বেন স্টোকস। —ফাইল চিত্র
লক্ষ্য স্পষ্ট ছিল দু’দলের সামনেই। অ্যাশেজের তৃতীয় টেস্ট জিতে সিরিজ়ে টিকে থাকতে হলে ২২৪ রান করতে হত ইংল্যান্ডকে। অন্য দিকে হেডিংলেতে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দু’টেস্ট বাকি থাকতে সিরিজ় জিততে হলে ১০ উইকেট দরকার ছিল অস্ট্রেলিয়ার। চতুর্থ দিনের প্রথম সেশন দেখে মনে হয়েছিল, সহজেই ম্যাচ জিতবে ইংল্যান্ড। কিন্তু মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পরে খেলায় ফিরল অস্ট্রেলিয়া। বেন স্টোকসকে আউট করে বড় ধাক্কা দিলেন মিচেল স্টার্ক। তার পরেও জিততে পারল না অস্ট্রেলিয়া। শেষ পর্যন্ত হেডিংলেতে তিন উইকেটে জিতে সিরিজ়ে ফিরল ইংল্যান্ড। তাঁদের নায়ক হ্যারি ব্রুক। দ্বিতীয় ইনিংসে দুর্দান্ত ব্যাট করলেন তিনি। তাঁকে সঙ্গ দিলেন ক্রিস ওকস। ৭৫ রান করে দলকে জয়ের দোরগোড়ায় তুলে আউট হন ব্রুক। তাতে অবশ্য জিততে সমস্যা হল না ইংল্যান্ডের। ওকসের সঙ্গে মিলে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন মার্ক উড। ওকস ৩২ ও উড ১৬ রান করে অপরাজিত থাকেন।
রান তাড়া করতে নেমে তৃতীয় দিনের শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার জ্যাক ক্রলি ও বেন ডাকেট। কিন্তু চতুর্থ দিনের শুরুতেই ইংল্যান্ডকে ধাক্কা দেন স্টার্ক। ২৩ রানের মাথায় স্টার্কের বলে এলবিডব্লিউ আউট হয়ে ফেরেন ডাকেট। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি তিনি। তিন নম্বরে জো রুটের বদলে নামেন মইন আলি। ইংল্যান্ড চমক দেওয়ার চেষ্টা করলেও তা কাজে আসেনি। মাত্র পাঁচ রান করে স্টার্কের বলেই বোল্ড হন মইন। অস্ট্রেলিয়ার পেসারের ভিতরের দিকে ঢুকে আসা বল বুঝতে না পেরে বোল্ড হন মইন।
দুই উইকেট পড়ার পরে ক্রলির সঙ্গে জুটি বাঁধেন রুট। ভাল খেলছিলেন দুই ব্যাটার। দ্রুত রান আসছিল। বিশেষ করে ক্রলিকে বেশ আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছিল। মিচেল মার্শকে এক ওভারে পর পর দু’বলে দু’টি চার মারেন ক্রলি। তৃতীয় বলটি অফস্টাম্পের খানিকটা বাইরে রাখেন মার্শ। সেই বলে মারতে গিয়ে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ক্রলি। ৪৪ রান করেন তিনি। ২১ রান করে মধ্যাহ্নভোজের বিরতির ঠিক আগে কামিন্সের বলে আউট হন রুট।
বিরতির পরে ইংল্যান্ডকে ধাক্কা দেন স্টার্ক। প্রথমে ১৩ রানের মাথায় অধিনায়ক স্টোকসকে আউট করেন তিনি। স্টার্কের লেগস্টাম্পের বাইরে যাওয়া বলে মারতে গিয়ে আউট হন স্টোকস। বল তাঁর ব্যাটে লেগে উইকেটরক্ষকের কাছে যায়। চার বছর আগে হেডিংলেতে একা হাতে ইংল্যান্ডকে জিতিয়েছিলেন স্টোকস। কিন্তু এই ম্যাচে শেষ পর্যন্ত থাকতে পারেননি তিনি। ঘরের মাঠে রান পাননি জনি বেয়ারস্টোও। স্টার্কের বলে পাঁচ রানের মাথায় বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি।
ইংল্যান্ডের ইনিংসকে টানার দায়িত্ব গিয়ে পড়ে হ্যারি ব্রুকের কাঁধে। ভাল খেলছিলেন তিনি। ইনিংসের শুরু থেকে অফস্টাম্পের বাইরের বলে বেশ কয়েকটি দর্শনীয় কভার ড্রাইভ মারেন তিনি। ধীরে ধীরে নিজের অর্ধশতরানের দিকে এগোচ্ছিলেন ব্রুক। তাঁকে সঙ্গ দেন ক্রিস ওকস। ব্যাট করতে নেমেই তিনটি চার মেরে দলের রানকে খানিকটা এগিয়ে নিয়ে যান তিনি। ৬৭ বলে নিজের অর্ধশতরান পূরণ করেন ব্রুক। তাঁর ব্যাটে ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন দেখছিলেন ইংরেজ সমর্থকেরা।
ধীরে ধীরে লক্ষ্যের দিকে এগোচ্ছিল ইংল্যান্ড। কোনও তাড়াহুড়ো করছিলেন না দুই ব্যাটার। ইংল্যান্ডের প্রতিটি রানের পরেই চিৎকার করছিলেন ইংরেজ সমর্থকেরা। এই টেস্টে তাঁকে দলে নিয়ে স্টোকসেরা কতটা ভাল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা আরও এক বার বোঝালেন ওকস। প্রথমে বল ও তার পর ব্যাট হাতে গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেললেন তিনি। কারণ, সেই সময় আর একটি উইকেট পড়ে গেলেই খেলা প্রায় ইংল্যান্ডের হাতের বাইরে বেরিয়ে যেত। সেটা হতে দিলেন না দুই ব্যাটার।
ব্রুকের কাছে সুযোগ ছিল চার বছর আগের স্টোকস হয়ে ওঠার। দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়ার। কিন্তু ৭৫ রানের মাথায় বড় শট মারতে গিয়ে আউট হয়ে যান তিনি। শেষ দিকে আবার কিছুটা চাপে পড়ে যায় ইংল্যান্ড। সেই সময় পরিস্থিতি সামলালেন মার্ক উড। প্রথম ইনিংসে যে রকম ঝোড়ো ইনিংস খেলেছিলেন তেমনটাই করলেন তিনি। কামিন্সকে ছক্কা মারলেন। অন্য দিকে নিজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে টিকে থাকলেন ওকস। দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন তাঁরা।
অ্যাশেজ়ে ২-১ এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু কেন এই সিরিজ়কে অ্যাশেজ বলা হয়? অ্যাশেজ সিরিজ়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক ইতিহাস। যা কিছুটা ব্যাঙ্গাত্মক। খানিকটা শোকেরও। ১৮৮২ সালে ওভালে আয়োজিত টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রথম হেরেছিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ফ্রেড স্পফোর্থের অনবদ্য বোলিংয়ের কাছে হারতে হয়েছিল ইংরেজদের। চতুর্থ ইনিংসে ৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে পারেনি তারা। স্পফোর্থ ৪৪ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন। ০-১ ব্যবধানে সিরিজ় হেরে গিয়েছিল। পরের দিন ইংল্যান্ডের সংবাদ পত্র ‘দ্য স্পোর্টিং টাইমস্’ তাদের প্রতিবেদনে ক্রিকেট দলের তীব্র সমালোচনা করেছিল। লেখা হয়েছিল, ইংরেজ ক্রিকেটকে চিরস্মরণীয় করে রাখল ওভালের ২৯ আগস্ট, ১৮৮২ তারিখটি। গভীর দুঃখের সাথে বন্ধুরা তা মেনে নিয়েছে। ইংরেজ ক্রিকেটকে ভস্মীভূত করা হয়েছে এবং ছাইগুলো অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া হয়েছে। এর পরের বছর সিরিজ় পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় যায় ইংল্যান্ড। সংবাদমাধ্যমের ব্যঙ্গ মনে রেখে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক আইভো ব্লাই বলেছিলেন, তাঁরা অ্যাশেজ পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন।
সেই সময় কয়েকজন অস্ট্রেলীয় মহিলা ব্লাইকে আগের সিরিজ়ে পরাজয় নিয়ে পাল্টা ব্যঙ্গ করে ছাই ভর্তি একটি পাত্র দিয়েছিলেন। যাতে ছিল উইকেটের উপরে থাকা বেলের ছাই। তার পর থেকে দু’দেশের টেস্ট সিরিজ় ‘অ্যাশেজ’ বলে পরিচিত হয়। ব্লাই অবশ্য ছাইয়ের সেই আধারটি ব্যক্তিগত উপহার হিসাবে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। বিজয়ী দলকে ট্রফি হিসাবে তা দেওয়া হত না তখন। ব্লাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী লর্ডসে এমসিসি জাদুঘরে সেই পাত্রটি দান করে দিয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy