জো রুট। —ফাইল চিত্র।
পরিস্থিতি যাই হোক না কেন বিপক্ষকে আক্রমণ করো। ইংল্যান্ডের টেস্ট ক্রিকেট খেলার ধরন এখন এটাই। তাতে হারলেও পিছপা হচ্ছেন না বেন স্টোকসেরা। প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে হেরে যায় ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় টেস্টে আবার বাজ়বল (ইংল্যান্ডের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালামের ডাকনাম বাজ়। তাঁর সময়ে ইংল্যান্ড যে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলছে সেটার এই নাম দেওয়া হয়েছে।) খেলতে গিয়ে বিপদে তারা। একের পর এক উইকেট হারাচ্ছে ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় দিনের শেষে ইংল্যান্ডের স্কোর ২৭৮/৪।
অস্ট্রেলিয়া প্রথম দিনে ৩৩৯ তুলেছিল পাঁচ উইকেট হারিয়ে। কিন্তু দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনও পুরো খেলতে পারল না অস্ট্রেলিয়া। শেষ হয়ে গেল ৪১৬ রানে। শেষ পাঁচটি উইকেট চলে গেল ৭৭ রানে। ইংল্যান্ডের বোলারেরা ম্যাচে ফিরিয়ে আনে তাদের।
স্টিভ স্মিথ শতরান করেন। টেস্টে ৩২তম শতরান করে ফেললেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লর্ডসে শতরান করলেন স্মিথ। যে মাঠে অভিষেক হয়েছিল তাঁর। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটার টেস্ট শতরানের তালিকায় ছুঁয়ে ফেললেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক স্টিভ ওয়কে। এখন খেলছেন এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে সব থেকে বেশি টেস্ট শতরানের মালিক স্মিথই।
জেমস অ্যান্ডারসনের বলে কভার ড্রাইভ মেরে শতরান করেন স্মিথ। ৯৯তম টেস্টে শতরান করলেন অসি ব্যাটার। এই মুহূর্তে যে ক্রিকেটারেরা খেলছেন, তাঁদের মধ্যে স্মিথের পিছনে রয়েছেন রুট। তিনি ৩০টি শতরান করেছেন। কেন উইলিয়ামসন এবং বিরাট কোহলির রয়েছে ২৮টি টেস্ট শতরান। ডেভিড ওয়ার্নারের রয়েছে ২৫টি শতরান।
অস্ট্রেলিয়ার ৪১৬ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরু হয় ইংল্যান্ডের বাজ়বল। দ্বিতীয় সেশনে ওভার প্রতি পাঁচ রান করে তুলেছিল ইংল্যান্ড। প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে হেরে যাওয়ার পর অনেকেই ইংল্যান্ডের বাজ়বল পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু ইংল্যান্ড নিজেদের ধরনেই খেলছিল। অস্ট্রেলিয়ার ৪১৬ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৩০ ওভারে ১৪৫ রান তুলে ফেলেছিল ইংল্যান্ড।
প্রথম সেশনে অস্ট্রেলিয়াকে অলআউট করে চার ওভারে ১৩ রান করেছিল ইংল্যান্ড। মধ্যাহ্নভোজের পর ব্যাট করতে নেমে ইংল্যান্ড এক সেশনে ১৩২ রান তুলল। একটি উইকেটও হারিয়েছে তারা। কিন্তু রানের গতি কমেনি। ৪৮ রান করে আউট হন জ্যাক ক্রলি।
চা বিরতির পর আবার ম্যাচে ফেরে অস্ট্রেলিয়া। দ্রুত রান তুলতেই গিয়েই আউট হন জো রুটেরা। ৯৮ রান করে আউট বেন ডাকেট। অলি পোপ করেন ৪২ রান। রুট মাত্র ১০ রানে আউট। তাঁদের হারিয়ে কিছুটা বিপদেই পরে ইংল্যান্ড। সেখান থেকে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন স্টোকস (১৭ রানে অপরাজিত) এবং হ্যারি ব্রুক (৪৫ রানে অপরাজিত)। স্টোকস অনেক বেশি ধীর গতিতে ব্যাট করছেন। ব্রুক যদিও নিজের ছন্দেই রয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার রান টপকাতে তাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকবেন সমর্থকেরা। সেই সঙ্গে জনি বেয়ারস্টো রয়েছেন। তিনি নামলে রানের গতি আরও একটু বাড়তেই পারে।
অ্যাশেজ মানেই অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের ক্রিকেটের বাইরে গিয়েও একটা যুদ্ধ। যা চলে আসছে বহু দিন ধরে। অ্যাশেজ সিরিজ়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক ইতিহাস। যা কিছুটা ব্যাঙ্গাত্মক। খানিকটা শোকেরও। ১৮৮২ সালে ওভালে আয়োজিত টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রথম হেরেছিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ফ্রেড স্পফোর্থের অনবদ্য বোলিংয়ের কাছে হারতে হয়েছিল ইংরেজদের। চতুর্থ ইনিংসে ৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে পারেনি তারা। স্পফোর্থ ৪৪ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন। ০-১ ব্যবধানে সিরিজ় হেরে গিয়েছিল। পরের দিন ইংল্যান্ডের সংবাদ পত্র ‘দ্য স্পোর্টিং টাইমস্’ তাদের প্রতিবেদনে ক্রিকেট দলের তীব্র সমালোচনা করেছিল। লেখা হয়েছিল, ইংরেজ ক্রিকেটকে চিরস্মরণীয় করে রাখল ওভালের ২৯ আগস্ট, ১৮৮২ তারিখটি। গভীর দুঃখের সাথে বন্ধুরা তা মেনে নিয়েছে। ইংরেজ ক্রিকেটকে ভস্মীভূত করা হয়েছে এবং ছাইগুলো অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া হয়েছে। এর পরের বছর সিরিজ় পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় যায় ইংল্যান্ড। সংবাদমাধ্যমের ব্যঙ্গ মনে রেখে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক আইভো ব্লাই বলেছিলেন, তাঁরা অ্যাশেজ পুণরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন।
সে সময় কয়েকজন অস্ট্রেলীয় মহিলা ব্লাইকে আগের সিরিজ়ে পরাজয় নিয়ে পাল্টা ব্যঙ্গ করে ছাই ভর্তি একটি পাত্র দিয়েছিলেন। যাতে ছিল উইকেটের উপরে থাকা বেলের ছাই। তার পর থেকে দু’দেশের টেস্ট সিরিজ় ‘অ্যাশেজ’ বলে পরিচিত হয়। ব্লাই অবশ্য ছাইয়ের সেই আধারটি ব্যক্তিগত উপহার হিসাবে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। বিজয়ী দলকে ট্রফি হিসাবে তা দেওয়া হত না তখন। ব্লাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী লর্ডসে এমসিসি জাদুঘরে সেই পাত্রটি দান করে দিয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy