বেন স্টোকস। —ফাইল চিত্র
বৃষ্টির জেরে অ্যাশেজের চতুর্থ টেস্টে প্রায় দু’দিনের খেলা ভেস্তে গিয়েছে। তার ফলে ভাল জায়গায় থেকেও ড্র-তেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে ইংল্যান্ডকে। অধিনায়ক হিসাবে প্রথম ড্র মেনে নিতে পারছেন না স্টোকস। ম্যাঞ্চেস্টারে যে কারণে ম্যাচের ফলাফল হল না, তা হজম করতে কষ্ট হচ্ছে ইংরেজ অধিনায়কের।
স্টোকস ইংল্যান্ডের টেস্ট দলের অধিনায়ক ও ব্রেন্ডন ম্যাকালাম কোচ হওয়ার পর থেকে বাজ়বল (ইংল্যান্ডের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালামের ডাকনাম বাজ়। তাঁর সময়ে ইংল্যান্ড যে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলছে সেটার এই নাম দেওয়া হয়েছে।) খেলতে শুরু করেছে ইংল্যান্ড। তার পর থেকে গত ১৭টি টেস্টে ফল হয়েছে। ১১টি টেস্ট জিতেছে ইংল্যান্ড। ছ’টি হেরেছে। ম্যাঞ্চেস্টারে ১৮তম ম্যাচ ড্র হয়েছে। কিন্তু তার জন্য দায়ী বৃষ্টি। সেটাই মেনে নিতে পারছেন না স্টোকস।
ম্যাচ শেষে ইংরেজ অধিনায়ক বলেন, ‘‘এটা মেনে নেওয়া কঠিন। প্রথম তিন দিন আমরা যে ক্রিকেট খেলেছি তার পরে শুধুমাত্র বৃষ্টির জন্য জিততে পারলাম না। ফলে সিরিজ় জেতাও হল না। এতে তো আমাদের কোনও দোষ নেই। দলের সবাই নিজেদের সেরাটা দিয়েছিল। তার পরেও ড্র করেই সন্তুষ্ট থাকতে হল।’’
স্টোকস জানতেন, এটি মরণবাঁচন টেস্ট। তাই সে ভাবেই খেলা শুরু করেছিলেন। কিন্তু শেষটা করতে পারলেন না। স্টোকস বলেন, ‘‘আমরা জানতাম সিরিজ়ে টিকে থাকতে হলে এই ম্যাচে জিততেই হবে। তাই প্রথমে বল নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ৩১৭ রানে আউট করেছিলাম। পরে ব্যাট করে ৫৯২ রান করেছিলাম। এর থেকে বেশি আমরা আর কীই বা করতে পারতাম। নিজেদের সেরাটা দিয়েছি। পুরো খেলা হলে হয়তো জিতেই মাঠ ছাড়তাম। দলের সবার উপর আমি গর্বিত।’’
ওভালে পরের টেস্টে জিতলে সিরিজ় ২-২ ড্র হবে। কিন্তু তাতে অ্যাশেজ় জেতা হবে না ইংল্যান্ডের। অস্ট্রেলিয়ার কাছেই ট্রফি থাকবে। তার পরেও শেষ টেস্টে একই রকম লড়াইয়ের মানসিকতা নিয়ে তাঁরা নামবেন বলে জানিয়েছেন স্টোকস। ইংরেজ অধিনায়ক বলেন, ‘‘শেষ টেস্ট আমাদের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জিতে সিরিজ় শেষ করতে চাই। তাই সেই মানসিকতা নিয়েই নামব। আশা করি সেখানেও দর্শকদের সমান সমর্থন আমরা পাব।’’
অ্যাশেজ সিরিজ়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক ইতিহাস। যা কিছুটা ব্যাঙ্গাত্মক। খানিকটা শোকেরও। ১৮৮২ সালে ওভালে আয়োজিত টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রথম হেরেছিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ফ্রেড স্পফোর্থের অনবদ্য বোলিংয়ের কাছে হারতে হয়েছিল ইংরেজদের। চতুর্থ ইনিংসে ৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে পারেনি তারা। স্পফোর্থ ৪৪ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন। ০-১ ব্যবধানে সিরিজ় হেরে গিয়েছিল। পরের দিন ইংল্যান্ডের সংবাদ পত্র ‘দ্য স্পোর্টিং টাইমস্’ তাদের প্রতিবেদনে ক্রিকেট দলের তীব্র সমালোচনা করেছিল। লেখা হয়েছিল, ইংরেজ ক্রিকেটকে চিরস্মরণীয় করে রাখল ওভালের ২৯ আগস্ট, ১৮৮২ তারিখটি। গভীর দুঃখের সাথে বন্ধুরা তা মেনে নিয়েছে। ইংরেজ ক্রিকেটকে ভস্মীভূত করা হয়েছে এবং ছাইগুলো অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া হয়েছে। এর পরের বছর সিরিজ় পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় যায় ইংল্যান্ড। সংবাদমাধ্যমের ব্যঙ্গ মনে রেখে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক আইভো ব্লাই বলেছিলেন, তাঁরা অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন।
সেই সময় কয়েকজন অস্ট্রেলীয় মহিলা ব্লাইকে আগের সিরিজ়ে পরাজয় নিয়ে পাল্টা ব্যঙ্গ করে ছাই ভর্তি একটি পাত্র দিয়েছিলেন। যাতে ছিল উইকেটের উপরে থাকা বেলের ছাই। তার পর থেকে দু’দেশের টেস্ট সিরিজ় ‘অ্যাশেজ’ বলে পরিচিত হয়। ব্লাই অবশ্য ছাইয়ের সেই আধারটি ব্যক্তিগত উপহার হিসাবে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। বিজয়ী দলকে ট্রফি হিসাবে তা দেওয়া হত না তখন। ব্লাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী লর্ডসে এমসিসি জাদুঘরে সেই পাত্রটি দান করে দিয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy