরান করেছে ও। পোপ প্রচণ্ড পরিশ্রমী ক্রিকেটার। আবু ধাবিতে প্রাক-সফর প্রস্তুতিতে নিজেকে নিংড়ে দিত। ওকে কখনও ক্লান্ত হতে দেখতাম না। আজ এই ইনিংস ব্যাখ্যা করার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।’’
প্রাক্তন অধিনায়ক আরও বলেন, ‘‘আমি বহু দেশে ক্রিকেট খেলেছি। অনেক কঠিন পরিস্থিতিতে সতীর্থদের রান করতে দেখেছি। আমাদের ড্রেসিংরুমে উপস্থিত অনেকেই আমার সঙ্গে একমত। এ রকম ইনিংস আগে কখনও দেখিনি। শুধুমাত্র ধৈর্যের পরীক্ষা নয়। ধৈর্য থাকলেই এই ইনিংস গড়া যায় না। প্রত্যেকটি বল আপনার পরীক্ষা নিচ্ছে। আউট হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করছে। সব উপেক্ষা করে এ রকম একটি ইনিংস গড়তে দক্ষতা ও সাহস লাগে। যা পোপের মধ্যে আছে। এই মুহূর্তে প্রার্থনা, রেহানের সঙ্গে এমন জুটি যেন দ্রুত না ভাঙে।’’
ভারতকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার স্বপ্ন ইতিমধ্যেই দেখতে শুরু করেছে ইংল্যান্ড। তবে তাঁদের বাঁ-হাতি স্পিনার জ্যাক লিচের হাঁটুতে চোট রয়েছে। বোর্ডে বড় রানের লক্ষ্য দিতে পারলে, ভারতকে অলআউট করার মূল দায়িত্ব নিতে হতে পারে রুটকেই। ভারতের মাটিতে প্রাক্তন অধিনায়কই যে এখন ইংল্যান্ড দলের ‘একমাত্র’ কার্যকরী স্পিনার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy